ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি বাস্তবধর্মী জীবনের গল্প জোঁক

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২
  • ৫০৬ বার পড়া হয়েছে

জোঁক

মোঃ সাইফুল ইসলাম


পৃথিবী একটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় জায়গা। একজীবনে সাধারণ লোকের পক্ষে এর রহস্য ভেদ করা সম্ভব নয়। যাই হোক আমাদের গ্রামের রহমান মিঞার ছেলে রাতুল মিঞা মাষ্টার্স শেষ করে চাকুরির সন্ধানে দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে। সরকারি চাকরির জন্য টাকা পয়সা খরচ করে ফেলেছেন। অনেক স্থানেই তিনি প্রতারনারও শিকার হয়েছেন। রহমান মিঞার বয়স কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেকে খুব অসহায় বোধ করছেন। বেঁচে থাকতে ছেলের জন্য কিছু করে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

রাতুলও যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটা ভালো চাকুরির জন্য। জীবনের সবগুলো পরীক্ষাতে সহজে পার করতে পারলেও চাকুরির এই পরিক্ষাটা খুব সহজে পার হচ্ছে না। সে নিজেও কিছুটা হতাশ। হতাশা তাকে পেয়ে বসেছে।

হটাৎ একদিন তার এক বন্ধুর সাথে দেখা। চায়ের আড্ডায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তার বেকারত্বের বিষয়টিও উঠে আসলো। অনেক চিন্তা করে তার সেই বন্ধু তাকে বললো বন্ধু শোণ; তুমি যদি বেসরকারি চাকুরি করতে চাও তাহলে আমাকে বলো আমি তোমার জন্য একটি ব্যবস্থা করি। রাতুল মিঞা বন্ধুর কথা শুনে সাত-পাঁচ না ভেবে বলে দিলো যেকোনো চাকুরি করার জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত আছি। আর ভালো লাগে না। রাতুলের সেই বন্ধু তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বললো।


অবশেষে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধুর মাধ্যমে রাতুল একটি চাকুরি পেলো। প্রথমে তার বেতন ধরা হলো ২০০০০টাকা সাথে এক্সট্রা টিএ/ডিএ বাবদ ৮৫০০টাকা।

খুব ভালো চাকুরি সবার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সবাই মোটামুটি খুঁশি।
শুরু হলো রাতুল মিঞার নতুন জীবন। একমাস ট্রেনিং করে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে যোগদান করলো। পোষ্টিং হলো অন্য জেলাতে। বাসা ছেড়ে চলে গেলো কর্মজীবনে। ভালোভাবে কাজকর্ম চলতে লাগলো। তার কাজ হলো; ডাক্তার ভিজিট করা, অর্ডারকাটা,টার্গেট পূরণ করা। রাতুল নতুন, এজন্য তার উপরে খুব একটা চাপাচাপি নেই।
৬ মাস পরে, রাতুলের বস বললো; রাতুল সাহেব অনেক দিন তো হলো টার্গেট তো করতে পারলেন না। এভাবে কি চাকুরি করতে পারবেন ? বেসরকারি চাকুরি টার্গেট না করতে পারলে তো আর টিকে থাকতে পারবেন না। কোম্পানি ও আরেকটু নতুন সংযোজন করলো ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে পাঠাতে হবে প্রতিদিন মিনিমাম ৩০ টি, ডাক্তার ভিজিট করতে হবে ১২ জন।
সেল্স টার্গেট, ডাক্তার ভিজিট, ব্যাবস্থাপত্রের ছবি পাঠানো সব মিলিয়ে রাতুল একটু চাপের মধ্যে পড়ে গেলো। কিন্ত পিছনে ফিরে যাবার সুযোগ নেই।

সরকারি চাকরি যেহেতু অপ্রতুল, সংসারের একটি বাড়তি চাপ,বাবা অসুস্থ, মায়ের ও নিয়মিতভাবে ঔষধ খেতে হয়। তাই সব মিলিয়ে পিছনে তাঁকানোর সুযোগ নেই।
কিংকর্তব্যবিমূর রাতুল টার্গেট পূরণের জন্য যারপরনাই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্ত টার্গেট মানেই ১০ তলা বিল্ডিং পায়ে হেঁটে ওঠার মত। খুব সহজে ওঠা যায় না। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের ভাবনা হলো ১০ তলাতে ওঠার টার্গেট নিলে ৫ তলাতে তো উঠতে পারবে। ৫ তলাতে ওঠার টার্গেট নিলে তো ২য় তলাতেও উঠতে পারবে না। তাই ইচ্ছে করেই আকাশ পরিমাণ টার্গেট দিয়ে রাখে। যা পূরণ করা অনেক সময়েই পসিবল না। তার উপরে মার্কেটে থাকে আন্ডার রেট। আপনার শত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় কোম্পানির এই আন্ডাররেট। একজনকে টার্গেট করে চাকুরি করতে হলে মিনিমাম ৫০০০ টাকা জলে ফেলে দিতে হয়। তাই রিপ্রেজেন্টেটিভদের টাকার সঠিক হিসেব কাউকে দিতে পারে না। কারন এই টাকাটা না নিজে খেতে পারে, না কোম্পানি। এখানে ভাগ বসায় এক প্রকার অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীরা। আর এর সাথে যোগহয় কতিপয় ব্রোকার। যা এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় কিন্ত তারপরেও আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আছে।


