বিভীষিকাময় জীবনের সাক্ষী হয়ে থাকতে কারোই ভালো লাগে না। তবুও জীবন চলছে, চালিয়ে নিতে হয় ক্ষাণিকটা। বলছিলাম অদ্ভুদ এক ফেরিওয়ালার গল্প। যে ফেরিওয়ালার কষ্ট কেউ কখনো বোঝেনা।
তাহাদের প্রাত্যহিক জীবন শুরু হয় সকাল ৮ টায় শেষ হয় রাত ১১ টা ১২ টায়। মাঝে কোন বিশ্রাম নেই। কারন তাদের মাথায় রয়েছে রাজ্যের দুঃচিন্তা। বিশ্রাম নিলে তো তার চলবে চলে না।
সকালে রিপোর্টিং থেকে শুরু করে চলে প্যারা আর পিরা। রিপোর্টিং এ পড়াশুনা করা বাধ্যতামূলক। বিভিন্ন প্রডাক্টস এর উপর পড়াশুনা করতে হয়। তারপরে মিলিয়ে দিতে হয় আগের দিনের সকল কর্মকান্ডের হিসেব। কয়জন ডাক্তার ভিজিট হলো, কয়টা আরএক্স পাওয়া গেল, কত টাকার অর্ডার কনফার্ম হলো, বাজেট কত% হলো আর বাকিই বা রইলো কত% ? কিভাবে তা পূরণ করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ।
রিপোর্টিং শেষে কেমিস্টদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে আউটডোরের ডাক্তারের সাথে দেখা করে দুপুরে ভিজিটের প্রস্তুতি নিতে নিতে দুপুর ২ টা বাজে। ভিজিট শেষে আবার বিকালের চেম্বার ডাক্তার ভিজিটের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। দ্রুত ভিজিট শেষ করে আবার অর্ডার নিশ্চিত করতে করতে রাত ১২ টা।
এই কর্মকান্ডের মাঝেই অনেকের মাঝে জন্ম নেয় হাজারো প্রশ্ন।
√কেউ বলে দালাল, কেউ বলে রোগী বিরক্তিকারী, কেউ কেউ বলে এদের যন্ত্রনায় ডাক্তার দেখানো দায়।
কিছু কিছু রোগী রোগীর স্বজনরা হন যার পর নাই বিরক্ত।
⏯️এই ফেরিওয়ালাদের বাহ্যিক কর্মকান্ড দেখে এদের মূল্যায়ন করা যাবেনা। চোখের সব দেখায় বোঝারমত সকল উপাদান থাকে না। বুঝতে হলে মন থেকে অনুভব করতে হবে।
⏭️তারা যখন ডাক্তার ভিজিট করে, বাহির থেকে দেখে মনে হবে; এদের অত্যাচারে ডাক্তার, রোগী অতিষ্ঠ। এরা বিরক্তিকর এদের জন্য ডাক্তারগন বেশী ঔষধ লিখে থাকে।
√ কিন্তু না আপনার ধারনা ভূল, এরা যদি নিয়মিত ডাক্তার ভিজিট না করত তাহলে প্রতি নিয়ত বহিঃবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আসা নতুন নতুন জেনেরিকের সাথে পরিচিত হতে ডাক্তারদের অনেক সময় লাগত। প্রত্যেকটি কোম্পানির রয়েছে মেডিকেল সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জেনেরিকের সকল তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা অতি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিটাচারের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত রুপে প্রকাশ করে। যাহা এই ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে শেয়ার করেন ভিজিটের মাধ্যমে। প্রতিটি লিটারেচারে প্রতিটি তথ্যের রেফারেন্স সহ দেয়া থাকে। কোন বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে ঔ রেফারেন্স ধরে গুগলে সার্চ করে অথবা ডেবিডসনসহ যে রেফারেন্স দেয়া থাকে তা ঘেঁটে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়। আর না হয় তাকে মেডিকেল সাইন্সের বড় বড় বই ঘেঁটে ঘেঁটে বের করতে হতো যা সময় সাপেক্ষ্য । তবে এখনো কোন কোন ডাক্তার সেটা করেন ।
