রোজ শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, দুপুর ১:২০


					
				
রিজিক নিয়ে বৃথা টেনশন করে লাভ নেই!

রিজিক নিয়ে বৃথা টেনশন করে লাভ নেই!

সোহেল আহমেদঃ মানুষ যখন অভাব অনটনে থাকে কিংবা একটি স্বচ্ছল পরিবারে আচমকা যখন অর্থের টানাপোড়েন শুরু হয়, ঠিক তখনই ভাই বন্ধু স্বজনদের একটাই শান্তনার বানী রিজিক নিয়ে চিন্তা করিও না, এর ব্যবস্থা সৃস্টিকর্তা নিজে করে রেখেছেন। কঠিন হতাশাগ্রস্থ মানুষটিও তখন সৃষ্টিকর্তার উপর তাকিয়ে থাকে।


এবার আসি প্রাসঙ্গিক আলোচনায়। ২০১৯ সালের নভেম্বররে দিকের ঘটনা। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল পরিচালনার জন্য দায়িত্ব পেলাম। পদ পদবী নিয়ে খুশি অখুশির ব্যাপারে কখনোই ইন্টারেস্টেড ছিলাম না কেননা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পদের মুল্যায়ন সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম। চিন্তা করলাম যাক বেকার না থাকার চেয়ে কাজে সময় ব্যয় করি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আমার সম্মানি ধরা হলো মাত্র ৩ হাজার ৩ শত টাকা। আমার সহকারী শিক্ষকের সম্মানি আমার থেকে ১০০ টাকা কমিয়ে ৩ হাজার দুই শত টাকা ধরলেন স্কুলটির পরিচালক।

একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে চাকরি করে এতো কম সম্মানী? সব কিছু ছাপিয়ে মাথার ভেতর শুধু এই প্রশ্ন তাড়া করছে। কি করি, কি করবো ভেবে পাই না। কারো কাছে প্রকাশ না করলেও আমার চেহারা দেখে আমার সহকারী শিক্ষক বুঝতে পারলেন এবং আমাকে মেনে নিতে পরামর্শ দিলেন। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বলে এটাই এখানের সবচেয়ে কম বেতনের পদ! যা হোক সাংসারিক খরচের কথা চিন্তা করে এটা নিয়ে বেশিদুর আগালাম না। কেননা টিউশুনি করে ১০-১৫ হাজারের একটা এমাউন্ট যোগাড় করতে পারবো বলে বিশ্বাস। কর্মে মনোযোগী হলাম।

আমার যোগ্যতার প্রমান দিতে গিয়ে দিন রাত আঠার মতো লেগে থাকলাম প্রতিষ্ঠানের সাথে। সহকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানে সম্মানজনক শিক্ষার্থীর ভর্তির রেকর্ড। ধুমধাম করে ২০২০ সালের পাঠ কার্যক্রম চলছিলো।


১ লা জানুয়ারী বই উৎসব, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন সম্পন্ন করে মার্চ মাসের ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।


হঠাৎ খবর এলো দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ধরা পরেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করেছে!
১৩ মার্চ কোনো ভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের মতো আমাদের স্কুলটিও বন্ধ ঘোষণা করেছে কতৃপক্ষ।


স্কুল পরিচালকের বহু টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এমন ঘোষণায় দুই এক মাসের বেতন পেয়েছিলাম বটে।
করোনায় সরকারি নির্দেশনা মেনে আমি তো ঘরেই ছিলাম। প্রাইভেট, টিউশুনি, চাকরি সবইতো বন্ধ। বে হিসেবে জীবন পরিচালিত হওয়া আমার তো অপরের মতো কোথাও সঞ্চিত জমা টাকাও নেই। তাহলে কি খাবো, কি করবো, শহরের বাড়িতে বাসা ভাড়াই বা দেবো কি কিভাবে? কদিন আগেও যে অসহায় বৃদ্ধ মহিলাকে ৫ শত টাকার জিনিস পত্র কিনে দিয়ে নিজে সমাজসেবক সাজতে চেয়েছিলাম কয়েক দিনের ব্যবধানে আজ আমি অদৃশ্য ভিক্ষুক!

