নিজস্ব প্রতিনিধি (কুয়াকাটা):
নদীর অধিকার রক্ষায় শুধু হাইকোর্টের রায় পর্যাপ্ত নয়, সর্বস্তরের সাধারন মানুষের সক্রিয় উদ্যোগই পারে নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে। এমন অঙ্গিকার নিয়েই শেষ হলো একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ৫ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন। এছাড়াও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গবেষকরা পানি ও নদী বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাপত্র তুলে ধরেন, যেমন- ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থায় জলপথের ব্যবহার, হালদা নদী বিষয়ক গবেষণা, পানি দূষণ ও পদ্মা নদীর পানির মান নির্ণয়, টেকসই সুপেয় পানি কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আইন এবং আদালত বলছে নদী জীবন্ত সত্ত্বা। এর প্রণয়নে রাষ্ট্রের পাশাপাশি জনগণেরও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এধরণের রায় জনগণকে সাহস দেয়। তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে এডভোকেসির মাধ্যমে আমরা এই রায় পেয়েছি। এই রায় নিয়েই মানুষ নদীর অধিকার রক্ষায় আরো সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারবে। মানসিকতার পরিবর্তনও জনগণের দায়িত্ব। গবেষণা ও এডভোকেসির মধ্য দিয়েই আসবে এই পরিবর্তন। শুধু আইন প্রণয়ন কোন স্থায়ী সমাধান নয়।” দীর্ঘমেয়াদে আইন এর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, একশনএইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, নদীর দখল ও দূষণের ফলে ব্যহত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষের জীবন যাত্রা, তাই এই ইস্যুতে সামগ্রিক পর্যায়ে কাজ করা জরুরি। আর এই বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নদী বাঁচানোর এই আন্দোলনে। এই সম্মেলনে ও গবেষণায় তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় এনজিও আভাস-এর নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, পানি ও পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, ভাবছেন তাদেরকে একত্রিত করার একটি প্রয়াস এই পানি সম্মেলন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও সকল অংশীদারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে নদী অধিকার রক্ষার বার্তা।
অনুষ্ঠানে এক আলোচনায় একশনএইড বাংলাদেশ-এর একজন কর্মকর্তা ওসমান বিন নাসের তুরাগ নদীর স্বীকৃতির নির্দেশনা ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে তুরাগসহ দেশের সকল নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। “হাইকোর্টের সকল নির্দেশনাই পালনীয়। এই রায়ের ব্যত্যয় ঘটে, নদী দখল বা দূষণ করলে তা আইনের চোখে দন্ডনীয়”, তিনি বলেন। “এছাড়া, সংবিধানেও জনসম্পত্তি হিসেবে নদীর অধিকার রক্ষার দায়িত্ব নাগরিক ও রাষ্ট্রের উপর অর্পণ করা হয়েছে। যা পালন করা সকলের কর্তব্য। নদী যেহেতু নিজে কোর্টে মামলা করতে সক্ষম নয়, তাই নদীর অধিকার হনন হলে যে কোন মানুষ তার পক্ষে মামলা করতে পারবে এই আইনের ভিত্তিতে।
দুইদিনের এ সম্মেলনে মোট নয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয় যেখানে দেশ এবং দেশের বাইরের গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।