রোজ রবিবার, ২রা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, দুপুর ২:২৫


					
				
শর্তময় ভালোবাসার শেষ পরিনতি (শেষ পর্ব)

শর্তময় ভালোবাসার শেষ পরিনতি (শেষ পর্ব)

শর্তময় ভালোবাসা

মোঃ সাইফুল ইসলাম

………….তুষারের মনের মধ্যে এখন চলছে মরভূমির শূণ্যতা। মরুভূমির বুকে আগুন জ্বালালে যেমন করে জ্বলে তেমনি জ্বলছে সে। অন্তর্মূখী তুষার কারো কাছে কষ্টের কথা শেয়ারও করতে পারেনা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুরে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

তুষার নিজেকে সামলে নেয়ার জন্য অসংখ্য ছোট গল্প এবং কবিতা লিখে মনের কষ্টগুলো ভূলে থাকতে শুরু করলো।

অনেকদিন পরে স্বপ্নার লিখা একটি চিরকুট পেলো তুষার। অনেক আশা প্রত্যাশা ছিলো এই চিরকুট নিয়ে। কিন্তু চিরকুট পড়ে তুষার হতবম্ভ হয়ে গেলো। এমন কিছু কথা লিখা ছিলো যা ছিলো সাংঘর্ষিক। চিরকুটের লিখা গুলো ছিলো এমন – আপনার মৃত্যু বাবার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

এতেই প্রমাণ হবে এবং এটাই আমাকে পাওয়ার একমাত্র উপায়। সেগুলো হলো ১) আপনার মায়ের সকল দোষ ও স্বভাব আমার বাবা ও চাচাদের কাছে বলতে হবে।
২) বিয়ের পরে আমাকে আপনার সাথে রাখতে হবে।
৩) আপনার মায়ের সাথে আমি থাকতে পারবো না
৪) ত্যাজ্য হতে পারবেন সেটা আমার পরিবারকে জানাতে হবে।……….এভাবে আরো ১২টি শর্ত দেয়া ছিলো।

স্বপ্নাকে পছন্দের মূল কারন ছিলো তার মায়ের জন্য। স্বপ্না তুষারের মায়ের সেবা যত্ন করবে, ভালোবাসবে কাছে রাখবে সেজন্যই তাকে পছন্দ করা। অথচ স্বপ্না কিনা তার শর্তের প্রথম ৪টিতে তার মাকে দূরে রাখা এবং অপমানজনক শর্ত আরোপ করলো।


ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তুষার কিছুতেই এটা মানতে পারেননি। পৃথিবীর সকল শর্ত মেনেও স্বপ্নাকে কাছে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা তুষার করতো। যদি মাকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য না করতো।


তখনই সে প্রতিজ্ঞা করলো এমন সুখ আমার দরকার নেই যেখানে মা থাকবে না। যে সুখ আপনজনদের দূরে ঠেলে দেয়, সেই সুখকে বিসর্জন দিয়ে তুষার পাথরের রুপ ধারণ করলো। তারপর থেকে স্বপ্নার সাথে তুষারের না হয়েছে দেখা আর না হয়েছে কথা।


শত চেষ্টা করেও স্বপ্না আর তুষারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। কারন তুষার যেমন ছিলো নির্লোভ,নিরহংকারী, বিনয়ী শিক্ষিত তেমনি ছিলো আত্মমর্যাদা সম্পন্ন। তার যেটা ছিলো না সেটা হলো অর্থ সম্পদ। আর অর্থ এবং সম্পদ এগুলো প্রকৃতি প্রদত্ত আল্লাহ চাইলে যেকোন সময়ে, যে কাউকে অর্থ ও বিত্তের মালিক করে দিতে পারে। এ বিশ্বাস তুষারের সবসময়ই ছিলো।

তুষারের এই আত্মগোপন স্বপ্না খুব ভালো ভাবে নিতে পারেনি। সে তুষারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এক প্রকার পাগল হয়ে গেলো। কয়েকবার তুষারদের বাড়িতে গেলো। যেহেতু তুষার বাড়িতে থাকেনা সেহেতু তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ঐদিকে তার পারিবারিক চাপ আরো বাড়তে থাকে। সবদিক মিলিয়ে স্বপ্না সত্যিকার অর্থে পাগলামি করতে থাকলো। তুষার যে ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বা দূরে সরে গিয়েছে। এটা ওর পরিবারের লোকজন জানতো না। তবে স্বপ্না শুধু অনুভব করছে কিন্তু সেও সঠিক কারন জানেনা। হয়তো কখনো জানবেও না। সম্পর্ক কোন শর্ত দিয়ে আটকে বা টিকিয়ে রাখা যায়না। সম্পর্ক হলো দুটি অভিন্ন হৃদয়ের চাওয়া পাওয়ার সফল সমন্বয়। কারো একার চাওয়াতে, একার ইচ্ছে অনিচ্ছাতে কোন সম্পর্ক বেড়ে ওঠে না। তুষার চেয়েছে এক স্বপ্না চেয়েছে অন্যকিছু। তুষারের ভাবনায় স্বপ্না ছিলো এক রকম, স্বপ্না ভেবেছে অন্য রকম। শর্তারোপের মাধ্যমে স্বপ্নার ভাবটা যখন সঠিকভাবে প্রকাশ পেলো তখন দেখা গেলো তুষারের ভাবনাটা ভূল ছিলো। তুষার সত্যিকার অর্থে টাইম-পাস বা এনজয় করার জন্য স্বপ্নার সাথে রিলেশনে জড়ায়নি। এটা কারো পক্ষে বোঝা বা কাউকে বোঝানো সম্ভব হয়নি। যার জন্য একটি পবিত্র সম্পর্ক ধীরে ধীরে অস্তমিত সূর্যের ন্যায় তেজহারা হয়ে ডুবতে বসেছে।