কি করার, এবার যে দিন যা জোটে তাই খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। রিজিক নিয়ে মাথায় আসলেই টেনশন এসে যায়। বউ বাচ্চা ওদের কথা মনে হলে স্থির থাকাটা সত্যি কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
লুঙ্গি আর ছেড়া পাঞ্জাবি বলে দেয় অভাব অনটন কল্পনার থেকেও কতো কাছে চলে এসেছে। আমার এক অন্ধভক্ত অভিভাবক প্রয়াত আনিস ভাই একদিন দেখলেন আমি এক কেজি চাল, এক পোয়া ডাল নিয়ে মাথা নিচু করে অনেকটা লুকিয়ে বাসায় আসতেছিলাম। আনিস ভাই, দুর থেকে এসেই আমার হাতের ব্যাগটা নিজে নিয়ে নিলেন, বললেন আমার ছেলেটাকে বলতেন ও নিয়ে যেতো আপনার হাতে এগুলো মানায়? প্রশ্ন রাখলেন আনিস ভাই। আনিস ভাই জানতেন, আমার বাজার করার ধরন, অভাব কতো কাছে এসে গেলো তা আস্তে আস্তে অনেকেই জেনে গেলো। এর মধ্যে সাত আট মাসের ঘরভাড়া বকেয়া হয়ে গেছে। জমিদার এসে সম্মানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলছেন না। কিন্তু আমার তো কোনো উপায় নেই।
মাসের পর মাস করোনায় ঘরে বসে আছি।


একদিন ফেসবুক লাইভে এসে কতক্ষণ নিজের দুঃখ প্রকাশ করলাম।


দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লেখা লেখির সুবাদে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী Iqbal Hossain Taposh মহোদয়, চট্টগ্রামের মানবিক ভাই md Rashed uddin, Shakhawat Hossain Nishan, বন্ধু Miraz Hossain, পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধু মেহেদী মেহেবুব, বন্ধু মেহেদী হাসান টিটু, ব্যাংকার বন্ধু মেহেদী হাসান সজীব, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.আবদুল্লাহ শুভ, সমাজ সেবক গোপাল চন্দ্র শীল, বন্ধু Mohammad Mohim Hasan, আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন অধ্যক্ষ Tahmima Akter আপা, প্রিয় Zihad Rana sir, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট মোজাম্মেল হক অপু মহোদয়, বাউল শিল্পী ফজলুল হক সরকার সহ অসংখ্য গুনীজনরা আমাকে খোঁজ করে আর্থিক সহযোগিতা করতে থাকলেন।


বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে, মোবাইলে কেউ একজন কল দিলেই মনে হতো একদিন এর বাজারের টাকা চলে এসেছে। এভাবে মানবিক মানুষের মানবিক সহযোগিতা পেয়ে ভিষণ উপকৃত আমি এবং আমার পরিবার।


আমার দুঃসময়ে মানুষের এমন সহযোগিতা দেখে আমার প্রিয় মা নামাজের পাটিতে বসে দোয়া করছেন সহযোগিতা করা মানুষদের জন্য, আর আমার বিরাজমান অভাব অনটন ঘোঁচানোর জন্য। বিপদের সময় এমন মানবিক বন্ধুদের জন্য সারাজীবন মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি কৃতজ্ঞ। আর রিজিক নিয়ে নিয়ে আমার অহেতুক চিন্তার কবর রচনা করে ওই সৃষ্টি কর্তার উপরে বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে। সেই স্বজনদের শ্বান্তনার বানী বলতে হয় ” আল্লাহ তাআলা কাউকে অনাহারে রাখেন না, প্রত্যেক মানুষের রিজিক এর ব্যবস্থা আল্লাহ নিজেই করে রেখেছেন। সুতরাং রিজিক নিয়ে আমাদের কারোই বৃথা টেনশন করার উচিত নয়।

লেখকঃ সোহেল আহমেদ, সাংবাদিক, দৈনিক বরিশাল২৪.কম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮

Md Saiful Islam