ঢাকা ০২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শর্তময় ভালোবাসার শেষ পরিনতি (২য় পর্ব)

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:০৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২
  • ৮৪১ বার পড়া হয়েছে

শর্তময় ভালোবাসা

মোঃ সাইফুল ইসলাম

 

 

 

 

 

…………………তার পরেও দুজনের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়া ছিলো। শুরু হলো তুষারের প্রেমিক জীবন।
যেহেতু সপ্তাহে শেষের দিন পড়াতে আসতো। তাই ৬দিনের পড়া সে তিনদিনে শেষ করার চেষ্টা করতো। সেজন্য বাধ্য হয়েই অনেক সময় নিয়ে পড়াতে হতো।
বলে রাখা ভালো বিনা পারিশ্রমিকে তুষার তাদের তিনজনকে পড়াতো। যদিও বেতন দেয়ার কথা থাকলেও কখনো কোন বেতন স্বপ্নার বাবা দিতে পারেনি আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে।

স্বপ্না স্বভাবে একটু চাঁপা স্বভাবের হলেও একটু বেশী ইমোশনাল ছিলো। তার এই ইমোশনের জন্য অবশ্য বিভিন্ন সময়ে কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। অন্যদিকে তুষার ছিলো introvert (অন্তর্মুখী) তার ফিলিংস বাহির থেকে বোঝা দায়। তবে তিনি বেশ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন।


যখন দু’জনের বোঝাপড়া একটু ভালো হলো তখন তুষার স্বপ্নাদের টিউশনিটা ছেড়ে দিলো। তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিলো। আসলে এটা একটা ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো। কারন ইমোশনাল স্বপ্না নিয়মিত তুষারকে না দেখতে পারলে,কথা বলতে না পারলে বা চিঠির উত্তর না পেলে পাগল হয়ে যেতো। এই নিয়ন্ত্রণ তার ছিলো না তাইতো প্রতি সপ্তাহেই তার সাথে যোগাযোগ করতেই হতো। আসলে তুষারের মনের ইচ্ছে ছিলো যেহেতু স্বপ্না অনেক ছোট তাই ও আস্তে আস্তে বড় হবে আর এই দিকে তুষারও তার অনার্স শেষ করে একটি চাকুরি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাবের মাধ্যমে সামাজিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আর এ কারনেই সে ওদের টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু স্বপ্না অতিমাত্রায় আবেগ তাড়িত হওয়ার দরুন খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানেই গোপন বিষয়টি আর গোপন থাকেনি। একজন দুজন করে কানাকানির পর্যায়ে চলে গেলো। একপর্যায়ে এসে ওদের বাসা থেকে ওর প্রতি কঠোর হতে শুরু করলো।


কঠোর যত হয় তুষারের প্রতি স্বপ্নার আকর্ষনও তত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন্ ভাবে দেখা করার কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। কখনো সফল হয় আবার কখনও ব্যর্থতায় মুখ লুকায়। বাধ্য হয়েই তুষার প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসতো। না আসলে অনেক বেশী পাগলামি সহ্য করতে হতো।


কখনো কোন সপ্তাহে না আসলে ওর লিখা চিঠি গুলো মানুষের হাতে পরে যেতো। একটা বিষয় খুবই মজার ছিলো ওর চিঠি গুলো কারো হাতে গেলেও সে ওটা পড়তে পারবে না। কারন ওর লিখা চিঠিগুলো আসলে চিঠি হতোনা। হতো এক একটা ইংরেজি রচনা। বাসায় যখন ওর আম্মু বলতো কি করো স্বপ্না ও বলতো আম্মু ইংরেজি পড়ি। আসলে লিখতো ইংরেজিতে (SMS type) চিঠি। যা দ্বারা ওর মনের ভাব প্রকাশ করে দিতো। তুষারকেও তার উত্তর যথাসময়ে দিতে হতো। তুষার আাসলে খুব ভালো চিঠি লিখতে পারতো। তুষারর চিঠিগুলো কখনোই ইমোশনাল হতো না। গুরু গম্ভীর, গুরুজনের চিঠির মতই হতো। কারন তুষার ভালো করেই জানতো তাকে দিতে হবে লম্বা পথ পাড়ি। তাইতো সব কিছুতে সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে পথ চলতো। তুষার যেমন নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও ভাবতে হচ্ছে। তাই যাতে কোন ভূল হয়ে না যায় সেজন্যই দেখে শুনে চলতো। কারন তুষার জানতো, একটা ভূলের জন্য সারা জীবন পস্তাতে হবে। সেজন্যই তার চিঠিগুলো এমন হতো যাতে স্বপ্না যাতে কোন প্রকার ভূল করে না ফেলে।

