ধানসিঁড়ি নিউজ ডেস্ক // অটোচালক জাকির হত্যার অন্যতম ঘাতক জামাল মাঝিকে অবশেষে বিমান বন্দর থানা পুলিশ আটক করেছে। হত্যা কান্ডের ৪৮ ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার আগেই গতকাল শনিবার ৯ মে গভীর রাতে শহরতলীর ইছাকাঠী গ্রামে অবস্থান কালে পুলিশ তাকে ধরতে সক্ষম হয়। এ সময় জামাল গাজী একজন সেনাকর্মকর্তার বাসায় অবস্থান করছিলেন।
আজ রবিবার ১০ মে সকালে বরিশাল জুডিশিয়াল আদালতে জামাল গাজী তার অপর দুই ভাই একত্রিত হয়ে একই পেশায় নিয়োজিত অটোচালক জাকিরকে কিভাবে এবং কি কারণে হত্যা করলো, তার স্ববিস্তার বর্ণনা দিয়েছে। এই আটক অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া বিমান বন্দর থানার অপারেশন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৮ মে সকালে ঘটে ঘটনার সূত্রপাত। রহমতপুর রামপট্টি স্থান থেকে নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড রুটে অটোতে কে আগে যাত্রী তুলবে তা নিয়ে জাকিরের সাথে কামাল মাঝির তর্ক থেকে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এক পর্যায় উত্তেজনা শেষে জাকির গাজী তার অটোতে যাত্রী নিয়ে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে রওনা দিলে কামাল গাজী তার অপর দুই বড় ভাই ফিরোজ মাঝি ও জামাল মাঝিকে ঘটনা অবহিত করে প্রতিশোধ নিতে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিতে বলে। অটো চালক হিসেবে একই পেশায় নিয়োজিত তিন ভাই একত্রিত হয়ে সেখানে আগত জাকিরকে অটো থেকে নামিয়ে প্রহার শুরু করে। প্রথম আঘাত করে ছোট ভাই কামাল মাঝি। এতে জাকির কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পরলেও ফিরোজ ও জামাল উপযুপরি আঘাত করতে থাকে। ঘটনাস্থলেই হামলার কবলে পরা এই অটো চালকের মৃত্যু ঘটে। অবশ্য পরে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিহত জাকিরের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামে।
নিহতের ভাই আমির হোসেন গাজী ঘটনার পর দিন অর্থাৎ গত ৯ মে বিমান বন্দর থানায় হত্যার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। কামালকে প্রধান ও জামাল দ্বিতীয়, বড় ভাই ফিরোজকে ৩ নম্বর এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫জনকে মামলায় আসামী করা হয়।
এমন একসময় এই অটো চালক হত্যাকান্ডের শিকার হলো যখন শেবাচিমের চিকিৎসক ডা. এম এ আজাদ সজলের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যে তোরজোর চলছিল। প্লাস্টিক ও বার্ন বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের মৃত্যুদেহ তার নিজ চেম্বার নগরীর কালীবাড়ি সড়কের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিফটের নিচ থেকে ২৮ এপ্রিল পুলিশ উদ্ধার করে।
অন্যদিকে এর একদিন পর ২৯ এপ্রিল রাতে মুলাদীতে ইমরান নামক কাতার প্রবাসী এক যুবককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় বরিশাল জেলা পুলিশ ঘাতকদের সন্ধানে মাঠে নামে। আলোচিত এই দুইটি হত্যাকান্ডের মধ্যকার মুলাদীর ইমরান হত্যার ঘাতককে চিহ্নিত ও আটক করতে সক্ষম হলেও চিকিৎসক সজলের মৃত্যুর রহস্য এখনো অনুদঘাটিত। এ নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে জোর তদন্ত চলছে। তখন বরিশালে প্রকাশ্যে অটো চালক জাকির হত্যাকান্ডে জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে এক ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।
একটি সূত্র জানায়, বিমান বন্দর থানা পুলিশের চৌকাস কর্মকর্তা ওসি অপারেশন মোস্তাফিজুর রহমান অটো চালক হত্যার তিন ঘাতককে আটকে জালবিস্তার করেন। একদিনের ব্যবধানে সাফল্যও পেয়ে যায়। এ সংক্রান্তে মামলা করে বাদী বাড়ি ফেরেন ওই দিন গভীর রাতে কাশিপুরের ইচ্ছাকাঠী গ্রামে দুই নম্বর আসামীর অবস্থান জানতে পেরে অভিযান চালায় বিমান বন্দর থানা পুলিশ। মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম উল্লেখিত গ্রামের কর্নেল নূর হোসেন বাবুর বাড়ি থেকে জামাল মাঝিকে আটক করতে সক্ষম হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, সম্পর্কে ছোট জামাল মাঝি ও মেঝ কামাল মাঝি এই সেনা কর্মকর্তার বাড়িটির কেয়ারটেকার হিসেবে দেখাশুনার পাশাপাশি তারা সেখানে বসাবাস করতেন। অপর আসামী বড় ভাই ফিরোজ কাশিপুরের ভাড়া বাসায় থাকেন।
গোষ্ঠীতে মাঝি পদবী ফিরোজের আদি বাড়ি ভোলার নতুন উপজেলা শশীভূষণের করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় অটো চালক তিন ভাই দীর্ঘদিন ধরে স্ব-পরিবারে তাদের বরিশালে বসবাস। জাকির গাজী হত্যাকান্ডের পর তিন ভাই আত্মগোপন করে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, তারা বরিশাল শহরের আশপাশেই অবস্থান করছিল। গতকাল শনিবার জামাল মাঝি গোপনে বাসায় ফিরেন। এ খবর পৌছে যায় বিমান বন্দর থানার ওসি অপারেশন কর্মকর্তার কাছে। আজ রবিবার আটক জামাল মাঝিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করলে বিচারক পলি আফরোজের কাছে হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সেখানে উঠে আসে হত্যার পৈশাচিক বিবরণ।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায় সেনা কর্মকর্তা নূর হোসেন বাবু তার বাড়ি থেকে হত্যার ঘাতক সম্পর্কে কোন মন্তব্য বা তদবির থেকে বিরত ছিলেন। বর্তমানে এই সেনা কর্মকর্তা কর্নেল পদাধিকার নিয়ে পটুয়াখালীর দুমকী লেবুখালী সংলগ্ন সেনা ক্যান্টেম্যান্টে কর্মরত রয়েছেন।
তথ্য ও সূত্রঃ দৈনিক খবর বরিশাল.কম