রাতুলের ২৮৫০০টাকা বেতন প্রথম ৬মাস ঠিকভাবে নিতে পেরেছেন। তাতে করে তিনি পরিবারের অনেক প্রয়োজন মিটিয়েছেন। কিন্ত বাজেট এচিভ করতে গিয়ে এখন আর তার বেতন ২০০০০টাকাও থাকছে না। এভাবে আরো ৬ মাস পার করলো। একবছর পরে ৫০০০০ টাকা ঋণ গ্রস্থ হয়ে গেলেন। এখন আর তিনি কোন দিকেই পারছেন না। না পারছেন এচিভমেন্ট করতে, না পারছেন ঋন পরিশোধ করতে।
কোম্পানির চাপ বাড়ছে রাতুল সাহেব টার্গেট করতে পারছেন না, রিজিওনাল ম্যানেজার চাপ প্রয়োগ করছেন এরিয়া ম্যানেজারকে, রাতুল সাহেবের রিপ্লেসমেন্টের জন্য।
ম্যানেজার সাহেব রাতুলকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছেন। কিন্ত টাকার ঘাটতি তো অন্যভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। (বলে রাখা ভালো সব ম্যানেজার মোটিভেট করার চেষ্টা করে না, বেশীর ভাগ ম্যানেজার পারলে থাক না পারলে ছাড় এই টাইপের হয়) এক্ষেত্রে রাতুলের ভাগ্য কিছুটা ভালো, সে ভালো ম্যানেজার পেলো।


রাতুল তো আগের মতো এখন আর পরিবারে খরচ দিতে পারছে না। তাই পরিবারের কাছেও সে সন্দেহের চোখে রয়েছে। কারন নতুন চাকুরিতে গিয়ে যে পরিমান টাকা সংসারে দিয়েছে এখন পূরনো হয়েও সে সেই পরিমান টাকা দিতে পারছেন না।
কোম্পানি, সংসার কোন স্থানেই এখন রাতুল ভালো নেই।
চরম হতাশা আর বিষন্নতা তাকে ঘিরে রেখেছে।

ভদ্র সেই ছেলেটি মাঝে-মাঝে দু’একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া বের করছে। মাঝে মাঝে ঘুমের ঔষধ নিতে হয় ঘুমানোর জন্য। সবসময়ই চিন্তার মধ্যে থাকে।


সেদিন অফিস বকেয়া, ডেইলী সেল্স পারফরম্যান্স, ফোর পি, ডিসিআর সেন্ডিং,আরএক্স সেন্ডিং নিয়ে বসের সাথে অনেক তর্কবির্তক হয়। কারন রাতুলের কোন কিছুই আর স্বাভাবিক ছিলো না। যার দরুন নিয়মিত সে পারফর্মেন্সের দিক থেকে নীচের দিকে যাচ্ছিলো। সেজন্যই বস তাকে সতর্ক করে দিলো।

বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে অর্ডার কাটার জন্য সেদিন এক্সহেটকোয়ার্টারে যাচ্ছিলো পথে পথে জীবনের সবগুলো বিষয়, পাওয়া না পাওয়ার চিন্তাগুলো মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছিলো। কি পেলাম? কি করলম? কি করার ছিলো ? কি করবো ? ভাবতে ভাবতেই পথিমধ্যে অপর দিক থেকে একটি বেপরোয়া ট্রাক এসে তার হোন্ডা কে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। মেডিকেলে নেয়া হলো কিন্ত কোন কথা বলার সুযোগ তার হলো না। একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হলো।

এভাবে প্রতিনিয়ত হাজারো রাতুলের জীবন ও স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। শুধু মাত্র কিছু কিছু মধ্যসত্বভোগীদের খামখেয়ালীপনা ও অতিরিক্ত লোভের জন্য।

