প্রিন্স তালুকদারঃ
আবদুল মালেক হাওলাদার, পেশায় ছিলেন একজন রিকসাচালক। বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া সড়কের পাশে সরকারী জমিতে সামান্য কুড়েঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে ছিল তার বসবাস। ১ নাবালক ছেলে, ৪ মেয়ে আর স্ত্রীর পরিবারে রিকসাচালক আবদুল মালেক হাওলাদারই ছিল একমাত্র আয়ের উৎস। একদিকে সামান্য আয়ের সংসার এবং লেখাপড়ার খরচ চালানো, অন্যদিকে ঋণের বোঝায় অসহায় হয়ে দিন কাটাচ্ছিল রিকসাচালক আবদুল মালেক হাওলাদার। শরীরটাও তেমন ভাল যাচ্ছিল না, হয়তো অজানা কোন রোগ বাসা বেধেছিল। আশংকাই যে সত্যি হয়েছিল, কঠিন রোগ, নীরব মরনব্যাধী লিভার সিরোসিস হয়েছিল। দারিদ্রের নির্মম নিষ্ঠুর কষাঘাতে পিষ্ট এই পরিবারে যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ছিলো, হঠাৎই মৃত্যের কোলে ঢলে পড়ছিলো, রিকসাচালক আবদুল মালেক হাওলাদার। তবে কি ভেঙ্গে যাবে পরিবারটির বেচে থাকার স্বপ্ন? না, এগিয়ে আসলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”। মৃত রিকসাচালক আবদুল মালেক হাওলাদারের স্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন আর্থিক অনুদান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন মীরের (ইউপি সদস্য) সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক মাষ্টার মনিরুজ্জামান মনিরের সঞ্চালনায় প্রধান অথিতি, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির বরিশাল জেলার সাধারন সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ টিপু সুলতান আর্থিক অনুদান মৃত রিকসাচালক আবদুল মালেক হাওলাদারের স্ত্রী পরী বেগমের হাতে তুলে দেন। আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অথিতি সাবেক সংসদ সদস্য শেখ টিপু সুলতান তার বক্তাব্যে বলেন, পরের কারণে আজ স্বার্থ দিয়ে বলি, এ জীবন মনপ্রান দাও সকলি, তার মত সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা লয়া যাও। মানবসেবার সুখ উপলদ্ধি করে কবি কামিনী রায় তার পরার্থে কবিতায় এ লাইন দুটি লিখেছিলেন। পরের কারণে যে কাজ সে কাজের সুখ যদি কেউ একবার উপলদ্ধি করতে পারে তবে পৃথিবীতে অন্য সব সুখ বিলীন হয়ে যায়। আমি আশা করি, এলাকার ২১ তরুন মিলে সেই অনন্ত সুখের পথ ধরে হেঁটে চলবে “এইড বাংলা”। মানুষ সভ্য হয়ে উঠার আগে মানুষের মধ্যে বোধ শক্তি কাজ করতো, বর্তমান সময়ে আফ্রিকার জঙ্গলে যে বর্বর জাতি বাস করে হয়তো তাদের মাঝেও বোধ কাজ করে কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে তার কাছে বোধের চেয়ে চাহিদাটা বড় হয়ে উঠে। কেননা তার পরিবেশ তাকে সেভাবে তৈরি করেনি। এজন্য মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে আর এ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ গড়ে তোলার দ্বায়িত্ব আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। আমরা যদি একজন মানুষের প্রতি একটু মানবিক হই, একটু সদয় হই, তাহলে আমাদের দেখাদেখি সে ব্যক্তিটিও মানবিক হয়ে উঠবে। স্বাভাবিক ভাবেই সে কোন অপরাধের সাথে জড়িত হবে না। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে মানবতা, পরিপুষ্ট সুন্দর সোনালী সমাজ। বিশেষ অথিতি, দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল ব্যুরো প্রধান শাহিন হাফিজ বলেন, আমাদের নিজেদের মাঝে, সমাজে বা দেশে মানবতা ও মানবধিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রত্যেককে নিজ নিজ মতামতের উপর ভিত্তি করে নিজেদের বিবেককে সচেতন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের নোংরা বিবেকের কাছে মানবতা যাতে হেরে না যায় সেদিকে আমাদের প্রত্যেককে যথার্থভাবে খেয়াল রাখতে হবে তবে আমরা আমাদের দেশকে উপহার দিতে পারব মানবতাময় একটি জাতি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন মীর (ইউপি সদস্য) তার বক্তাব্যে বলেন, মানবতার কথা হয়তো আমরা সবাই বলতে পারি কিন্তু মন থেকে মানবতা নিয়ে কাজ করবে সেই ব্যক্তিগুলোরই আজ বড় অভাব। গ্রীষ্মের কর্মক্লান্ত দুপুরে কাজ শেষে যখন আমরা কোন গাছের নিচে বসে নির্মল বায়ু উপভোগ করি তখন আমাদের মনে নানা কল্পনা বাসা বাঁধে। কল্পনায় স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমাদের চোখে এক সময় ঘুম আসে বিধায় আমরা ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু ঘুম থেকে উঠি আমরা সেই কল্পনাময় স্বপ্নগুলোকে নিয়ে ভাবি না বিধায় মানবতা প্রতিষ্ঠায় স্বপ্নের সারথি হয়ে আমরা যে কাজ করার স্বপ্ন দেখি সে কাজ আমাদের করা হয় না। যদি মানবতা প্রতিষ্ঠার কাজ আমরা মন থেকে নিতে পারি এবং কাজে নিজেকে একটু হলেও বিলিয়ে দিতে পারি মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, তাহলেই দিয়ে মানবতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”র প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক মাষ্টার মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মাদার তেরেসা তার নোবেল পুরষ্কার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমরা যত দ্রুত সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে এগিয়ে যাচ্ছি তত দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছি নৈতিকতা বা মানবতার দিক থেকে। মানবতার মহান কাজগুলো থেকে মানুষ নিজেকে সংকোচিত করে নিচ্ছে। এজন্য মানব সভ্যতা আজ নৈতিকতা আজ হুমকির মুখে। মানবতার সেবা যে মহৎ সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজেও যে আতœসুখ লাভ করা যায় তা মাদার তেরেসা, লেডি অফ ল্যাম্প খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইনটিংগেইল আমাদের শিখিয়ে গেছেন। মানুষের সুখ হয়তো মরে যায়, সৃতি হয়তো ভুলে যায়, হয়তো অনেক কিছু পেয়েও সামান্য কিছু পাওয়ার অতৃপ্তি থেকেই যায় কিক্ত যে সুখ মনের নিবিড় ভাললাগা থেকে আসে সে সুখেই আত্মসুখ। যা কখনো হারিয়েও যায় না, মরেও যায় না। মানব সেবার এই মহান কাজ নিয়ে “এইড বাংলা” মানবতার মহান সেবায় একততা¡ ঘোষণা করে রাস্তার ধারের সবুজ কচি ঘাসের মত মানব সেবার পতাকা তোলে এক ঝাঁক সবুজ উল্লাসী টিয়ার ন্যায় মানবতার জয়গান করবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”র সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক প্রিন্স তালুকদার বলেন, এসো হাতে হাত ধরি আর্তমানবতার জন্য লড়ি এই শ্লোগানকে ধারণ করে অরাজনৈতিক ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”র পথচলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের দুর্দিনে পাশে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। উই শেয়ার স্মাইল, ধারনাটি মন ও মননে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে তারুণ্য নির্ভর এই সংগঠনটি। আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি নেতা মাষ্টার আনোয়ার হোসেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রমেত্রীর আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ টিপু সুলতানের রাজনৈতিক সচিব আলী হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া ওয়ার্ডের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি নেতা আবদুস সত্তার তালুকদার, অরাজনৈতিক ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”র সহ সভাপতি, ব্যাংক কর্মকর্তা কবির হোসেন, সহ সাধারন সম্পাদক দৈনিক ধানসিড়ির বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মাষ্টার সুমন মল্লিক, নির্বাহী সদস্য ব্লাড ডোনার খোকন কাজী, ব্যবসায়ী লিটন হাওলাদার, সাংবাদিক ফাহাদ হাসান, মাষ্টার সোহেল রানা, বাবুরবাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা তোফাজ্জেল হোসেন, মাওলানা সরোয়ার হোসেন, গ্রাম পুলিশ মুজাম্মেল কাজী, নাসির উদ্দিন, ছাত্রনেতা সুমন মোল্লা, হাফেজ শহিদুল ইসলাম, আরিফুর রহমান-১, সাংবাদিক ফয়ছাল আহম্মেদ, আরিফুর রহমান-২, হাবিবুর রহমান, মিলন হাওলাদার, আব্বাছ ঢালী, সুমন মাঝি, শাওন হাওলাদার প্রমুখ।
শিরোনাম :
মৃত রিক্সাচালকের পরিবারের পাশে দাঁড়াল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “এইড বাংলা”
- বার্তা কক্ষ
- আপডেট সময় : ০২:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯
- ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :