নিউজ ডেস্ক: বাবার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে চাচার বাড়ি-মামার বাড়ি ঘুরছেন ছেলে। উদ্দেশ্য বাবার লাশ যেন সুষ্ঠুভাবে দাফন করা যায়। সবার এক কথা, তোমার বাবা করোনায় মারা গেছেন। এখানে দাফন তো দূরের কথা, লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোও যাবে না।
মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে অসুস্থ আব্দুল হাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তার স্ত্রী ও ছেলে। পথে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে মারা যান আব্দুল হাই। তারপর তার লাশ নিয়ে চরম ভোগান্তি পড়েন স্ত্রী ও ছেলে। করোনার গুজব ছড়িয়ে বাবার বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা লাশ গ্রহণে চরম আপত্তি জানায়। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স থেকে লাশ পর্যন্ত নামাতে দেয়া হয়নি। উল্টো মা-ছেলেকে মেরে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ
লাশ গ্রহণ করেনি মামার বাড়ির স্বজনরাও। এমন অবস্থায় ভ্যান গাড়িতে বাবার লাশ চরম হতাশায় মগ্ন ছিলেন ছেলে। ঠিক সেই মুহূর্তে খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় বাবার বাড়ির কবরস্থানেই দাফন হয় আব্দুল হাইয়ের লাশ।
পৌরসভার সাতুতি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আবদুল হাই। স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ও ছেলে শাহজাহানের সঙ্গে গাজীপুরের স্কোয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় থাকতেন আবদুল হাই। শাহজাহান সেখানের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। আর আবদুল হাই শারীরিকভাবে সবল না থাকায় সড়কের পাশে বসে বরই বিক্রি করতেন।
গত কয়েক বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন আবদুল হাই। তার সঙ্গে মাস খানেক ধরে প্রস্রাবের সমস্যা নতুন করে যুক্ত হয়। বেশি সমস্যা দেখা দেয়ায় সোমবার আবদুল হাইকে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয় স্ত্রী-ছেলে।
সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কয়েকটি টেস্ট দেয়া হলে রোববার মঙ্গলবার ফলাফল দেয়ার কথা ছিলো। সে কারণে রোগীকে বাড়িতে চলে যেতে বলে দেয়। ওই অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে আবদুল হাইকে বাড়ি নিয়ে ফেরার পথে তার মৃত্যু হয়। সোমবার রাত ১১টার দিকে লাশ নিয়ে বাড়িতে যায় স্ত্রী-সন্তান।
লাশ গাড়িতে রেখে শাহজাহান বাবার লাশ নামাতে অনুরোধ করে চাচা আবদুল কাইয়ুম, চাচাতো ভাই ফারুক, রফিক, সাইফুল ও রিপনকে। অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ আসায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে লাশ নামাতে বাধা দেয়। নিজের ভিটেতে লাশ দাফনের কথা জানিয়ে অনেক অনুরোধ করেন ফিরোজা খাতুন। কিন্তু আবদুল হাইয়ের লাশ কোনোভাবেই বাড়িতে রাখতে দেয়নি স্বজনরা। লাশ রাখতে বেশি জোর করায় ফিরোজা খাতুন ও তার ছেলেক মারধর করে লাশ নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
পরে লাশ নিয়ে কলতাপাড়া এলাকার তাতকুড়া ঘুরে গৌরীপুর বাজারে চলে আসেন। অ্যম্বুলেন্সে লাশ রেখে শাহজাহান গৌরীপুর ইউপির কোনাপাড়া গ্রামে যায়। সেখানেও ঘটনার বিস্তারিত বলে লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে এক আত্মীয়ের একটি ভ্যানগাড়ি এনে সেই ভ্যানে লাশ রেখে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়।
রাত ২টায় আবদুল হাইয়ের লাশ নিয়ে স্ত্রী-সন্তান অবস্থান নেয় গৌরীপুর পৌর বাজারের ধান মহালে। এ খবর জানানো হয় থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিনকে।
ওসি বোরহান উদ্দিন তাৎক্ষণিক ইউএনও সেঁজুতি ধরকে বিষয়টি জানান। রাতেই ইউএনওকে নিয়ে ওসি আবদুল হাইয়ের বাড়িতে যান। সেখানে স্বজনদের বুঝিয়ে লাশ বাড়িতে প্রবেশ ও দাফন কার্য সম্পাদনে রাজি করান। পরে ভোরে লাশ যায় বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে জানাজা শেষ দাফন হয় আবদুল হাইয়ের লাশ।
আবদুল হাইয়ের ছেলে শাহজাহান বলেন, তার বাবা প্রস্রাবের সমস্যা থাকায় ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হওয়ায় তাদের বাড়িতে চলে যেতে বলে চিকিৎসক। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে তার বাবা মারা যায়। লাশ বাড়িতে নিয়ে চাচা ও চাচাতো ভাইদের লাশ নামাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাদের মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, স্বামীর লাশ নিয়ে বাড়িতে কাছে গেলে লাশ নামতে বাধা দেয়। ওই অবস্থায় নিজের ভিটেতে লাশ দাফন করবেন বলে জানান। কিন্তু ভাতিজারা খারাপ আচরণ করে।
গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে লাশ বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। মারধর করে লাশ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় স্ত্রী ও ছেলে। করোনাভাইরাসে মারা গেছে এমন গুজব রটানো হয়।
শিরোনাম :
বাবার লাশ নিয়ে স্বজনদের দ্বারে দ্বারে ছেলে, এগিয়ে এলো পুলিশ
- বার্তা কক্ষ
- আপডেট সময় : ০৮:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মে ২০২০
- ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