ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর ভিক্ষার টাকায় সংসার চলে মুক্তিযোদ্ধা হাশেম শেখের

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯
  • ৪৫১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৮ বছর পরে আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি আবুল হাশেম খান (৯০)। মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তত নিজের নামটা দেখে যেতে চান। তিনি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা গ্রামের মৃত আবদুল জব্বার শেখের ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম শেখ ৪ শতাংশ জমির ওপর তৈরি এক জরাজীর্ণ বাড়িতে বাস করেন। বয়সের ভারে ভেঙে পড়েছেন, অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকেন। স্ত্রী মহিরণ বেগমই এখন তার একমাত্র ভরসা, স্ত্রীর ভিক্ষায় চলে তার সংসার।

একাত্তরে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন আবুল হাশেম। সে সময় আঞ্চলিক বাহিনীর অধিনায়ক গোলাম ইয়াকুব (বীরপ্রতীক)’র নেতৃত্বে একাধিক অপারেশনে অংশ নেন। নৌকায় করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে বেড়াতেন। রণাঙ্গনে অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের ৯ তারিখ তিনি আবেদন করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। মহম্মদপুর ও শালিখা বাহিনীর যুদ্ধকালীন আঞ্চলিক অধিনায়ক বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্রসহ মাগুরা জেলা ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার আলী রেজা খোকন ও ইউনিয়ন কমান্ডার আবদুল গফুর মোল্লার সাক্ষরসহ তার মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্র রয়েছে।

একাধিক দপ্তরের সনদ তার সংগ্রহে থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম ওঠেনি। তাই তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার।

আবুল হাসেম শেখ অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আমাদের ইউনিট কমান্ডার গফুর মোল্লা ছয় বছর আগে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আর সেই টাকাও ফেরত দেননি। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আমার চেক বই নিয়ে আমার নামে আসা অনুদানের ৩৬ হাজার টাকা তুলে আমাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা দেন। তবে গফুর মোল্লা ও চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাই মিয়া বলেন, হাশেম শেখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে তিনি কেন তালিকাভুক্ত হতে পারেননি, সে বিষয়ে আমি জানি না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মোঃ আসিফুর রহমান বলেন, যেহেতু আদালতের নির্দেশে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে, সেহেতু আপাতত কিছুই করার নেই। তবে প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

স্ত্রীর ভিক্ষার টাকায় সংসার চলে মুক্তিযোদ্ধা হাশেম শেখের

আপডেট সময় : ০৩:৫৪:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৮ বছর পরে আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি আবুল হাশেম খান (৯০)। মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তত নিজের নামটা দেখে যেতে চান। তিনি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা গ্রামের মৃত আবদুল জব্বার শেখের ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম শেখ ৪ শতাংশ জমির ওপর তৈরি এক জরাজীর্ণ বাড়িতে বাস করেন। বয়সের ভারে ভেঙে পড়েছেন, অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকেন। স্ত্রী মহিরণ বেগমই এখন তার একমাত্র ভরসা, স্ত্রীর ভিক্ষায় চলে তার সংসার।

একাত্তরে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন আবুল হাশেম। সে সময় আঞ্চলিক বাহিনীর অধিনায়ক গোলাম ইয়াকুব (বীরপ্রতীক)’র নেতৃত্বে একাধিক অপারেশনে অংশ নেন। নৌকায় করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে বেড়াতেন। রণাঙ্গনে অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের ৯ তারিখ তিনি আবেদন করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। মহম্মদপুর ও শালিখা বাহিনীর যুদ্ধকালীন আঞ্চলিক অধিনায়ক বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্রসহ মাগুরা জেলা ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার আলী রেজা খোকন ও ইউনিয়ন কমান্ডার আবদুল গফুর মোল্লার সাক্ষরসহ তার মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্র রয়েছে।

একাধিক দপ্তরের সনদ তার সংগ্রহে থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম ওঠেনি। তাই তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার।

আবুল হাসেম শেখ অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আমাদের ইউনিট কমান্ডার গফুর মোল্লা ছয় বছর আগে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আর সেই টাকাও ফেরত দেননি। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান আমার চেক বই নিয়ে আমার নামে আসা অনুদানের ৩৬ হাজার টাকা তুলে আমাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা দেন। তবে গফুর মোল্লা ও চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাই মিয়া বলেন, হাশেম শেখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে তিনি কেন তালিকাভুক্ত হতে পারেননি, সে বিষয়ে আমি জানি না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মোঃ আসিফুর রহমান বলেন, যেহেতু আদালতের নির্দেশে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে, সেহেতু আপাতত কিছুই করার নেই। তবে প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।