ঢাকা ০৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০১৯
  • ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর একটি দিন। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ৬ দফার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। ছয় দফা এক সময় বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
১৯৬৬ সালের ৭ জুন তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্যের শিকার বাঙালিদের ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা ৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৈন্যদের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন, গ্রেপ্তার হন অনেকে।
ছয় দফার হাত ধরেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি স্বাধিকারের এই আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পথ বেয়েই শুরু হয়েছিল বাঙালির চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম জন্ম হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ।
ছয় দফা -এর দাবিগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম দফা : সরকারের বৈশিষ্ট হবে Federal বা যৌথরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যৌথরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যারভিত্তিতে হবে।
দ্বিতীয় দফা : কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্থিত শর্তসাপেক্ষ বিষয়।
তৃতীয় দফা : পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময় করা চলবে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।
চতুর্থ দফা : রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান দেয়া হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে থাকে।
পঞ্চম দফা : যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, সেই অঙ্গরাজ্যের সরকার যাতে স্বীয় নিয়ণ্ত্রনাধীনে তার পৃথক হিসাব রাখতে পারে, সংবিধানে সেরূপ বিধান থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সংবিধান নির্দেশিত বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তা আদায় করা হবে। সংবিধান নির্দেশিত বিধানানুযায়ী দেশের বৈদেশিক নীতির কাঠামোর মধ্যে, যার দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারগুলোর হাতে থাকবে।
ষষ্ঠ দফা : ফলপ্রসূভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে মিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টারঃ

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর একটি দিন। ১৯৬৬ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ৬ দফার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। ছয় দফা এক সময় বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ৬ দফা হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
১৯৬৬ সালের ৭ জুন তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্যের শিকার বাঙালিদের ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা ৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা বাংলায় হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৈন্যদের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন, গ্রেপ্তার হন অনেকে।
ছয় দফার হাত ধরেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি স্বাধিকারের এই আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পথ বেয়েই শুরু হয়েছিল বাঙালির চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম জন্ম হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ।
ছয় দফা -এর দাবিগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম দফা : সরকারের বৈশিষ্ট হবে Federal বা যৌথরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যৌথরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যারভিত্তিতে হবে।
দ্বিতীয় দফা : কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্থিত শর্তসাপেক্ষ বিষয়।
তৃতীয় দফা : পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময় করা চলবে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।
চতুর্থ দফা : রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান দেয়া হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে থাকে।
পঞ্চম দফা : যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, সেই অঙ্গরাজ্যের সরকার যাতে স্বীয় নিয়ণ্ত্রনাধীনে তার পৃথক হিসাব রাখতে পারে, সংবিধানে সেরূপ বিধান থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সংবিধান নির্দেশিত বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তা আদায় করা হবে। সংবিধান নির্দেশিত বিধানানুযায়ী দেশের বৈদেশিক নীতির কাঠামোর মধ্যে, যার দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারগুলোর হাতে থাকবে।
ষষ্ঠ দফা : ফলপ্রসূভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে মিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।