ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজা পালন আল্লাহর হুকুম যুগে যুগে নবী রাসুলদের রোজা পালনের ইতিহাস।

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯
  • ৬৪৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্মীয় ডেস্ক, ধানসিঁড়ি নিউজঃ

যুগে যুগে নবী-রাসুলদের রোজা পালনের ইতিহাসঃ
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র রমজানজুড়ে সিয়াম সাধনা তথা রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা শুধু ইসলামের অনুসারী উম্মাতে মুহাম্মাদির ওপরই ফরজ হয়নি বরং পৃথিবীর শুরু থেকেই এ রোজার প্রচলন ছিল। অনেক নবী-রাসুলের ওপর তা ছিল ফরজ।

রোজা পালনে আল্লাহর নির্দেশঃ

কুরআনে পাকের যে আয়াত দ্বারা উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, সে আয়াতেই আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

আলোচ্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা সব যুগের নবী-রাসুলদের জন্য রোজা রাখাকে আবশ্যক করে দিয়েছিলেন। ইসলামের আগে নবী-রাসুলদের রোজার কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

হজরত আদম আলাইহিস সালামের রোজাঃ

ফতহুল বারিতে এসেছে, ‘হজরত আদম আলাইহিস সালাস যখন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে জান্নাতের ফল খেয়েছিলেন তখন তিনি ৩০ দিন পর্যন্ত তাওবা করেছিলেন। ৩০ দিন পর আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন। তারপর থেকে তাঁর সন্তানদের জন্য ৩০টি রোজা ফরজ করে দেয়া হয়।

হজরত নূহ আলাইহিস সালামের রোজাঃ

দুনিয়ার প্রথম রাসুল ছিলেন হজরত নূহ আলাইহিস সালাম। সে সময়ও রোজার প্রচলন ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হজরত নূহ আলাইহিস সালাম শাওয়াল মাসের ১ তারিখ এবং জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম ও পরবর্তী যুগের রোজাঃ
আল্লাহতাআলা তাঁকে খলিল তথা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তাঁর যুগেও ৩০টি রোজা রাখা আবশ্যক ছিল।
তাঁর পরের যুগকে বলা হতো বৈদিক যুগ। সে ধারাবাহিকতায় বেদের অনুসারী ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত তথা উপবাস প্রথা চালু ছিল। তারা প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর একাদশী’র উপবাস করতো।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের রোজাঃ

আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ নাজিল করার আগে ৪০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে রোজা পালনে ক্ষুধা ও পিপাসায় ৪০ দিন অতিবাহিত করেছিলেন।
সে হিসেবে মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা পালনকে উত্তম বলে বিবেচনা করতেন। ৪০তম দিনে রোজা রাখাকে তারা ফরজ তথা আবশ্যক মনে করতো। আর তা ছিল তাদের সপ্তম মাসের (তাশরিন) দশম তারিখ। এ দশম দিন ছিল তাদের কাছে আশুরা।
এ আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে ১০ আহকাম দান করেছিলেন। আর এ কারণেই তাওরাতে ১০ তারিখ রোজা পালনের জন্য জোর তাগিদ করা হয়। এছাড়াও ইয়াহুদিদের অন্যান্য ছহিফাগুলোতেও অন্যান্য দিনে রোজা পালনের হুকুম পাওয়া যায়।
হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের রোজাঃ
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের পর আসমানি কিতাবের অধিকারী ছিলেন হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তাঁর যুগেও ছিল রোজার প্রচলন। তিনি একদিন পর একদিন রোজা রাখতেন। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) সে হিসেবে তিনি বছরের অর্ধেক সময় রোজা রেখে অতিবাহিত করতেন।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামে রোজাঃ
নিজেকে আসমানি কিতাবের ধারক হিসেবে তৈরি করতে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম কিতাব আসার আগে দীর্ঘ ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছিলেন।
৪০ দিন রোজা পালনের পর আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানি গ্রন্থ ইঞ্জিল দান করেন। আর খ্রিস্টান ধর্মে এখনও রোজা রাখার প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।
হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের রোজাঃ

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সমসাময়িক নবি ছিলেন হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম। তিনি নিজে রোজা রাখতেন এবং তার অনুসারীগণের মধ্যেও রোজা রাখার রীতি বিদ্যমান ছিল।
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের বর্ণনাঃ
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে তার অনুসারীরা জিজ্ঞাসা করতো যে, আমরা আমাদের অপবিত্র আন্তরসমূহকে পূতপবিত্র করতে কী করতে পারি? বা কিভাবে অন্তরসমূহকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করতে সক্ষম হবো?
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলেছিলেন, ‘অন্তরসমূহের কলুষতা ও অপবিত্রতাকে পবিত্র রাখতে রোজা এবং দোয়ার বিকল্প নেই। অন্তর পবিত্র করতে রোজা রাখার নসিহত করেছিলেন।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রোজা পালন আল্লাহর হুকুম যুগে যুগে নবী রাসুলদের রোজা পালনের ইতিহাস।

