ঢাকা ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাদের কথা কেউ বলে না,অথচ তাঁরা ও তো শহীদি মর্যাদার দাবীদার।

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:১২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০
  • ২২০৯ বার পড়া হয়েছে

সকল স্বাস্থ্য সেবার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তারা। কিন্তু তাদের কোন স্বীকৃতি নেই। না আছে নিজের প্রতিষ্ঠানে, না আছে সরকারের কাছে। মাঝখানে জনগনেরর কাছেও এরা হলো একপ্রকার বিরম্বনার বস্তু। এদের স্থান কোথাও নেই। ঘরে বাইরে এরা হল অবহেলিত। এদের কাজকে কেউ কখনো মূল্যায়ন করেনি, করবে বলে কারো ভাবনায়ও নেই। অথচ ; এরা কেউ নিরক্ষর বা অশিক্ষিত নয়।

এক সময় কেবল বিজ্ঞান বিভাগের গ্রাজুয়েটরাই এ চাকরিতে আবেদন করতে পারতেন। এখন কোম্পানিগুলো অন্যান্য যেকোন ডিসিপ্লিন বা বিভাগ থেকে আসা ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের এ পেশায় কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। ইদানীং বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়াও বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারীরাও বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন এ পেশায়। ।

সব সময় হাসিমুখ, সুদর্শন, সুন্দর পোশাকধারী আর ভেতরটা বোবাকান্না, নীরব আর্তচিৎকারে ভরপুর যুবকদের পরিচয় হল এমআর/এমআইও/এমপিও (মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার)। সোজা কথায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। প্রবল আত্মবিশ্বাসী এসব যুবক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। আত্মপ্রতিষ্ঠা, মানবসেবা আর পরিবারের জীবিকা অর্জনে নিরলস সংগ্রামী একদল কর্মীবাহিনী।

তারা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি নির্ধারিত এলাকাতে কাজ করে থাকে। নির্দিষ্ট এলাকার ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাৎ করা সংশ্লিষ্ট মেডিসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা তার কাজ। ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তার কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ ডাক্তারদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধিকাংশ মেডিকেল প্রতিনিধির কাজ প্রত্যেক সকালে হাসপাতালে এবং বিকালে ডক্টরস পয়েন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধের গুনাগুন, কার্যাবলী ক্রিয়া পার্শ্বপ্রক্রিয়া এবং ওষুধের বৈশিষ্ঠ্যগুলো তুলে ধরে নতুন নতুন জেনেরিক সহ সময়াপযোগী ওষুধের চাহিদা সৃষ্টি করা। তাদের নিদৃষ্ট কিছু ছুটি যেমন ঈদের ছুটি,পূজা পার্বন ছাড়া তেমন ছুটি নেই। তারা নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তারা যদি কাজ না করে পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাত অচল হয়ে যাবে। কারন ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু তার প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবারাহ যদি নিশ্চিত না হয় তবে তার চিকিৎসা কোন কাজে আসবে না। তাই স্বাস্থ্যসেবায় এই রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

দেশে বিরাজমান করোনা ভাইরাসের এই ভয়াবহতার মধ্যেও তাদের ছুটি নেই বরং তারা সদা তৎপর তাদের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিৎ করে রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের প্রতিনিধিদের পিপিই সহ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিলেও অনেক কোম্পানি ই তাদের প্রতিনিধিদের যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করতে পারেননি। (কারন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য কোন নীতিমালা নেই। এই সুযোগে কোম্পানিগুলো যেমন ইচ্ছে তেমন আচরন করে।)তারপরেও তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

অনেক কোম্পানির ই প্রতিনিধি ইতামধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন,কয়েকজন মারাও গেছেন।কিন্তু তাদের কথা কেউ বলেনা, তাদের জন্য কারো ভাবনা নেই। ডাক্তার, নার্স,পুলিশ,সাংবাদিকদের নিয়ে জাতি যতটা চিন্তিত এই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে কেউ কখনো চিন্তা করেনি, চিন্তায় আসবে বলেও মনে হয়না। তবে সময় হয়েছে তাদের নিয়েও ভাববার, তারাও সত্যিকারের সম্মুখ যোদ্ধা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের পরিবারগুলোরও পাওয়া উচিৎ সার্বিক নিরাপত্বা। তাদের অধিকার আছে শহাদী মর্যাদা পাওয়ার কারন তারাও সত্যিকার অর্থেই সম্মুখ যোদ্ধা।

মোঃ সাইফুল ইসলাম
কলাম লেখক ও যুগ্ন সম্পাদক ধানসিঁড়ি নিউজ।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

© All rights reserved © ধানসিঁড়ি নিউজ
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Diganta IT Ltd.