লেখক ও প্রবন্ধকার

মোঃ সাইফুল ইসলাম

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

একটি বাস্তবধর্মী জীবনের গল্প জোঁক

আপডেট সময় : ১১:০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুন ২০২২

জোঁক

মোঃ সাইফুল ইসলাম


পৃথিবী একটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় জায়গা। একজীবনে সাধারণ লোকের পক্ষে এর রহস্য ভেদ করা সম্ভব নয়। যাই হোক আমাদের গ্রামের রহমান মিঞার ছেলে রাতুল মিঞা মাষ্টার্স শেষ করে চাকুরির সন্ধানে দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে। সরকারি চাকরির জন্য টাকা পয়সা খরচ করে ফেলেছেন। অনেক স্থানেই তিনি প্রতারনারও শিকার হয়েছেন। রহমান মিঞার বয়স কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেকে খুব অসহায় বোধ করছেন। বেঁচে থাকতে ছেলের জন্য কিছু করে যেতে না পারার আক্ষেপ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

রাতুলও যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটা ভালো চাকুরির জন্য। জীবনের সবগুলো পরীক্ষাতে সহজে পার করতে পারলেও চাকুরির এই পরিক্ষাটা খুব সহজে পার হচ্ছে না। সে নিজেও কিছুটা হতাশ। হতাশা তাকে পেয়ে বসেছে।

হটাৎ একদিন তার এক বন্ধুর সাথে দেখা। চায়ের আড্ডায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তার বেকারত্বের বিষয়টিও উঠে আসলো। অনেক চিন্তা করে তার সেই বন্ধু তাকে বললো বন্ধু শোণ; তুমি যদি বেসরকারি চাকুরি করতে চাও তাহলে আমাকে বলো আমি তোমার জন্য একটি ব্যবস্থা করি। রাতুল মিঞা বন্ধুর কথা শুনে সাত-পাঁচ না ভেবে বলে দিলো যেকোনো চাকুরি করার জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত আছি। আর ভালো লাগে না। রাতুলের সেই বন্ধু তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বললো।


অবশেষে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধুর মাধ্যমে রাতুল একটি চাকুরি পেলো। প্রথমে তার বেতন ধরা হলো ২০০০০টাকা সাথে এক্সট্রা টিএ/ডিএ বাবদ ৮৫০০টাকা।

খুব ভালো চাকুরি সবার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সবাই মোটামুটি খুঁশি।
শুরু হলো রাতুল মিঞার নতুন জীবন। একমাস ট্রেনিং করে ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে যোগদান করলো। পোষ্টিং হলো অন্য জেলাতে। বাসা ছেড়ে চলে গেলো কর্মজীবনে। ভালোভাবে কাজকর্ম চলতে লাগলো। তার কাজ হলো; ডাক্তার ভিজিট করা, অর্ডারকাটা,টার্গেট পূরণ করা। রাতুল নতুন, এজন্য তার উপরে খুব একটা চাপাচাপি নেই।
৬ মাস পরে, রাতুলের বস বললো; রাতুল সাহেব অনেক দিন তো হলো টার্গেট তো করতে পারলেন না। এভাবে কি চাকুরি করতে পারবেন ? বেসরকারি চাকুরি টার্গেট না করতে পারলে তো আর টিকে থাকতে পারবেন না। কোম্পানি ও আরেকটু নতুন সংযোজন করলো ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে পাঠাতে হবে প্রতিদিন মিনিমাম ৩০ টি, ডাক্তার ভিজিট করতে হবে ১২ জন।
সেল্স টার্গেট, ডাক্তার ভিজিট, ব্যাবস্থাপত্রের ছবি পাঠানো সব মিলিয়ে রাতুল একটু চাপের মধ্যে পড়ে গেলো। কিন্ত পিছনে ফিরে যাবার সুযোগ নেই।

সরকারি চাকরি যেহেতু অপ্রতুল, সংসারের একটি বাড়তি চাপ,বাবা অসুস্থ, মায়ের ও নিয়মিতভাবে ঔষধ খেতে হয়। তাই সব মিলিয়ে পিছনে তাঁকানোর সুযোগ নেই।
কিংকর্তব্যবিমূর রাতুল টার্গেট পূরণের জন্য যারপরনাই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্ত টার্গেট মানেই ১০ তলা বিল্ডিং পায়ে হেঁটে ওঠার মত। খুব সহজে ওঠা যায় না। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের ভাবনা হলো ১০ তলাতে ওঠার টার্গেট নিলে ৫ তলাতে তো উঠতে পারবে। ৫ তলাতে ওঠার টার্গেট নিলে তো ২য় তলাতেও উঠতে পারবে না। তাই ইচ্ছে করেই আকাশ পরিমাণ টার্গেট দিয়ে রাখে। যা পূরণ করা অনেক সময়েই পসিবল না। তার উপরে মার্কেটে থাকে আন্ডার রেট। আপনার শত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় কোম্পানির এই আন্ডাররেট। একজনকে টার্গেট করে চাকুরি করতে হলে মিনিমাম ৫০০০ টাকা জলে ফেলে দিতে হয়। তাই রিপ্রেজেন্টেটিভদের টাকার সঠিক হিসেব কাউকে দিতে পারে না। কারন এই টাকাটা না নিজে খেতে পারে, না কোম্পানি। এখানে ভাগ বসায় এক প্রকার অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীরা। আর এর সাথে যোগহয় কতিপয় ব্রোকার। যা এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় কিন্ত তারপরেও আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আছে।


