সাইফুল ইসলাম।। জীবন আর জীবিকা একটি অপরটির সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। অনেকেই প্রশ্ন করেন জীবন আগে নাকি জীবিকা? জীবন থাকলে পরে জীবিকার প্রয়োজন হয়, আর জীবন না থাকলে জীবিকা মূল্যহীন।
সুতরাং দুটোর সমন্বয় করে চলাই প্রত্যেকেের কর্তব্য।
আমরা বাঙালিরা বরাবরই এই সমন্বয় করাকে বেমালুম ভুলে যাই। জীবিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে যেমন নিজে বিপদে পড়ি তেমনি সবাইকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেই। তাইতো করোনা বাংলাদেশ তথা বরিশাল মহানগরীতে মহামারী রুপে আবির্ভাব হওয়ার দ্বার প্রান্তে।
লকডাউন বলেন আর কারফিউ বলেন এটা করোনাকালীন সময়ে মানুষের মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু আমরা এটা ভুলে গেলাম অবলীলায়। পরিণতিতে যা হওয়ার তাই হলো, সরকার লকডাউন তুলে দিল। এবারে শুরু হলো সীমিত আকারে চলাচল। কিন্তু এখানেও সেই এক কথা; আমরা বাঙালি, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। তারই ফলশ্রুতিতে মানুষ এখন অবিবেচকদের মত দিগ্বিদিক ছুটছে আর করোনাকে আহবান করছে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো এখন প্রতিদিন ৪০;৫০;৬০ করে আক্রান্ত হচ্ছে বরিশাল মহানগরীতে।
জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গতকাল ০৪ জুন তারিখে বরিশাল জেলায় নতুন করে আরো ৬৪ জন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী উজিরপুর উপজেলার ০২ জন, গৌরনদী উপজেলার ০১ জন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ১১ জন, পুলিশ পরিবারের ০২ জন সদস্য, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ০১ জন চিকিৎসক, ০৩ জন নার্স ও ০১ জন স্টাফসহ ০৫ জন, শেবাচিম হাসপাতালের নার্সের পরিবারের ০২ জন সদস্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন অধিভুক্ত সাগরদী, রুপাতলি, কাউনিয়া ও বাংলাবাজার এলাকার ০৫ জন করে ২০ জন, আমানতগঞ্জ, আলেকান্দা ও আমতলার মোড় এলাকার ০২ জন করে ০৬ জন, চৌমাথা, এমবি স্কুল মোড়, ধান গবেষণা মোড়, কলেজ রোড, বগুড়া রোড, ফকির বাড়ি, কমিশনার অফিস, কাঠপট্টি, বিআইপি রোড, মুসলিম গোরস্থান রোড, কাশিপুর ১০, এপিবিএন, ল’কলেজ রোড প্রত্যেক এলাকার ০১ জন করে ১৩ জন, সদর উপজেলাধীন শায়েস্তাবাদ ও দিনারের পুল এলাকার ০১ জন করে ০২ জন, মোট ৬৪ জন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগীদের মধ্যে ১২-৬২ বছর বয়সী রোগী রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট ৫৩২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক খুব আক্ষেপ করেই বলেন, “এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কিভাবে চলাফেরা করবেন।”
আপনার লকডাউন আপনার কাছে, আপনার সুস্থতা আপনার কাছে। আপনিই সিদ্ধান্ত নিন সীমিত আকারে চলবেন নাকি অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করবেন?
করোনা ভাইরাস খুব শীঘ্রই আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে এমন সুখবর পাওয়া যায়নি। ভ্যাকসিন আবিস্কারে জোড় প্রচেষ্টা চলছে তবে তা কতদিনে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারবে তাও নিশ্চিত নয়। যে পর্যন্ত না করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আসছে সে পর্যন্ত করোনার সাথে সহাবস্থানে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে আর এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সকলকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।