রোজ মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, রাত ৮:০৮


					
				
চাপ ও চমকের বাজেট ঘোষণা আজ

চাপ ও চমকের বাজেট ঘোষণা আজ

অনলাইন ডেস্কঃ

>> বাজেটের আকার ৫২৩১৯০ কোটি টাকা
>> নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা
>> নিত্যপণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে
>> জটিল রোগের ওষুধ, যাত্রী ও খাদ্যশস্য পরিবহন সেবা ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে
>> এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ থাকছে ১১৫০ কোটি টাকা
>> প্রথমবারের মতো থাকছে কিছু জন্যকল্যাণমুখী উদ্যোগ

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট। ‘‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’’ শিরোনামে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্তও করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই আগামী বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবাকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাত বছর আগে পাস করা আলোচিত আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই। তবে আগামী বাজেটে থাকছে প্রথমবারের মতো কিছু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ।
ভ্যাট আইনের চাপ থেকে সাধারণ ভোক্তাদের কিছুটা রেহাই দিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য, সব ধরনের কৃষিপণ্য কেনা-বেচা এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। তবে জটিল ও কঠিন রোগের কিছু ওষুধ ছাড়া সব ধরনের ওষুধের ব্যবসায় ২ শতাংশের বেশি হারে ভ্যাট আরোপ হতে যাচ্ছে। এতে সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ কিনতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার আগের চেয়ে খরচ বাড়তে পারে।
বাজেটে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে মূল অস্ত্র হিসেবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ভ্যাট খাত থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বেশি আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
চলতি অর্থবছর এ খাতে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে গত ৯ মাসে আয় হয়েছে ৬০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম ভ্যাট আরোপ (এভিটি) করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। সহজে ভ্যাট আদায়ের কৌশল হিসেবে এ উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি। মাসিক ভ্যাট পরিশোধের পর অগ্রিম দেয়া ভ্যাট ফেরত দেবে এনবিআর। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রয়েছে। এর বদলে অগ্রিম ভ্যাট আরোপ হবে, তবে এক্ষেত্রে হার কিছুটা কমতে পারে।
২০১৭ সালে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের উদ্যোগ নেয়ার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। তখন ভ্যাটের একক হার হিসেবে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা ছিল। তবে নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিলের ওপর এখনকার মতো ৫ শতাংশ ভ্যাটই বহাল রাখা হচ্ছে বলে রাজস্ব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে ভ্যাট আরোপের সুযোগ নেই। সব ধরনের কৃষিপণ্য ভ্যাট থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ভোজ্যতেল, চিনি, গুড় ও লবণের ওপর কোনো ভ্যাট বসছে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রাংশ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। সব ধরনের মাংস, কাঁটা ছাড়ানো মাছ বাদে সব ধরনের মাছ, পোল্ট্রি ফিড ও গবাদিপশুর ভ্যাকসিন ভ্যাট অব্যাহতি পেতে পারে। হস্তচালিত লন্ড্রি বা কাপড় ধোয়ার দোকানসহ আবাসিক হোটেলের লন্ড্রি ও ছোটখাটো ব্যবসার জন্য দেড়শ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত সব ধরনের স্থাপনার ভাড়া ভ্যাটমুক্ত থাকছে। পর্যটন স্থাপনার টিকিট মূল্য ও জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে না।
বড় আকারের বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায়ের ওপর জোর দেয়ার কথা বরাবরই বলে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। ১০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিয়ে ছয় মাসে নতুন ৮৫ লাখ করদাতা খুঁজে বের করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। এতে করের চাপ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া আলোচিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই। তাতে নতুন করে বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ককর আদায়ের আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও এই ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে পণ্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে দেশের সব বন্দরে স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। ফলে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বাড়ার পাশাপাশি আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থপাচার রোধ হবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই নতুন অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ করার কথা আগেই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থাৎ বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা করেন এমন ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। ফলে শহরের অলিগলির দোকানসহ গ্রামগঞ্জের ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের আয়ে নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব পড়বে না।
এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রী ও খাদ্য পরিবহনকারী যানবাহন, চিকিৎসাসেবা, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া অন্যসব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং শিশু পালন, বয়স্ক লোকদের সেবাও ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে। অস্থায়ী হোটেল ও রেস্তোরাঁ- যাদের বৈদ্যুতিক ফ্যান নেই এবং সর্বোচ্চ দুটি বাল্ব ব্যবহার করছে- এ ধরনের হোটেলগুলোও ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকবে। অন্য হোটেলগুলোতে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হতে পারে।
ওষুধের মধ্যে সব ধরনের জন্মনিরোধক, হিউম্যান মেডিসিনের ভ্যাকসিন, লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিস সি নিরাময়কারী হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও ভেষজ ওষুধ, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, ক্যান্সার নিরোধক ওষুধ, ম্যালেরিয়া ও কুষ্ঠরোগ নিরোধক ওষুধ, টক্সিন ও কার্ডিওভাসকুলার ওষুধ, অ্যান্টি-হ্যাপাটিক ও অ্যান্টি-হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথিক, বায়োকেমিক ও সাইকোট্রপিকের ওষুধ, সাধারণ ও লোকাল এনাসথেটিক, ইথার এনাসথেটিক বিপি/ইউএসবি, ইথাইল ক্লোরাইড বিপি, কিডনি রোগের ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ও কিডনি সংযোজনের জন্য সাইক্লোসপরিন ওষুধ, ইনসুলিন ও থ্যালাসেমিয়া রোগের ওষুধ, হেয়ারিং এইডস, পেসমেকার, ইনসুলিন পেন বা কার্টিস ও ক্যানলা আমদানি এবং সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে।
গত ৩১ মার্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন আইনে ভ্যাটের হার হবে চারটি- ১৫, ১০, ৭.৫ ও ৫ শতাংশ। পরে তিনি আরও জানান যে, যেসব পণ্যে ২ শতাংশ ভ্যাট আছে, সেসবের ভ্যাট বাড়বে না। অর্থাৎ, ভ্যাটের হার হচ্ছে পাঁচটি। বর্তমানে শুধু পেট্রোলিয়াম পণ্যে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। নতুন বছরে স্টিল ও রি-রোলিং মিলসহ বিভিন্নখাতের ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তাদের কথায়, নতুন আইনে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা উঠে যাবে, ফলে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হলেও বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও বাজারমূল্য বাড়তে পারে। কারণ, যেসব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশের কম ভ্যাট আরোপ হবে, তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী রেয়াত বা ক্রেডিট পাবে না। এ কারণে ভ্যাটের হার কমলেও অনেক পণ্যে ব্যবসায়ীদের আগের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হবে।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮

Md Saiful Islam