প্রতিটি পরিবারই তার প্রত্যেক সন্তানের মঙ্গল কামনা করে। তাই কোন পিতামাতাই তার আদরের সন্তানকে অপাত্রে দান করতে পারেনা। স্বপ্নার বেলায় কেনো এর ব্যতিক্রম হবে ? ওদের তিন ভাই বোনের মধ্যে স্বপ্না বড়, স্নেহা মেঝো আর রিয়াদ হলো সবচেয়ে ছোটো। বাবা যদিও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী তথাপিও সমাজে তাদের আলাদা মূল্যায়ন আছে। তার বড় মেয়ে বড় আদরের মেয়ে তাকে নিয়ে স্বপ্নটাও সেই লেভেলের। সেখানে তুষার হচ্ছে প্রাইমারী শিক্ষকের ছেলে। তাও আবার বেঁচে নেই। সামাজিক অবস্থা বলতে যা বোঝায় সেটা তার নেই। কারন তুষার হলো অন্তর্মুখী একটি মানুষ। নিজেকে জাহির করাটা সে কখনোই পছন্দ করতো না। আর ওরা নিজেকে জাহির করা এবং রিপ্রেজেন্ট করা দুটোতে ছিলো সিদ্ধহস্ত।

প্রথম দিকে ওদের বাবা মা দু’জন রাজি থাকলেও পরবর্তী সময়ে ওর চাচা ও চাচাতো ভাই তাদের প্ররোচনায় একটু বেঁকে বসলো। তারপরেও যোগাযোগ ছিলো। কারন স্বপ্না পাগলের মত ভালো বাসতো তুষারকে। তুষারও অন্ধের মতো ভালো বাসতো স্বপ্নাকে। দু’জনের ই প্রথম প্রেম বলে কথা। সত্যি বলতে তাদের যোগাযোগ করাটা দিনদিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। স্বপ্নার পরিবার থেকেই প্রেসারটা অনেক বেশী। তুষার যেহেতু একা মানুষ তার পারিবারিক চাপ তাকে খুব একটা কাবু করতে পারে না। কারন সে কিছুটা স্বাধীন প্রকৃতির। কুচ পরোওয়া নেহি টাইপের বিপরীতে অসম্ভব জেদী যেটা সচরাচর মানুষের চোখে পড়বে না। প্রচন্ড রকমের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন তাইতো স্বপ্নাকে কখনো প্রেমিকার চোখে দেখেনি। তাকে সবসময়ই তার প্রাপ্য সম্মান দিতো। কারন স্বপ্না এবং তুষারের বয়সের ব্যবধান এবং তার স্টুডেন্ট এ দুটোই তুষার খুব ভালো করে মাথায় রাখতো। তুষার কখনোই আর ৫টা ছেলের মত ছিলোনা। সবাই যেটাকে এনজয় বলে তুষার সেটাকে পাপ বলেই জানে। তুষারের মুখের কথা হলো সংবিধানের মতো। কাউকে কথা দিলে তা বরখেলাপ করার কথা সে কখনো চিন্তাও করেনা। তুষার সবসময়ই মনে করে যেকোন পণ্যের একটা নির্দিষ্ট দাম থাকে। যেমন বাটার পণ্যের হলো একদাম, তবে মানুষের মুখের কোনো দাম কেন থাকবে না। তাইতো তুষার তার মুখের কথাকে সংবিধানের মত মূল্যায়ন করতো। একবার কোন এক কারনে স্বপ্নার চাচাতো ভাইয়েরা গ্রাম্য শালিশ ডাকে। তুষার যাতে স্বপ্নাকে ডিষ্ট্রাব না করে সেজন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তুষার তাতে স্বাক্ষর দেয়নি। কারন মুখে বলা কথা হাজার কাগজে লেখার চেয়ে দামী। কথা দিয়ে কথা না রাখা তো মোনাফেকের অন্যতম লক্ষ্মণ।