তাদের কথা কেউ বলে না,অথচ তাঁরা ও তো শহীদি মর্যাদার দাবীদার।

আপডেট সময় : ০৮:১২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০

সকল স্বাস্থ্য সেবার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তারা। কিন্তু তাদের কোন স্বীকৃতি নেই। না আছে নিজের প্রতিষ্ঠানে, না আছে সরকারের কাছে। মাঝখানে জনগনেরর কাছেও এরা হলো একপ্রকার বিরম্বনার বস্তু। এদের স্থান কোথাও নেই। ঘরে বাইরে এরা হল অবহেলিত। এদের কাজকে কেউ কখনো মূল্যায়ন করেনি, করবে বলে কারো ভাবনায়ও নেই। অথচ ; এরা কেউ নিরক্ষর বা অশিক্ষিত নয়।

এক সময় কেবল বিজ্ঞান বিভাগের গ্রাজুয়েটরাই এ চাকরিতে আবেদন করতে পারতেন। এখন কোম্পানিগুলো অন্যান্য যেকোন ডিসিপ্লিন বা বিভাগ থেকে আসা ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের এ পেশায় কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। ইদানীং বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়াও বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রিধারীরাও বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন এ পেশায়। ।

সব সময় হাসিমুখ, সুদর্শন, সুন্দর পোশাকধারী আর ভেতরটা বোবাকান্না, নীরব আর্তচিৎকারে ভরপুর যুবকদের পরিচয় হল এমআর/এমআইও/এমপিও (মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার)। সোজা কথায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। প্রবল আত্মবিশ্বাসী এসব যুবক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। আত্মপ্রতিষ্ঠা, মানবসেবা আর পরিবারের জীবিকা অর্জনে নিরলস সংগ্রামী একদল কর্মীবাহিনী।

তারা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি নির্ধারিত এলাকাতে কাজ করে থাকে। নির্দিষ্ট এলাকার ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাৎ করা সংশ্লিষ্ট মেডিসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা তার কাজ। ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তার কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ ডাক্তারদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অধিকাংশ মেডিকেল প্রতিনিধির কাজ প্রত্যেক সকালে হাসপাতালে এবং বিকালে ডক্টরস পয়েন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধের গুনাগুন, কার্যাবলী ক্রিয়া পার্শ্বপ্রক্রিয়া এবং ওষুধের বৈশিষ্ঠ্যগুলো তুলে ধরে নতুন নতুন জেনেরিক সহ সময়াপযোগী ওষুধের চাহিদা সৃষ্টি করা। তাদের নিদৃষ্ট কিছু ছুটি যেমন ঈদের ছুটি,পূজা পার্বন ছাড়া তেমন ছুটি নেই। তারা নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তারা যদি কাজ না করে পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাত অচল হয়ে যাবে। কারন ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু তার প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবারাহ যদি নিশ্চিত না হয় তবে তার চিকিৎসা কোন কাজে আসবে না। তাই স্বাস্থ্যসেবায় এই রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

দেশে বিরাজমান করোনা ভাইরাসের এই ভয়াবহতার মধ্যেও তাদের ছুটি নেই বরং তারা সদা তৎপর তাদের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিৎ করে রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের প্রতিনিধিদের পিপিই সহ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিলেও অনেক কোম্পানি ই তাদের প্রতিনিধিদের যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করতে পারেননি। (কারন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য কোন নীতিমালা নেই। এই সুযোগে কোম্পানিগুলো যেমন ইচ্ছে তেমন আচরন করে।)তারপরেও তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

অনেক কোম্পানির ই প্রতিনিধি ইতামধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন,কয়েকজন মারাও গেছেন।কিন্তু তাদের কথা কেউ বলেনা, তাদের জন্য কারো ভাবনা নেই। ডাক্তার, নার্স,পুলিশ,সাংবাদিকদের নিয়ে জাতি যতটা চিন্তিত এই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে কেউ কখনো চিন্তা করেনি, চিন্তায় আসবে বলেও মনে হয়না। তবে সময় হয়েছে তাদের নিয়েও ভাববার, তারাও সত্যিকারের সম্মুখ যোদ্ধা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের পরিবারগুলোরও পাওয়া উচিৎ সার্বিক নিরাপত্বা। তাদের অধিকার আছে শহাদী মর্যাদা পাওয়ার কারন তারাও সত্যিকার অর্থেই সম্মুখ যোদ্ধা।

মোঃ সাইফুল ইসলাম
কলাম লেখক ও যুগ্ন সম্পাদক ধানসিঁড়ি নিউজ।