“দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি পদ্ম পাতার পরে
একটি শিশির বিন্দু”
দেশপ্রেমের হৃদয় স্পর্শী কবিতা, যা পাঠ না করলে এর মর্ম উপলব্ধি করা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না।
দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে সৃষ্ট গ্রুপ “ছবির মধ্য থেকে বরিশালকে ঘুরে দেখা” একটি ফেসবুক গ্রুপ, যার মধ্য দিয়ে এক নিমিষেই বরিশালের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের অনেক কিছুর ছবি দেখা সম্ভব। এই গ্রুপটি বিভিন্ন ছুটির দিনে বা অবসরে বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে বরিশালের বিভিন্ন ঐতিহাসিক সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো ভ্রমন করে। পাশাপাশি স্থানগুলো গ্রুপের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় “ছবির মধ্য দিয়ে বরিশালকে ঘুরে দেখা” ফেসবুক গ্রুপের আয়োজনে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলার শাপলার বিল দর্শনের উদ্দেশ্যে একটি ইভেন্ট পরিচালনা করা হয় ১০ সেপ্টেম্বর। ইভেন্টে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪৫ জন সৌন্দর্য্য পিপাষু পর্যটক অংশ গ্রহণ করেন।
ইভেন্টের মাধ্যমে শাপলার বিলের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য আসতে পেরে সকলে খুব আন্দিত এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত। এই বিশাল এলাকা জুড়ে ফুটন্ত লাল শাপলার বিল বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। তাইতো প্রতিদিন অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পিপাষু ভীর জমায় সাতলার শাপলার বিলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য।
এর সৌন্দর্য্য বর্ণনা করতে গিয়ে সৌখিন কবি ও সমাজ সেবক শিবলু মোল্লা বলেন, “আমি আনন্দিত, আমি পুলকিত। অতি কাছে এই বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ভান্ডার এতদিনে দেখা হয় নাই।”
কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, “সাতলার শাপলার বিল একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হতে পারে।” ব্যাংকার মারুফ কাওসার বলেন, “সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এটি হতে পারে এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। তবে এখানে অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন দরকার।”
শাপলা বিলের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ও “বরিশালের ভালো-মন্দ ফেসবুক গ্রুপ” -এর ক্রিয়েটর এডমিন নওরোজ কবির টুকু বলেন, “সাতলার শাপলার বিলের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দিয়ে প্রচুর পর্যটক আকৃষ্ট করা সম্ভব। তবে এখানে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে। যেমন- নৌকায় ওঠানামা করার জন্য একটি ঘাট তৈরি করতে হবে যাতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে নৌকায় ওঠানামা করতে পারে। পর্যটকদের জন্য চেঞ্জ রুম, বাথরুম, টয়লেট নির্মাণসহ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিলে ঘোরার জন্য আধুনিক ও উন্নত মানের নৌকা সংযোজন করলে ভালো হয়।”
তিনি আরও বলেন, এখানে যত বেশি দর্শনার্থী আসবে এলাকার লোকজন আর্থিকভাবে তত বেশি লাভবান হবে এবং এলাকার সার্বিক উন্নতি সাধন হবে এটা বিবেচনয় রেখে স্থানীয়দের পর্যটকের গুরুত্ব এবং তাঁদের সাথে আচরণ বিষয়ক কিছু প্রশিক্ষনের প্রয়োজন।
শুকনো মওসুমে যখন বিলের পানি কমে যায় তখন স্থানীয়রা বিলের সম্পূর্ণ পানি সেচ করে মাছ ধরে এবং কৃষিকাজ করে। এতে শাপলার কন্দ অর্থাৎ মূল নষ্ট হয়ে যায়। এতে শাপলার উৎপাদন কমে যায়। এটা যাতে না করা হয় সে বিষয়ের উপর অধিকতর গুরুত্ত্বারোপ করেন তিনি।
এই ট্যুরে অংশ নেয়া সাংবাদিক, সমাজসেবক ও বিডিক্লিন, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক মাসুদুর রহমান বলেন, “সাতলার শাপলার বিল সত্যি এক মনমুগ্ধকর জায়গা। এখানের সার্বিক উন্নয়নে জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিক হওয়া আবশ্যক।” সেইসাথে তিনি এলাকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি বিনম্র আহবান জানান।
তবে আশার কথা হলো, বরিশালের বর্তমান জেলা প্রশাসক এস. এম. অজিয়র রহমান এই সকল সমস্যা সমাধানে আশু পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, তিনি ১০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে শাপলার বিল পরিদর্শন করেন।