এরপর থেকেই তুষারের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে শুরু করলো। একজন মানুষকে ছোট করার যতগুলো পদ্ধতি আছে সবগুলোই তারা প্রয়োগ করেছে। প্রথমে তারা নারী নির্যাতন মামলা করলো সেখানে তারা খুব একটা ভালো কিছু ফল পেলো না। পরে দূরের কোন এক মার্ডার কেসের মামলায় ফাসাঁনোর চেষ্টা করলো সর্বোপরি কিছুই করতে পারেনি। কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে ?


যেহেতু তারা স্বপ্নাকে কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারছেনা। তখন তারা অন্যপদ্ধতি অবলম্বন করলো। ফকির দিয়ে তাকে ভোলানোর চেষ্টা করলো।। কিন্তু তাতে হীতে বিপরীত হলো। স্বপ্না আরো বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো তুষারের জন্য। এখন প্রকাশ্যে সে তুষারের নাম যপ করে। সমস্যা হলো তুষারের যত চিঠি পত্র ছিলো সেগুলো ওর ভাইদের কাছে দিয়ে দিতো। যতকথা হয় সেগুলো বলে দিতো অন্যের কাছে। সেজন্য তুষারও একটু সতর্ক হয়ে কম কথা বলে স্বপ্নার সাথে। কোন কথা যে নিজের কাছে রাখবে, আর কোন কথা সে অন্যের কাছে বলবে এই ভারসাম্য টুকু সে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলো।

(চলবে……..)

 

 

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

শর্তময় ভালোবাসার শেষ পরিনতি (২য় পর্ব)

আপডেট সময় : ১১:০৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২

শর্তময় ভালোবাসা

মোঃ সাইফুল ইসলাম

 

 

 

 

 

…………………তার পরেও দুজনের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়া ছিলো। শুরু হলো তুষারের প্রেমিক জীবন।
যেহেতু সপ্তাহে শেষের দিন পড়াতে আসতো। তাই ৬দিনের পড়া সে তিনদিনে শেষ করার চেষ্টা করতো। সেজন্য বাধ্য হয়েই অনেক সময় নিয়ে পড়াতে হতো।
বলে রাখা ভালো বিনা পারিশ্রমিকে তুষার তাদের তিনজনকে পড়াতো। যদিও বেতন দেয়ার কথা থাকলেও কখনো কোন বেতন স্বপ্নার বাবা দিতে পারেনি আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে।

স্বপ্না স্বভাবে একটু চাঁপা স্বভাবের হলেও একটু বেশী ইমোশনাল ছিলো। তার এই ইমোশনের জন্য অবশ্য বিভিন্ন সময়ে কড়া মাশুল দিতে হয়েছে। অন্যদিকে তুষার ছিলো introvert (অন্তর্মুখী) তার ফিলিংস বাহির থেকে বোঝা দায়। তবে তিনি বেশ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন।


