ঢাকা ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটার বিমুখতায় শঙ্কিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯
  • ২৯৪ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

এবারের উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার দেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, “এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচনবিমুখতা অশনি সংকেত। এই নির্বাচন বিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনও কাম্য হতে পারে না। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।” পঞ্চম ধাপে পাঁচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পরদিন বুধবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়া জানান মাহবুব তালুকদার। আগের মতোই তিনি তার বক্তব্য লিখিতভাবে সাংবাদিকদের দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই মাস পরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় ইসি। সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোটারও ভোট দেয়নি। সব মিলিয়ে ভোটের হার ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, আওয়ামী লীগের শাসনে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপির কারণে নির্বাচনের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এর মধ্যেও জনগণের আস্থায় থাকার দাবি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির পক্ষ থেকে করা হলেও কমিশনার মাহবুব তালুকদার বরাবরই ভিন্নমত প্রকাশের জন্য আলোচনায় রয়েছেন। সেই ধারায়ই ‘উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আমার কথা’ শিরোনামের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, “বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়। একতরফা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো অভিব্যক্তি প্রতিফলিত হয় না বলে এর কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।”

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মাহবুব তালুকদার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিতও করেন। তিনি বলেন, “উপজেলা নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আওতামুক্ত না হলে তা কখনও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কৌলিন্য বিনষ্ট করেছে। কোনো কোনো সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।”
অন্য কারও হস্তক্ষেপ হলে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শুদ্ধ হবে না। এমতাবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন বা উপজেলা নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন থেকে যায় মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রত্যাশার বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, “কারও আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্বপালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

ভোটার বিমুখতায় শঙ্কিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ

এবারের উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার দেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, “এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচনবিমুখতা অশনি সংকেত। এই নির্বাচন বিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ। এই অবস্থা কখনও কাম্য হতে পারে না। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না। যথোপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।” পঞ্চম ধাপে পাঁচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পরদিন বুধবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এই প্রতিক্রিয়া জানান মাহবুব তালুকদার। আগের মতোই তিনি তার বক্তব্য লিখিতভাবে সাংবাদিকদের দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই মাস পরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেয় ইসি। সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোটারও ভোট দেয়নি। সব মিলিয়ে ভোটের হার ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, আওয়ামী লীগের শাসনে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে কারচুপির কারণে নির্বাচনের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এর মধ্যেও জনগণের আস্থায় থাকার দাবি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির পক্ষ থেকে করা হলেও কমিশনার মাহবুব তালুকদার বরাবরই ভিন্নমত প্রকাশের জন্য আলোচনায় রয়েছেন। সেই ধারায়ই ‘উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে আমার কথা’ শিরোনামের লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, “বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা। একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত এবং তা বহুত্ববাদের ভেতর থেকে উৎসারিত হতে হয়। একতরফা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো অভিব্যক্তি প্রতিফলিত হয় না বলে এর কোনো ঔজ্জ্বল্য থাকে না। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্র তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কিন্তু আমরা ক্রমাগত একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি যা গণতন্ত্রের জন্য অনভিপ্রেত।”

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মাহবুব তালুকদার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিতও করেন। তিনি বলেন, “উপজেলা নির্বাচন সংসদ সদস্যদের আওতামুক্ত না হলে তা কখনও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের উপদেষ্টার ভূমিকা উপজেলা পরিষদের কৌলিন্য বিনষ্ট করেছে। কোনো কোনো সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বা সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হয়েছে।”
অন্য কারও হস্তক্ষেপ হলে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাভাবিক ও শুদ্ধ হবে না। এমতাবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন বা উপজেলা নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হয়েছে কি না, এ প্রশ্ন থেকে যায় মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রত্যাশার বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, “কারও আজ্ঞাবহ হয়ে দায়িত্বপালন করলে এবং উপজেলা পরিষদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বিসর্জিত হলে উপজেলা পরিষদ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”