আপডেট সময় : ১২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯

ধর্মীয় ডেস্ক, ধানসিঁড়ি নিউজঃ

যুগে যুগে নবী-রাসুলদের রোজা পালনের ইতিহাসঃ
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র রমজানজুড়ে সিয়াম সাধনা তথা রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা শুধু ইসলামের অনুসারী উম্মাতে মুহাম্মাদির ওপরই ফরজ হয়নি বরং পৃথিবীর শুরু থেকেই এ রোজার প্রচলন ছিল। অনেক নবী-রাসুলের ওপর তা ছিল ফরজ।

রোজা পালনে আল্লাহর নির্দেশঃ

কুরআনে পাকের যে আয়াত দ্বারা উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, সে আয়াতেই আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

আলোচ্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা সব যুগের নবী-রাসুলদের জন্য রোজা রাখাকে আবশ্যক করে দিয়েছিলেন। ইসলামের আগে নবী-রাসুলদের রোজার কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

হজরত আদম আলাইহিস সালামের রোজাঃ

ফতহুল বারিতে এসেছে, ‘হজরত আদম আলাইহিস সালাস যখন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে জান্নাতের ফল খেয়েছিলেন তখন তিনি ৩০ দিন পর্যন্ত তাওবা করেছিলেন। ৩০ দিন পর আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন। তারপর থেকে তাঁর সন্তানদের জন্য ৩০টি রোজা ফরজ করে দেয়া হয়।

হজরত নূহ আলাইহিস সালামের রোজাঃ

দুনিয়ার প্রথম রাসুল ছিলেন হজরত নূহ আলাইহিস সালাম। সে সময়ও রোজার প্রচলন ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হজরত নূহ আলাইহিস সালাম শাওয়াল মাসের ১ তারিখ এবং জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত ইব্রাহীম আলাহিস সালাম ও পরবর্তী যুগের রোজাঃ
আল্লাহতাআলা তাঁকে খলিল তথা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তাঁর যুগেও ৩০টি রোজা রাখা আবশ্যক ছিল।
তাঁর পরের যুগকে বলা হতো বৈদিক যুগ। সে ধারাবাহিকতায় বেদের অনুসারী ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত তথা উপবাস প্রথা চালু ছিল। তারা প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর একাদশী’র উপবাস করতো।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের রোজাঃ

আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে আসমানি কিতাব ‘তাওরাত’ নাজিল করার আগে ৪০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে রোজা পালনে ক্ষুধা ও পিপাসায় ৪০ দিন অতিবাহিত করেছিলেন।
সে হিসেবে মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা পালনকে উত্তম বলে বিবেচনা করতেন। ৪০তম দিনে রোজা রাখাকে তারা ফরজ তথা আবশ্যক মনে করতো। আর তা ছিল তাদের সপ্তম মাসের (তাশরিন) দশম তারিখ। এ দশম দিন ছিল তাদের কাছে আশুরা।
এ আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে ১০ আহকাম দান করেছিলেন। আর এ কারণেই তাওরাতে ১০ তারিখ রোজা পালনের জন্য জোর তাগিদ করা হয়। এছাড়াও ইয়াহুদিদের অন্যান্য ছহিফাগুলোতেও অন্যান্য দিনে রোজা পালনের হুকুম পাওয়া যায়।
হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের রোজাঃ
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের পর আসমানি কিতাবের অধিকারী ছিলেন হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তাঁর যুগেও ছিল রোজার প্রচলন। তিনি একদিন পর একদিন রোজা রাখতেন। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) সে হিসেবে তিনি বছরের অর্ধেক সময় রোজা রেখে অতিবাহিত করতেন।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামে রোজাঃ
নিজেকে আসমানি কিতাবের ধারক হিসেবে তৈরি করতে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম কিতাব আসার আগে দীর্ঘ ৪০ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছিলেন।
৪০ দিন রোজা পালনের পর আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানি গ্রন্থ ইঞ্জিল দান করেন। আর খ্রিস্টান ধর্মে এখনও রোজা রাখার প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে।
হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের রোজাঃ

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সমসাময়িক নবি ছিলেন হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম। তিনি নিজে রোজা রাখতেন এবং তার অনুসারীগণের মধ্যেও রোজা রাখার রীতি বিদ্যমান ছিল।
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের বর্ণনাঃ
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে তার অনুসারীরা জিজ্ঞাসা করতো যে, আমরা আমাদের অপবিত্র আন্তরসমূহকে পূতপবিত্র করতে কী করতে পারি? বা কিভাবে অন্তরসমূহকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করতে সক্ষম হবো?
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে বলেছিলেন, ‘অন্তরসমূহের কলুষতা ও অপবিত্রতাকে পবিত্র রাখতে রোজা এবং দোয়ার বিকল্প নেই। অন্তর পবিত্র করতে রোজা রাখার নসিহত করেছিলেন।