√এই ফেরিওয়ালাদের ভিজিটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কোম্পানির গুনগত মান সহ অন্যান্য কোম্পানির গুনগত মানের তুলনামূলক আলোচনা করে ডাক্তার সাহেবকে সচেতন করে থাকেন। এতে ডাক্তার সাহেব তার নিজস্ব মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে তার রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধটি লিখে থাকেন। এতে করে রোগীর বিরম্বনা অনেক কমে যায়। তারা সঠিক ঔষধটি সঠিকভাবে নিতে পারেন কম ঘোরাঘুরি করে সহজেই।
√এই ফেরিওয়ালাদের ভিজিটের মাধ্যমে ডাক্তারগন খুব সহজে আনকমন বা ফার্ষ্টটাইম ইন বাংলাদেশ প্রডাক্টসগুলো সমন্ধে জানতে পারে এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিকল্প খুঁজে পায়। রোগীরা বিদেশি চিকিৎসা সেবা পান নিজ শহরে বসেই।
√ এই ফেরিওয়ালাগুলো আবার সঠিক সময়ে ঔষধের দোকান গুলোতেও তাদের ঔষধ গুলো নিশ্চিত করে দেয়। যাতে করে রোগীদের বেশী ভোগান্তিতে পড়তে না হয় । অথচ সবচেয়ে বেশি অসম্মানটা করে এই রোগী এবং তার স্বজনেরাই।
√ একজন ফেরিওয়ালাকে মিনিমাম গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হয়। তারপরে ১ মাস বা ২ মাসের ট্রেনিং শেষ করে তবে এই প্রোফেশনে প্রবেশ করতে হয়। অথচ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোক যেভাবে আচরণ করে তাতে মনে হয় এরা কোন অবৈধ পেশার সাথে জড়িত।
মার্কেট যাতে মনোপলি হয়ে না যায় সে জন্য এই ফেরিওয়ালাদের ভূমিকা অনুস্বীকার্য। একটু মন থেকে অনুভব করেন তাহলে বুঝতে পারবেন।কোন প্রডাক্টসের সাপ্লাই যদি শর্ট হয় তাহলে মার্কেটে কি প্রভাব পড়ে ? ক্যান্সার সহ মরণব্যাধী সকল রোগের ঔষধ যদি এই ফেরিওয়ালারা সময় মত না পৌঁছায় তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে?
মাঝে মাঝে শোনা যায়; এই দালালদের কোন কাজকর্ম নেই শুধু শুধু রোগীদের বিরক্ত করে। আর প্রিসক্রিপশন ধরে ধরে পার্সোনাল বিষয় গুলো পাবলিক করে।
একটু চিন্তা করে দেখুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনার প্রিসক্রিপশন যদি সার্ভে করতে না দেয়া হয় তাহলে কোম্পানিগুলো কিভাবে তাদের প্রডাক্টস গুলো সম্প্রসারণ করবে? নতুন নতুন জেনেরিক এনে তো মেয়াদ উত্তীর্ণ করে কোটি কোটি টাকা জলে ফেলে দিবে না! আপনি কি দিবেন ?
কিছু কিছু মূর্খ লোকের পাশাপাশি বড়বড় মাপের শিক্ষিত লোকের মুখেও এদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে শুনি। যাহা আদৌ কাম্য নয়।
এই প্রফোশনে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকের এক বিশাল অংশ। এদের মানবিক কাজের মূল্যায়ণ না করে বিপরীতে এদের বিরুদ্ধে কথা বলে এই প্রফেশন এবং এই প্রফেশনের মেরিট নষ্ট করে দিয়ে আপনারা নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারার কাজটি করছেন না তো ?
সম্পাদনায় : মোঃ সাইফুল ইসলাম