ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রূপপুরের বালিশকাণ্ড : গণপূর্তের প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:২৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০১৯
  • ২৪৮ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক:

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট।
এ জন্য ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কোর্টে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করে রেখেছেন আদালত।
সোমাবার রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সরওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। তাই এ মুহূর্তে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। তারা কি প্রতিবেদন দেন দেখা হোক।
এর আগে ওই গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবারপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রোববার (১৯ মে) হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এই রিট আবেদনটি করেন।
রিটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, পাবনার গণপূর্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
আজ শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী জানান, ১২৫টি ফ্ল্যাটের মালামাল কিনতে ও ওঠাতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা প্রত্যেক ফ্ল্যাটের জন্য খরচ পড়ে ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো।
গ্রিনসিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হয়। এতে দেখা যায়, একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে এর দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি টাকায় আকাশ সমান দামে এসব আসবাবপত্র কেনার পর তা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয়ের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।
কেজিখানেক ওজনের একটি বৈদ্যুতিক কেটলি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতেই খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। একই রকম খরচ দেখানো হয়েছে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি ইলেক্ট্রিক আয়রন ওপরে তুলতে; প্রায় আট হাজার টাকা করে কেনা প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকার বেশি।
শুধু তাই নয় প্রকল্পটির গাড়ি চালকের বেতন ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের কাছাকাছি। বর্তমানে সচিবের বেতন ৭৮ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পটির গাড়িচালকরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন। এতে আরও ১৮ হাজার টাকা পাবেন গাড়িচালকরা। এতে তাদের বেতন দাঁড়াবে ৯১ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পটির সর্বনিম্ন বেতন রাঁধুনি বা মালির। প্রকল্প থেকে তিনি বেতন পাবেন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করলে অতিরিক্ত পাবেন ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার বেতন পড়বে ৭৯ হাজার ৭০৮ টাকা, যা সচিবের বেতনের চেয়েও বেশি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রূপপুরের বালিশকাণ্ড : গণপূর্তের প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট

আপডেট সময় : ০৭:২৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট।
এ জন্য ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কোর্টে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করে রেখেছেন আদালত।
সোমাবার রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সরওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। তাই এ মুহূর্তে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। তারা কি প্রতিবেদন দেন দেখা হোক।
এর আগে ওই গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবারপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রোববার (১৯ মে) হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এই রিট আবেদনটি করেন।
রিটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, পাবনার গণপূর্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
আজ শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী জানান, ১২৫টি ফ্ল্যাটের মালামাল কিনতে ও ওঠাতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা প্রত্যেক ফ্ল্যাটের জন্য খরচ পড়ে ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো।
গ্রিনসিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হয়। এতে দেখা যায়, একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে এর দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি টাকায় আকাশ সমান দামে এসব আসবাবপত্র কেনার পর তা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয়ের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।
কেজিখানেক ওজনের একটি বৈদ্যুতিক কেটলি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতেই খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। একই রকম খরচ দেখানো হয়েছে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি ইলেক্ট্রিক আয়রন ওপরে তুলতে; প্রায় আট হাজার টাকা করে কেনা প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকার বেশি।
শুধু তাই নয় প্রকল্পটির গাড়ি চালকের বেতন ৭৩ হাজার ৭০৮ টাকা, যা একজন সচিবের কাছাকাছি। বর্তমানে সচিবের বেতন ৭৮ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পটির গাড়িচালকরা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন। এতে আরও ১৮ হাজার টাকা পাবেন গাড়িচালকরা। এতে তাদের বেতন দাঁড়াবে ৯১ হাজার ৭০৮ টাকা। প্রকল্পটির সর্বনিম্ন বেতন রাঁধুনি বা মালির। প্রকল্প থেকে তিনি বেতন পাবেন ৬৩ হাজার ৭০৮ টাকা। আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করলে অতিরিক্ত পাবেন ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার বেতন পড়বে ৭৯ হাজার ৭০৮ টাকা, যা সচিবের বেতনের চেয়েও বেশি।