ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার টানে স্বামীকে টুকরো টুকরো করে খুন করে স্ত্রী।

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০১৯
  • ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার (৩০) পরকীয়া সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন হন দলিল লেখক স্বামী রেজাউল করিম রিয়াজ (৪৫)। এছাড়া স্বামীর সম্পদের ওপর লোভ ছিল লিজার। স্বামীকে হত্যার পর সেই সম্পদ আত্মসাতের পরিকল্পনাও ছিল লিজার। রিয়াজের সঙ্গে বিয়ের পূর্বে লিজার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল।ওই দুই স্বামীর জমিজমা ও টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর তাদের তালাক দেন। একইভাবে রিয়াজের অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেয়া ছিল লিজার উদ্দেশ্য। তবে এর আগেই পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন করা হয় স্বামী রিয়াজকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন লিজা।নিহত রিয়াজ সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর রাজধর গ্রামের মৃত সত্তার হাওলাদারের ছেলে এবং বরিশাল নগরীতে তিনি দলিল লেখকের কাজ করতেন। শুক্রবার সকালে বসতঘর থেকে রিয়াজের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় আটক করা হয় স্ত্রী লিজা ও তার ভাই রুবেলকে। আটক রিয়াজের স্ত্রী লিজার বাবার বাড়ি নগরীর পলাশপুরের বৌ বাজার এলাকায়।রোববার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসি মো. রাসেল, ওসি নুরুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. বশির আহম্মেদ প্রমুখ।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ জানান, শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল লিজার দিকে। আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে লিজা পুলিশকে জানায় রিয়াজের দ্বিতীয় এবং লিজার তৃতীয় বিয়ে ছিল। আগের দুই স্বামীর কাছ থেকে জমি এবং অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লিজা তাদের তালাক দেন। দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে ৪ বছর আগে তিনি রিয়াজকে বিয়ে করেন। ৪ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলোহ লেগেই ছিল।এরমধ্যে কয়েক মাস আগে রিয়াজের সহকারী মাছুমের সঙ্গে লিজার পরিচয় হয়। রিয়াজের কাছে দলিল লিখন কাজে প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো মাছুম। এক পর্যায়ে লিজার পরকীয়া সম্পর্কের সৃষ্টি হয় মাছুমের। সম্প্রতি লিজার পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলে রিয়াজ। এনিয়ে রিয়াজ গালাগালি করে লিজাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নগরীর পলাশপুরে রিয়াজের ১৭ শতাংশ জমি আত্মসাৎ এবং পরকীয়া সম্পর্ক বাধাহীন করতে দলিল লেখক রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিজা ও মাছুম।লিজার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, গত ১৯ এপ্রিল ঘটনার রাতে লিজা দুধের সঙ্গে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তার স্বামীকে খাওয়ায়। এতে রিয়াজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে লিজা, মাসুম ও তাদের সহযোগী হালিম ওরফে হাইল্ল্যা ধারালো দা ও ছুরি দিয়ে গলা কেটে এবং কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। এরপর ডাকাতির নাটক সাজাতে লিজা ঘরের মাটির ভিটিতে সিঁধ কাটে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘরে সিঁধ কাটা হয়। তবে সেখান থেকে কোনো মানুষ বের হওয়া সম্ভব নয়। গর্তের পাশে মাকরসার জালও অক্ষত ছিল। এ কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন আলামত দেখে আটক করা হয় লিজাকে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন গত ১৯ এপ্রিল নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার লিজা গত শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দিতে অপর দুই সহযোগী মাছুম ও হালিম ওরফে হাইল্ল্যা নাম প্রকাশ পায়। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

পরকীয়ার টানে স্বামীকে টুকরো টুকরো করে খুন করে স্ত্রী।

আপডেট সময় : ১১:৩১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার (৩০) পরকীয়া সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন হন দলিল লেখক স্বামী রেজাউল করিম রিয়াজ (৪৫)। এছাড়া স্বামীর সম্পদের ওপর লোভ ছিল লিজার। স্বামীকে হত্যার পর সেই সম্পদ আত্মসাতের পরিকল্পনাও ছিল লিজার। রিয়াজের সঙ্গে বিয়ের পূর্বে লিজার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল।ওই দুই স্বামীর জমিজমা ও টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর তাদের তালাক দেন। একইভাবে রিয়াজের অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেয়া ছিল লিজার উদ্দেশ্য। তবে এর আগেই পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন করা হয় স্বামী রিয়াজকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন লিজা।নিহত রিয়াজ সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর রাজধর গ্রামের মৃত সত্তার হাওলাদারের ছেলে এবং বরিশাল নগরীতে তিনি দলিল লেখকের কাজ করতেন। শুক্রবার সকালে বসতঘর থেকে রিয়াজের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় আটক করা হয় স্ত্রী লিজা ও তার ভাই রুবেলকে। আটক রিয়াজের স্ত্রী লিজার বাবার বাড়ি নগরীর পলাশপুরের বৌ বাজার এলাকায়।রোববার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসি মো. রাসেল, ওসি নুরুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. বশির আহম্মেদ প্রমুখ।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ জানান, শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল লিজার দিকে। আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে লিজা পুলিশকে জানায় রিয়াজের দ্বিতীয় এবং লিজার তৃতীয় বিয়ে ছিল। আগের দুই স্বামীর কাছ থেকে জমি এবং অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লিজা তাদের তালাক দেন। দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে ৪ বছর আগে তিনি রিয়াজকে বিয়ে করেন। ৪ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলোহ লেগেই ছিল।এরমধ্যে কয়েক মাস আগে রিয়াজের সহকারী মাছুমের সঙ্গে লিজার পরিচয় হয়। রিয়াজের কাছে দলিল লিখন কাজে প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো মাছুম। এক পর্যায়ে লিজার পরকীয়া সম্পর্কের সৃষ্টি হয় মাছুমের। সম্প্রতি লিজার পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলে রিয়াজ। এনিয়ে রিয়াজ গালাগালি করে লিজাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নগরীর পলাশপুরে রিয়াজের ১৭ শতাংশ জমি আত্মসাৎ এবং পরকীয়া সম্পর্ক বাধাহীন করতে দলিল লেখক রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিজা ও মাছুম।লিজার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, গত ১৯ এপ্রিল ঘটনার রাতে লিজা দুধের সঙ্গে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তার স্বামীকে খাওয়ায়। এতে রিয়াজ অজ্ঞান হয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে লিজা, মাসুম ও তাদের সহযোগী হালিম ওরফে হাইল্ল্যা ধারালো দা ও ছুরি দিয়ে গলা কেটে এবং কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। এরপর ডাকাতির নাটক সাজাতে লিজা ঘরের মাটির ভিটিতে সিঁধ কাটে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘরে সিঁধ কাটা হয়। তবে সেখান থেকে কোনো মানুষ বের হওয়া সম্ভব নয়। গর্তের পাশে মাকরসার জালও অক্ষত ছিল। এ কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন আলামত দেখে আটক করা হয় লিজাকে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন গত ১৯ এপ্রিল নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার লিজা গত শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দিতে অপর দুই সহযোগী মাছুম ও হালিম ওরফে হাইল্ল্যা নাম প্রকাশ পায়। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ।