ঢাকা ০৬:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে রোহিঙ্গা শিবিরে

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০১৯
  • ৩১৭ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ সারাদেশের ন্যায় এবার কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। আর এতেই রোহিঙ্গাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। তবে এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কারোও ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েনি। আর ডেঙ্গু নিয়ে রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস। বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন, নির্যাতন-অত্যাচারের ফলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বিশ্ব সম্প্রদায় চরম নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এবার ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা যায়, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও’র হয়ে কাজ করেন বরগুনার মমতাজ বেগম (৩০)। গত শুক্রবার (২ আগস্ট) গায়ে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে কোটবাজার অরজিন হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করতে আসেন তিনি। পরের দিন একই হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করতে আসেন স্থানীয় হলদিয়া পালং গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (২০) নামের এক যুবক। উভয়ের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুর জীবাণুর অস্থিত্ব পাওয়া গেছে বলে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল করিম জানিয়েছেন।

এদিকে টেকনাফ মেরিন সিটি হাসপাতালেও একজন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান কহিনুর আক্তার। উখিয়া সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মেরাজ হোসেন চয়ন বলেন, আমরা এ পর্যন্ত উখিয়াতে দুই জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করেছি। তাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু জীবাণু সনাক্ত হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখানে যেসব ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেছে তা ক্ষতিকর নয়। তবু সতর্কতা অবলম্বন হিসাবে বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমাদের সকলকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার আলী আল রাজী বলেন, ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার ভয়ে গরমেও সারারাত কাটছে মশারির মধ্যে। কিন্তু মশারি টাঙিয়ে শুয়েও আতঙ্ক কাটছে না মানুষের। সেখানেও হাতে মশা মারার ব্যাট নিয়ে ঘুমাতে হয়। এছাড়া বাচ্চারা ঘুমায় কয়েল জ্বালিয়ে। এখন প্রশ্ন হলো জানালা ছাড়া ছোট্ট ঘরে রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা কতখানি নিরাপদ।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ক্যাম্প এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ের নিচে জমে থাকা পানিতে শিশুরা খেলা করে। আর তাই পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে তারা। সবার আগে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সেতারা নামের এক শিক্ষিতা রোহিঙ্গা নারী জানান, ক্যাম্পে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। রোহিঙ্গাদের বাল্য বিয়ে ও উচ্চ জন্মহারের কারণে ক্যাম্পগুলোতে বেড়েই চলেছে অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান। এদের মধ্যে নেই কোনো শিক্ষা ও সচেতনতা। তাই প্রত্যেক এনজিওর উচিত ক্যাম্পে ডেঙ্গুবিষয়ক সেমিনার ও সচেতনতামূলক প্রচারণা।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, ক্যাম্পে এনজিওতে কর্মরত এনজিও কর্মীরা আসন্ন কোরবানি ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন। সেই সময় রোহিঙ্গাদের কোরবানির গরুর বর্জ্য এলাকার পরিবেশকে দূষিত করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কোনো এনজিও কর্মী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসে তাহলে তখনকার পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়েও ভাবতে হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে রোহিঙ্গা শিবিরে

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ সারাদেশের ন্যায় এবার কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। আর এতেই রোহিঙ্গাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। তবে এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কারোও ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েনি। আর ডেঙ্গু নিয়ে রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখ মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস। বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন, নির্যাতন-অত্যাচারের ফলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বিশ্ব সম্প্রদায় চরম নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এবার ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

জানা যায়, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও’র হয়ে কাজ করেন বরগুনার মমতাজ বেগম (৩০)। গত শুক্রবার (২ আগস্ট) গায়ে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে কোটবাজার অরজিন হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করতে আসেন তিনি। পরের দিন একই হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করতে আসেন স্থানীয় হলদিয়া পালং গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন (২০) নামের এক যুবক। উভয়ের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুর জীবাণুর অস্থিত্ব পাওয়া গেছে বলে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল করিম জানিয়েছেন।

এদিকে টেকনাফ মেরিন সিটি হাসপাতালেও একজন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান কহিনুর আক্তার। উখিয়া সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মেরাজ হোসেন চয়ন বলেন, আমরা এ পর্যন্ত উখিয়াতে দুই জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করেছি। তাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু জীবাণু সনাক্ত হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখানে যেসব ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেছে তা ক্ষতিকর নয়। তবু সতর্কতা অবলম্বন হিসাবে বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমাদের সকলকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার আলী আল রাজী বলেন, ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার ভয়ে গরমেও সারারাত কাটছে মশারির মধ্যে। কিন্তু মশারি টাঙিয়ে শুয়েও আতঙ্ক কাটছে না মানুষের। সেখানেও হাতে মশা মারার ব্যাট নিয়ে ঘুমাতে হয়। এছাড়া বাচ্চারা ঘুমায় কয়েল জ্বালিয়ে। এখন প্রশ্ন হলো জানালা ছাড়া ছোট্ট ঘরে রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা কতখানি নিরাপদ।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ক্যাম্প এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ের নিচে জমে থাকা পানিতে শিশুরা খেলা করে। আর তাই পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে তারা। সবার আগে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সেতারা নামের এক শিক্ষিতা রোহিঙ্গা নারী জানান, ক্যাম্পে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। রোহিঙ্গাদের বাল্য বিয়ে ও উচ্চ জন্মহারের কারণে ক্যাম্পগুলোতে বেড়েই চলেছে অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান। এদের মধ্যে নেই কোনো শিক্ষা ও সচেতনতা। তাই প্রত্যেক এনজিওর উচিত ক্যাম্পে ডেঙ্গুবিষয়ক সেমিনার ও সচেতনতামূলক প্রচারণা।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, ক্যাম্পে এনজিওতে কর্মরত এনজিও কর্মীরা আসন্ন কোরবানি ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন। সেই সময় রোহিঙ্গাদের কোরবানির গরুর বর্জ্য এলাকার পরিবেশকে দূষিত করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কোনো এনজিও কর্মী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসে তাহলে তখনকার পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়েও ভাবতে হবে।