রাতুলের ২৮৫০০টাকা বেতন প্রথম ৬মাস ঠিকভাবে নিতে পেরেছেন। তাতে করে তিনি পরিবারের অনেক প্রয়োজন মিটিয়েছেন। কিন্ত বাজেট এচিভ করতে গিয়ে এখন আর তার বেতন ২০০০০টাকাও থাকছে না। এভাবে আরো ৬ মাস পার করলো। একবছর পরে ৫০০০০ টাকা ঋণ গ্রস্থ হয়ে গেলেন। এখন আর তিনি কোন দিকেই পারছেন না। না পারছেন এচিভমেন্ট করতে, না পারছেন ঋন পরিশোধ করতে।
কোম্পানির চাপ বাড়ছে রাতুল সাহেব টার্গেট করতে পারছেন না, রিজিওনাল ম্যানেজার চাপ প্রয়োগ করছেন এরিয়া ম্যানেজারকে, রাতুল সাহেবের রিপ্লেসমেন্টের জন্য।
ম্যানেজার সাহেব রাতুলকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছেন। কিন্ত টাকার ঘাটতি তো অন্যভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। (বলে রাখা ভালো সব ম্যানেজার মোটিভেট করার চেষ্টা করে না, বেশীর ভাগ ম্যানেজার পারলে থাক না পারলে ছাড় এই টাইপের হয়) এক্ষেত্রে রাতুলের ভাগ্য কিছুটা ভালো, সে ভালো ম্যানেজার পেলো।


রাতুল তো আগের মতো এখন আর পরিবারে খরচ দিতে পারছে না। তাই পরিবারের কাছেও সে সন্দেহের চোখে রয়েছে। কারন নতুন চাকুরিতে গিয়ে যে পরিমান টাকা সংসারে দিয়েছে এখন পূরনো হয়েও সে সেই পরিমান টাকা দিতে পারছেন না।
কোম্পানি, সংসার কোন স্থানেই এখন রাতুল ভালো নেই।
চরম হতাশা আর বিষন্নতা তাকে ঘিরে রেখেছে।

ভদ্র সেই ছেলেটি মাঝে-মাঝে দু’একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া বের করছে। মাঝে মাঝে ঘুমের ঔষধ নিতে হয় ঘুমানোর জন্য। সবসময়ই চিন্তার মধ্যে থাকে।


সেদিন অফিস বকেয়া, ডেইলী সেল্স পারফরম্যান্স, ফোর পি, ডিসিআর সেন্ডিং,আরএক্স সেন্ডিং নিয়ে বসের সাথে অনেক তর্কবির্তক হয়। কারন রাতুলের কোন কিছুই আর স্বাভাবিক ছিলো না। যার দরুন নিয়মিত সে পারফর্মেন্সের দিক থেকে নীচের দিকে যাচ্ছিলো। সেজন্যই বস তাকে সতর্ক করে দিলো।

বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে অর্ডার কাটার জন্য সেদিন এক্সহেটকোয়ার্টারে যাচ্ছিলো পথে পথে জীবনের সবগুলো বিষয়, পাওয়া না পাওয়ার চিন্তাগুলো মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছিলো। কি পেলাম? কি করলম? কি করার ছিলো ? কি করবো ? ভাবতে ভাবতেই পথিমধ্যে অপর দিক থেকে একটি বেপরোয়া ট্রাক এসে তার হোন্ডা কে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। মেডিকেলে নেয়া হলো কিন্ত কোন কথা বলার সুযোগ তার হলো না। একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হলো।

এভাবে প্রতিনিয়ত হাজারো রাতুলের জীবন ও স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। শুধু মাত্র কিছু কিছু মধ্যসত্বভোগীদের খামখেয়ালীপনা ও অতিরিক্ত লোভের জন্য।

লেখক ও প্রবন্ধকার

মোঃ সাইফুল ইসলাম