ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯
  • ২১৪ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে দেশীয় কাটা ও লম্বা বন্দুক, দা, কুড়াল, ছুরি, খুন্তি, শাবল, নিড়ানি, লোহার রড উল্লেখযোগ্য। গতকাল সোমবার রোহিঙ্গা শিবিরে সরবরাহকালে নিড়ানির মতো দেখতে দুই হাজার ৬০০ পিস লোহার ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গত দুই বছরে কয়েক লাখ দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলো এখন স্থানীয় জনজীবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। আর এসব দিয়েই রোহিঙ্গা শিবিরে খুনাখুনি হচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে কুতুপালং শিবিরে এক রোহিঙ্গার ছুরিকাঘাতে রহিমুল্লাহ (২১) নামের আরেক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘটিত ৪৩টি হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। গত শনিবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার জাদিমুড়া পাহাড়ের পাদদেশে অভিযান চালাতে গিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এলোপাতারি গুলির শিকার হয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পরিবারগুলোকে এনজিওগুলোর দেওয়া দা, কুড়াল, ছুরি, খুন্তি, শাবল, নিড়ানি, লোহার রডই এখন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে এ রকম পণ্য সবচেয়ে বেশি সরবরাহ দিয়ে আসছে ‘মুক্তি’ নামের স্থানীয় একটি এনজিও। এনজিওটির দুই কর্মকর্তা ভারত ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। তাঁরা কক্সবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। গতকালও মুক্তি এনজিও রোহিঙ্গা শিবিরে কৃষিকাজে ব্যবহারের কথা বলে নিড়ানি সরবরাহ করছিল। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোটবাজার স্টেশনের একটি কামারের দোকানে এসব তৈরি করা হয়।
স্থানীয় একজন ব্যক্তি কামারের দোকানে বানানো এসব লোহার সামগ্রী ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্টের ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে পড়ে। গতকাল কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ভাইরাল হওয়া এমন ছবি দেখার পর উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এসব অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশনা দেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, মুক্তি নামের এনজিওটি নিড়ানির মতো দেখতে পাঁচ হাজার অস্ত্র শিবিরে সরবরাহ করার জন্য কয়েকটি কামারের দোকানে বানানোর অর্ডার দিয়েছে। একটি দোকান থেকেই দুই হাজার ৬০০টি উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো টেকনাফের লেদা শিবিরে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কর্মকারের দোকানটির মালিক অধীর কর্মকার জানিয়েছেন, মুক্তি নামের এনজিওর পক্ষে স্থানীয় ভালুকিয়া পালং গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সেগুলো বানানোর অর্ডার দিয়েছিলেন।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজার এলাকার তপন কর্মকার ও বাবুল কর্মকার জানান, প্রতি মাসেই তাঁরা তাঁদের দোকান থেকে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য হাজার হাজার পিস পণ্য সরবরাহ করছেন। তপন কর্মকার এ বিষয়ে বলেন, তিনি একাই এ পর্যন্ত এক লাখ পিস দা, অর্ধলাখের বেশি খুন্তি ও সাত হাজার কুড়াল সরবরাহ করেছেন। সবগুলোই এনজিও মুক্তির অর্ডার ছিল।
বাবুল কর্মকার বলেছেন, তিনি গত কদিনে ২০ হাজার খুন্তি, ১০ হাজার কুড়াল ও ১০ হাজার দা সরবরাহ করেছেন। বাবুল কর্মকার আরো বলেন, একটি দা কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর পরও এ রকম ঘন ঘন দা সরবরাহের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। এ ছাড়া টেকনাফ উখিয়ায় কুড়াল দিয়ে কাটার জন্য এখন কোনো গাছগাছালি নেই। রোহিঙ্গারা এখন রান্নাবান্নায় গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে থাকে। এর পরও রোহিঙ্গাদের কুড়াল সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে রহস্যজনকভাবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের এনজিওসংশ্লিষ্ট কাজ তদারকিতে নিয়োজিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেছেন, তিনি এ বিষয়গুলো তদন্তের আওতায় এনেছেন।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে দেশীয় কাটা ও লম্বা বন্দুক, দা, কুড়াল, ছুরি, খুন্তি, শাবল, নিড়ানি, লোহার রড উল্লেখযোগ্য। গতকাল সোমবার রোহিঙ্গা শিবিরে সরবরাহকালে নিড়ানির মতো দেখতে দুই হাজার ৬০০ পিস লোহার ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গত দুই বছরে কয়েক লাখ দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলো এখন স্থানীয় জনজীবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। আর এসব দিয়েই রোহিঙ্গা শিবিরে খুনাখুনি হচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে কুতুপালং শিবিরে এক রোহিঙ্গার ছুরিকাঘাতে রহিমুল্লাহ (২১) নামের আরেক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সংঘটিত ৪৩টি হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। গত শনিবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার জাদিমুড়া পাহাড়ের পাদদেশে অভিযান চালাতে গিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের এলোপাতারি গুলির শিকার হয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পরিবারগুলোকে এনজিওগুলোর দেওয়া দা, কুড়াল, ছুরি, খুন্তি, শাবল, নিড়ানি, লোহার রডই এখন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে এ রকম পণ্য সবচেয়ে বেশি সরবরাহ দিয়ে আসছে ‘মুক্তি’ নামের স্থানীয় একটি এনজিও। এনজিওটির দুই কর্মকর্তা ভারত ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। তাঁরা কক্সবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। গতকালও মুক্তি এনজিও রোহিঙ্গা শিবিরে কৃষিকাজে ব্যবহারের কথা বলে নিড়ানি সরবরাহ করছিল। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোটবাজার স্টেশনের একটি কামারের দোকানে এসব তৈরি করা হয়।
স্থানীয় একজন ব্যক্তি কামারের দোকানে বানানো এসব লোহার সামগ্রী ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্টের ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে পড়ে। গতকাল কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ভাইরাল হওয়া এমন ছবি দেখার পর উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) এসব অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশনা দেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, মুক্তি নামের এনজিওটি নিড়ানির মতো দেখতে পাঁচ হাজার অস্ত্র শিবিরে সরবরাহ করার জন্য কয়েকটি কামারের দোকানে বানানোর অর্ডার দিয়েছে। একটি দোকান থেকেই দুই হাজার ৬০০টি উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো টেকনাফের লেদা শিবিরে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কর্মকারের দোকানটির মালিক অধীর কর্মকার জানিয়েছেন, মুক্তি নামের এনজিওর পক্ষে স্থানীয় ভালুকিয়া পালং গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সেগুলো বানানোর অর্ডার দিয়েছিলেন।
কক্সবাজার শহরের বড় বাজার এলাকার তপন কর্মকার ও বাবুল কর্মকার জানান, প্রতি মাসেই তাঁরা তাঁদের দোকান থেকে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য হাজার হাজার পিস পণ্য সরবরাহ করছেন। তপন কর্মকার এ বিষয়ে বলেন, তিনি একাই এ পর্যন্ত এক লাখ পিস দা, অর্ধলাখের বেশি খুন্তি ও সাত হাজার কুড়াল সরবরাহ করেছেন। সবগুলোই এনজিও মুক্তির অর্ডার ছিল।
বাবুল কর্মকার বলেছেন, তিনি গত কদিনে ২০ হাজার খুন্তি, ১০ হাজার কুড়াল ও ১০ হাজার দা সরবরাহ করেছেন। বাবুল কর্মকার আরো বলেন, একটি দা কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর পরও এ রকম ঘন ঘন দা সরবরাহের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। এ ছাড়া টেকনাফ উখিয়ায় কুড়াল দিয়ে কাটার জন্য এখন কোনো গাছগাছালি নেই। রোহিঙ্গারা এখন রান্নাবান্নায় গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে থাকে। এর পরও রোহিঙ্গাদের কুড়াল সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে রহস্যজনকভাবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের এনজিওসংশ্লিষ্ট কাজ তদারকিতে নিয়োজিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেছেন, তিনি এ বিষয়গুলো তদন্তের আওতায় এনেছেন।