তুষার অনার্স শেষ করলো, আর স্বপ্না এস,এস,সি পাস করে কলেজে উঠলো। কলেজে স্বপ্না ছিলো কয়েকগুণ বেপরোয়া। কয়েকটা রিলেশনে জড়িয়ে অনেক ধরনের বদনামের সম্মুখীন হয়েছে। তার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়েছে। তুষারেরর অনুপস্থিতিতে স্বপ্না একেবারে বেসামাল। তার পরিবার তুষারকে পাহাড়া দিচ্ছে যাতে তুষারের সাথে সম্পর্ক না থাকে। অথচ সেই তুষার ছিলো স্বপ্নার সেইফগার্ড। অন্যদিকে স্বপ্না অন্য ছেলেদের সাথে বিনা বাঁধায় প্রেম করে তুষারকে শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু তুষার তো এগুলোর খবর আর রাখেনা। কারন জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হলেও সেটা সে কাউকে দেখায়নি। এমনকি তার কোন বন্ধুদের কাছে কখনো এবিষয়ে কিছু শেয়ার করেনি। কারন সত্যিকার অর্থে সে অনেক ভালোবাসতো স্বপ্নাকে। তুষারের দ্বারা ওর অসম্মান হোক সেটা কখনো সে চায়নি।

যাই হোক শত বাঁধা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে আপন মনে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছে তুষার। শুরু হলো অনার্স পরিক্ষা। অনার্স শেষ করার সাথে সাথেই তুষার বিয়ে করে ফেললো। কারন তুষার যতদিন বিয়ে না করবে ততদিন স্বপ্নার পরিবার বিশ্বাস করবে না যে স্বপ্না স্বাধীন। স্বপ্নাকে দ্রুত স্বাধীনতা দেওয়ার জন্যই সে দ্রুত বিয়ে করে ফেললো। কিন্তু তুষার যত যা ই করুক স্বপ্নাদের থেকে শত্রুতা দূর করতে কখনো পারেনি। তুষারকে বিপদে ফেলার জন্য যতপ্রকার কুবুদ্ধি আছে সবগুলোকে কাজে লাগিয়েছে তারা। কিন্তু তুষার তো নিরব মানুষ। আল্লাহকে ভয় করে, বিশ্বাস করে পৃথিবী মাত্র কয়েক দিনের জন্য। তাই তাদের কোন ফাঁদে সে পা না দিয়ে সব কিছু এড়িয়ে চলেছে।


হয়তো সারাজীবন এভাবেই চলতে হবে। স্বপ্নার প্রতি তুষারের দূ্র্বলতাই তাকে তাদের করা অত্যাচার গুলো নিরবে সহ্য করতে বাধ্য করে।

হটাৎ করে একদিন স্বপ্না একটি অপরিচিত মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোন করলো। দূর্ভাগ্যবশত ফোনটি রিসিভ করেছিলো তুষারের স্ত্রী । তখন সে বিশ্বাস করলো যে সত্যি সত্যি তুষার বিয়ে করেছে।

কয়েক বছর পরে স্বপ্নারও বিয়ে হয়ে গেলো। এখন সে হয়তো কয়েক সন্তানের মা। তুষার, স্বপ্নার সাথে আর কখনো দেখা করার চেষ্টা করেনি। দূর থেকে ভালোবেসে সবসময়ই তার জন্য দোয়া ও শুভ কামনা করে যাচ্ছে নিরবে।

তুষারও এক সন্তানের বাবা। দু’জন দুই মেরুতে হয়তো ভালো ই আছে। তবে কেউ কারো খোঁজ জানেনা। যেখানে এমন একসময় ছিলো একদিন দেখা না হলে তাদের দিন কাটতো না, একদিন কথা না বললে ভালো লাগতো না। শুধু মাত্র কিছু শর্ত সেই সম্পর্ককে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিলো । শত আবেগ ইমোশন মুহুর্তে ই শেষ।

মোরাল অব দ্যা স্টোরিঃ সম্পর্ককে যত্ন করতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্ককে আগলে রাখতে হয়। ভালোবাসা শর্ত দিয়ে হয় না।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন-০১৮২২৮১৫৭৪৮