ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৪২ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: দেশের নদনদী ও বঙ্গোপসাগরে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও আশ্বিনের পূর্ণিমা লক্ষ্য রেখে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ সময়ে দেশে ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
শুধু ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। তবে অন্য মাছ শিকারের নামে নদী-সাগরে নেমে কেউ যাতে ইলিশ ধরতে না পারে, সেজন্য জেলেদের নদী-সাগরে নামতেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা শুরুর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ইলিশ মৌসুম। ৩০ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষে জাটকা (১০ ইঞ্চির কম আকারের ইলিশ) নিধনে আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১ নভেম্বর। যা শেষ হবে ৩০ জুন। আজ রাত থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মৎস্য অধিদপ্তর কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. অলিয়ুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যেসব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধনের অভিযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় এবার বাড়তি নজর রাখা হবে। এ সময় তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলে পাবেন ২০ কেজি করে চাল।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ সারা বছর ডিম দিলেও ৭০-৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায়। এ সময়ে ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ গভীর সাগর ছেড়ে মিঠাপানির নদীতে চলে আসে। চলতি বছর ১৩ অক্টোবর আশ্বিনের পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আগে সাগর ছেড়ে নদীতে প্রবেশের সময় এবং পূর্ণিমার পরে নদী ছেড়ে সাগরে চলে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে মা ইলিশ ধরা পড়ে। তাই মা ইলিশের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে পূর্ণিমার আগে চার দিন এবং পরে ১৭ দিন, মোট ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মৎস্য বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী ইলিশের মূল উৎপাদন কেন্দ্র ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে- উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গণ্ডমারা পয়েন্ট, উত্তর-পশ্চিমে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দিন-সৈয়দ আশুলিয়া পয়েন্ট, দক্ষিণ পশ্চিমে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী পয়েন্ট এবং বরিশালের আড়িয়ালখাঁ, নয়াভাঙ্গুনী ও কীর্তনখোলার আংশিক।
ইলিশ অভয়াশ্রমের বেশিরভাগ চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলা সংলগ্ন নদনদীগুলো। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বরিশাল বিভাগ ও চাঁদপুর জেলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানটির বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক অলিয়ুর রহমান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে তারা জেলে, ইলিশের আড়তদার ও জনপ্রতিধিদের নিয়ে দফায় দফায় জনসচেতনতামূলক সভা ও নদী পাহারায় কমিটি গঠন করেছেন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, আজ থেকে সাগরমুখী ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকবে। যেসব নদীতে ইলিশের বিচরণ বেশি, সেসব নদী-সংলগ্ন গ্রামগুলোতে নদী পাহারা দেওয়ার জন্য বিশেষ কমিটি করা হয়েছে।
সাগরের খুব কাছের উপজেলা হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম পাথরঘাটা। সেখানকার প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী বাংলাদেশ ফিশিংবোট মালিক ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আজ সকাল থেকে সাগরমুখী ট্রলার বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন খালে বেঁধে রাখা হবে ট্রলার। তার অভিযোগ- বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা গভীর সাগরে অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এটা রোধ করতে হিরণ পয়েন্টে নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
নৌ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠন থেকে জেলেদের নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে তার সংগঠনের জেলেরাও নদী পাহারা দেবেন।
চাল পাবেন চার লক্ষাধিক জেলে: ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানার উৎসাহ দিতে জেলে অধ্যুষিত ২২ জেলায় চার লাখ আট হাজার ৭৯ জন কার্ডধারী জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট চার লাখ আট হাজার ৭৯ টন চাল।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, বরিশাল বিভাগে দুই লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জেলে চাল বরাদ্দের সুবিধা পাবেন। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ

আপডেট সময় : ১১:০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯

নিউজ ডেস্ক: দেশের নদনদী ও বঙ্গোপসাগরে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও আশ্বিনের পূর্ণিমা লক্ষ্য রেখে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ সময়ে দেশে ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
শুধু ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। তবে অন্য মাছ শিকারের নামে নদী-সাগরে নেমে কেউ যাতে ইলিশ ধরতে না পারে, সেজন্য জেলেদের নদী-সাগরে নামতেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা শুরুর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ইলিশ মৌসুম। ৩০ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষে জাটকা (১০ ইঞ্চির কম আকারের ইলিশ) নিধনে আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১ নভেম্বর। যা শেষ হবে ৩০ জুন। আজ রাত থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মৎস্য অধিদপ্তর কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় উপপরিচালক ড. অলিয়ুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যেসব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধনের অভিযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় এবার বাড়তি নজর রাখা হবে। এ সময় তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলে পাবেন ২০ কেজি করে চাল।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ সারা বছর ডিম দিলেও ৭০-৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায়। এ সময়ে ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ গভীর সাগর ছেড়ে মিঠাপানির নদীতে চলে আসে। চলতি বছর ১৩ অক্টোবর আশ্বিনের পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আগে সাগর ছেড়ে নদীতে প্রবেশের সময় এবং পূর্ণিমার পরে নদী ছেড়ে সাগরে চলে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে মা ইলিশ ধরা পড়ে। তাই মা ইলিশের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে পূর্ণিমার আগে চার দিন এবং পরে ১৭ দিন, মোট ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মৎস্য বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী ইলিশের মূল উৎপাদন কেন্দ্র ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে- উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গণ্ডমারা পয়েন্ট, উত্তর-পশ্চিমে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দিন-সৈয়দ আশুলিয়া পয়েন্ট, দক্ষিণ পশ্চিমে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী পয়েন্ট এবং বরিশালের আড়িয়ালখাঁ, নয়াভাঙ্গুনী ও কীর্তনখোলার আংশিক।
ইলিশ অভয়াশ্রমের বেশিরভাগ চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলা সংলগ্ন নদনদীগুলো। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বরিশাল বিভাগ ও চাঁদপুর জেলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানটির বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক অলিয়ুর রহমান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে তারা জেলে, ইলিশের আড়তদার ও জনপ্রতিধিদের নিয়ে দফায় দফায় জনসচেতনতামূলক সভা ও নদী পাহারায় কমিটি গঠন করেছেন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, আজ থেকে সাগরমুখী ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকবে। যেসব নদীতে ইলিশের বিচরণ বেশি, সেসব নদী-সংলগ্ন গ্রামগুলোতে নদী পাহারা দেওয়ার জন্য বিশেষ কমিটি করা হয়েছে।
সাগরের খুব কাছের উপজেলা হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম পাথরঘাটা। সেখানকার প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী বাংলাদেশ ফিশিংবোট মালিক ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আজ সকাল থেকে সাগরমুখী ট্রলার বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন খালে বেঁধে রাখা হবে ট্রলার। তার অভিযোগ- বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা গভীর সাগরে অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এটা রোধ করতে হিরণ পয়েন্টে নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
নৌ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠন থেকে জেলেদের নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে তার সংগঠনের জেলেরাও নদী পাহারা দেবেন।
চাল পাবেন চার লক্ষাধিক জেলে: ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানার উৎসাহ দিতে জেলে অধ্যুষিত ২২ জেলায় চার লাখ আট হাজার ৭৯ জন কার্ডধারী জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট চার লাখ আট হাজার ৭৯ টন চাল।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, বরিশাল বিভাগে দুই লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জেলে চাল বরাদ্দের সুবিধা পাবেন। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।