যখন দু’জনের বোঝাপড়া একটু ভালো হলো তখন তুষার স্বপ্নাদের টিউশনিটা ছেড়ে দিলো। তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিলো। আসলে এটা একটা ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো। কারন ইমোশনাল স্বপ্না নিয়মিত তুষারকে না দেখতে পারলে,কথা বলতে না পারলে বা চিঠির উত্তর না পেলে পাগল হয়ে যেতো। এই নিয়ন্ত্রণ তার ছিলো না তাইতো প্রতি সপ্তাহেই তার সাথে যোগাযোগ করতেই হতো। আসলে তুষারের মনের ইচ্ছে ছিলো যেহেতু স্বপ্না অনেক ছোট তাই ও আস্তে আস্তে বড় হবে আর এই দিকে তুষারও তার অনার্স শেষ করে একটি চাকুরি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাবের মাধ্যমে সামাজিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আর এ কারনেই সে ওদের টিউশনিটা ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু স্বপ্না অতিমাত্রায় আবেগ তাড়িত হওয়ার দরুন খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানেই গোপন বিষয়টি আর গোপন থাকেনি। একজন দুজন করে কানাকানির পর্যায়ে চলে গেলো। একপর্যায়ে এসে ওদের বাসা থেকে ওর প্রতি কঠোর হতে শুরু করলো।


কঠোর যত হয় তুষারের প্রতি স্বপ্নার আকর্ষনও তত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন্ ভাবে দেখা করার কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। কখনো সফল হয় আবার কখনও ব্যর্থতায় মুখ লুকায়। বাধ্য হয়েই তুষার প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসতো। না আসলে অনেক বেশী পাগলামি সহ্য করতে হতো।


কখনো কোন সপ্তাহে না আসলে ওর লিখা চিঠি গুলো মানুষের হাতে পরে যেতো। একটা বিষয় খুবই মজার ছিলো ওর চিঠি গুলো কারো হাতে গেলেও সে ওটা পড়তে পারবে না। কারন ওর লিখা চিঠিগুলো আসলে চিঠি হতোনা। হতো এক একটা ইংরেজি রচনা। বাসায় যখন ওর আম্মু বলতো কি করো স্বপ্না ও বলতো আম্মু ইংরেজি পড়ি। আসলে লিখতো ইংরেজিতে (SMS type) চিঠি। যা দ্বারা ওর মনের ভাব প্রকাশ করে দিতো। তুষারকেও তার উত্তর যথাসময়ে দিতে হতো। তুষার আাসলে খুব ভালো চিঠি লিখতে পারতো। তুষারর চিঠিগুলো কখনোই ইমোশনাল হতো না। গুরু গম্ভীর, গুরুজনের চিঠির মতই হতো। কারন তুষার ভালো করেই জানতো তাকে দিতে হবে লম্বা পথ পাড়ি। তাইতো সব কিছুতে সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে পথ চলতো। তুষার যেমন নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও ভাবতে হচ্ছে। তাই যাতে কোন ভূল হয়ে না যায় সেজন্যই দেখে শুনে চলতো। কারন তুষার জানতো, একটা ভূলের জন্য সারা জীবন পস্তাতে হবে। সেজন্যই তার চিঠিগুলো এমন হতো যাতে স্বপ্না যাতে কোন প্রকার ভূল করে না ফেলে।

প্রতিটি পরিবারই তার প্রত্যেক সন্তানের মঙ্গল কামনা করে। তাই কোন পিতামাতাই তার আদরের সন্তানকে অপাত্রে দান করতে পারেনা। স্বপ্নার বেলায় কেনো এর ব্যতিক্রম হবে ? ওদের তিন ভাই বোনের মধ্যে স্বপ্না বড়, স্নেহা মেঝো আর রিয়াদ হলো সবচেয়ে ছোটো। বাবা যদিও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী তথাপিও সমাজে তাদের আলাদা মূল্যায়ন আছে। তার বড় মেয়ে বড় আদরের মেয়ে তাকে নিয়ে স্বপ্নটাও সেই লেভেলের। সেখানে তুষার হচ্ছে প্রাইমারী শিক্ষকের ছেলে। তাও আবার বেঁচে নেই। সামাজিক অবস্থা বলতে যা বোঝায় সেটা তার নেই। কারন তুষার হলো অন্তর্মুখী একটি মানুষ। নিজেকে জাহির করাটা সে কখনোই পছন্দ করতো না। আর ওরা নিজেকে জাহির করা এবং রিপ্রেজেন্ট করা দুটোতে ছিলো সিদ্ধহস্ত।

