ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবদেহে প্রয়োগ হলো করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১১:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০
  • ৪০৩ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন।

প্রথমবারের মতো দুজনের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এদের একজন হলেন এলিসা গ্রানাতু নামে এক বিজ্ঞানী। আরও প্রায় ৮০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে।

অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক সারা গিলবার্ট জানান, তিনি নিশ্চিত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই প্রতিষেধক কাজ করবে।

ইবোলার প্রতিষেধক তৈরিতে দিশা দেখানো গিলবার্ট বলেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধকের কাজ করবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি এটিই প্রথম ভ্যাকসিন।

বিশ্বের ২১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন চূড়ান্তভাবে মানবদেহে প্রয়োগের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছেন। এ জন্য ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা।

এক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাউথাম্পটন এবং ব্রিসটল চিলড্রেনস ভ্যাকসিন সেন্টারে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এসব সেন্টারে যেসব স্বেচ্ছাসেবী পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগে অংশ নেবেন তাদের ১৯০ থেকে ৬২৫ পাউন্ড দেয়া হবে।

এদিকে বুধবার এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ব্রিটিশ সরকার বিজ্ঞানীদের অতিরিক্ত ২০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে। এছাড়া লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের একটি প্রজেক্টের জন্য আরও ২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এই মুহূর্তে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি গবেষক দল কাজ করছেন। এর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চালিয়েছে। গত মাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালান যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বিজ্ঞানীরা। চীনেও একটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।

সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটে তৈরি করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রথম ডোজ গ্রহণের মাধ্যমেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে।

এর ফলে যারা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন তাদের শরীরে সংক্রমণের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। এমনকি এটি শিশুদের জন্যও নিরাপদ। শুধু তাই নয় ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি এবং বয়স্কদের জন্যও এটা নিরাপদ।

তিন দফায় এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জনকে প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। যদি প্রথম দফা সফল হয় তবে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। চূড়ান্তভাবে তৃতীয় দফায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি করোনার একটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সবুজ সংকেত পেয়েছে। জার্মানির সরকারের অনুমোদন পাওয়ায় শিগগিরই করোনার এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।

১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ ২০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান বলেছেন, এটি একটি ভালো লক্ষণ যে, জার্মানিতে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা এগিয়ে চলছে। আমরা ভ্যাকসিনটির প্রথম পরীক্ষা চালাতে পারি।

সূত্র: জাগোনিউজ

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

মানবদেহে প্রয়োগ হলো করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন

আপডেট সময় : ১১:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০

নিউজ ডেস্ক: মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন।

প্রথমবারের মতো দুজনের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এদের একজন হলেন এলিসা গ্রানাতু নামে এক বিজ্ঞানী। আরও প্রায় ৮০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে।

অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক সারা গিলবার্ট জানান, তিনি নিশ্চিত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই প্রতিষেধক কাজ করবে।

ইবোলার প্রতিষেধক তৈরিতে দিশা দেখানো গিলবার্ট বলেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধকের কাজ করবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি এটিই প্রথম ভ্যাকসিন।

বিশ্বের ২১০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন চূড়ান্তভাবে মানবদেহে প্রয়োগের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছেন। এ জন্য ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা।

এক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাউথাম্পটন এবং ব্রিসটল চিলড্রেনস ভ্যাকসিন সেন্টারে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এসব সেন্টারে যেসব স্বেচ্ছাসেবী পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগে অংশ নেবেন তাদের ১৯০ থেকে ৬২৫ পাউন্ড দেয়া হবে।

এদিকে বুধবার এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, বিশ্বের প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ব্রিটিশ সরকার বিজ্ঞানীদের অতিরিক্ত ২০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে। এছাড়া লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের একটি প্রজেক্টের জন্য আরও ২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এই মুহূর্তে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি গবেষক দল কাজ করছেন। এর মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চালিয়েছে। গত মাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালান যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের বিজ্ঞানীরা। চীনেও একটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।

সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউটে তৈরি করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রথম ডোজ গ্রহণের মাধ্যমেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে।

এর ফলে যারা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন তাদের শরীরে সংক্রমণের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। এমনকি এটি শিশুদের জন্যও নিরাপদ। শুধু তাই নয় ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি এবং বয়স্কদের জন্যও এটা নিরাপদ।

তিন দফায় এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জনকে প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। যদি প্রথম দফা সফল হয় তবে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। চূড়ান্তভাবে তৃতীয় দফায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি করোনার একটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সবুজ সংকেত পেয়েছে। জার্মানির সরকারের অনুমোদন পাওয়ায় শিগগিরই করোনার এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।

১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ ২০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান বলেছেন, এটি একটি ভালো লক্ষণ যে, জার্মানিতে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা এগিয়ে চলছে। আমরা ভ্যাকসিনটির প্রথম পরীক্ষা চালাতে পারি।

সূত্র: জাগোনিউজ