প্রথম দিকে ওদের বাবা মা দু’জন রাজি থাকলেও পরবর্তী সময়ে ওর চাচা ও চাচাতো ভাই তাদের প্ররোচনায় একটু বেঁকে বসলো। তারপরেও যোগাযোগ ছিলো। কারন স্বপ্না পাগলের মত ভালো বাসতো তুষারকে। তুষারও অন্ধের মতো ভালো বাসতো স্বপ্নাকে। দু’জনের ই প্রথম প্রেম বলে কথা। সত্যি বলতে তাদের যোগাযোগ করাটা দিনদিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। স্বপ্নার পরিবার থেকেই প্রেসারটা অনেক বেশী। তুষার যেহেতু একা মানুষ তার পারিবারিক চাপ তাকে খুব একটা কাবু করতে পারে না। কারন সে কিছুটা স্বাধীন প্রকৃতির। কুচ পরোওয়া নেহি টাইপের বিপরীতে অসম্ভব জেদী যেটা সচরাচর মানুষের চোখে পড়বে না। প্রচন্ড রকমের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন তাইতো স্বপ্নাকে কখনো প্রেমিকার চোখে দেখেনি। তাকে সবসময়ই তার প্রাপ্য সম্মান দিতো। কারন স্বপ্না এবং তুষারের বয়সের ব্যবধান এবং তার স্টুডেন্ট এ দুটোই তুষার খুব ভালো করে মাথায় রাখতো। তুষার কখনোই আর ৫টা ছেলের মত ছিলোনা। সবাই যেটাকে এনজয় বলে তুষার সেটাকে পাপ বলেই জানে। তুষারের মুখের কথা হলো সংবিধানের মতো। কাউকে কথা দিলে তা বরখেলাপ করার কথা সে কখনো চিন্তাও করেনা। তুষার সবসময়ই মনে করে যেকোন পণ্যের একটা নির্দিষ্ট দাম থাকে। যেমন বাটার পণ্যের হলো একদাম, তবে মানুষের মুখের কোনো দাম কেন থাকবে না। তাইতো তুষার তার মুখের কথাকে সংবিধানের মত মূল্যায়ন করতো। একবার কোন এক কারনে স্বপ্নার চাচাতো ভাইয়েরা গ্রাম্য শালিশ ডাকে। তুষার যাতে স্বপ্নাকে ডিষ্ট্রাব না করে সেজন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তুষার তাতে স্বাক্ষর দেয়নি। কারন মুখে বলা কথা হাজার কাগজে লেখার চেয়ে দামী। কথা দিয়ে কথা না রাখা তো মোনাফেকের অন্যতম লক্ষ্মণ।


এরপর থেকেই তুষারের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে শুরু করলো। একজন মানুষকে ছোট করার যতগুলো পদ্ধতি আছে সবগুলোই তারা প্রয়োগ করেছে। প্রথমে তারা নারী নির্যাতন মামলা করলো সেখানে তারা খুব একটা ভালো কিছু ফল পেলো না। পরে দূরের কোন এক মার্ডার কেসের মামলায় ফাসাঁনোর চেষ্টা করলো সর্বোপরি কিছুই করতে পারেনি। কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে ?


যেহেতু তারা স্বপ্নাকে কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারছেনা। তখন তারা অন্যপদ্ধতি অবলম্বন করলো। ফকির দিয়ে তাকে ভোলানোর চেষ্টা করলো।। কিন্তু তাতে হীতে বিপরীত হলো। স্বপ্না আরো বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো তুষারের জন্য। এখন প্রকাশ্যে সে তুষারের নাম যপ করে। সমস্যা হলো তুষারের যত চিঠি পত্র ছিলো সেগুলো ওর ভাইদের কাছে দিয়ে দিতো। যতকথা হয় সেগুলো বলে দিতো অন্যের কাছে। সেজন্য তুষারও একটু সতর্ক হয়ে কম কথা বলে স্বপ্নার সাথে। কোন কথা যে নিজের কাছে রাখবে, আর কোন কথা সে অন্যের কাছে বলবে এই ভারসাম্য টুকু সে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলো।

(চলবে……..)