নিউজ ডেস্ক: মাত্র ৩শ’ টাকার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট বদলে ফেললো একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মেহেন্দিগঞ্জ থেকে আসা এক যুবক। ওই যুবক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট অনুসারে দুটি সন্তানের আশা করলেও বাস্তবে ঘটেছে ঠিক তার উল্টো। বিষয়টি নিয়ে যখন বিপত্তি বাঁধে তখন ভুল স্বীকার করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। ওদিকে যথারীতি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে শিশু চুরির অভিযোগ আনেন মেহেন্দিগঞ্জের সেই যুবক।
তবে ৩শ’ টাকার জন্য রিপোর্ট ভুল করেছে বলে দায় স্বীকার করে নিলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। শুধু ওই যুবক নয়, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টাকা বেশি আদায়ের জন্য এর আগেও একাধিকবার রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নের পূর্বহান্নি গ্রামের প্রবাস ফেরত বাসিন্দা মামুন হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ৮ মে শুক্রবার প্রসব বেদনা উঠলে স্পীডবোটযোগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন মামুন।
ওই দিন রাতে গুরুতর ব্যাথা থাকায় শনিবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য বলেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। সে নির্দেশনা অনুসারে হাসপাতালের সামনে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শনিবার সকাল ১০ টায় আল্ট্রাসনো করান মামুন হোসেনের স্ত্রী। মামুন হোসেন জানান, আল্ট্রাসনোর জন্য নির্ধারিত এক হাজার টাকা বিল পরিশোধ করার পর আল্ট্রাসনো রুমে নেন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীরা।
কিছুক্ষণ পর আমাকে আল্ট্রাসনো রুমে ডেকে নিয়ে জানানো হয় আরও ৩শ’ টাকা বেশি দিতে হবে। কারণ তার স্ত্রীর গর্ভে যমজ সন্তান। একই সাথে আল্ট্রাসনো করা চিকিৎসক জানান, গর্ভে যেহেতু দুই সন্তান সে কারণে দুইটি আল্ট্রাসনোর সমান অর্থাৎ দুই হাজার টাকা বিল আসতো। কিন্তু যেহেতু করে ফেলেছেন সেখানে আরও ৩শ’ টাকা দিতে হবে। এ সংবাদ শুনে মামুন হোসেন আনন্দে উদ্বেলিত হন। রিপোর্ট নিয়ে শেবাচিমে জমা দিলে সেখানের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, যমজ সন্তান হওয়ায় নরমাল ডেলিভারি সম্ভাব না। এ কারণে সিজারিয়ান করতে হবে। রিপোর্ট অনুসারে বিকেল ৫টায় সিজারিয়ান শুরু করেন শেবাচিমের চিকিৎসকরা।
মামুন জানান, কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটারে আমাকে ডেকে নিয়ে দেখায় যমজ নয়, মাত্র একটি সন্তান হয়েছে। আমি রিপোর্ট দেখিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে রুম থেকে বের করে দেন। আমি মনে করেছি শেবাচিমে আমার একটি সন্তান চুরি হয়ে গেছে। তাই সেই রিপোর্ট নিয়ে পরিচালকের কক্ষে যোগাযোগ করি। তারা বিষয়টি দেখে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলেন।
সেখানে গিয়ে সবিস্তারে কথা বললে প্রথমে রিপোর্ট ঠিক আছে বলে জানায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে বেড়িয়ে আসে আসল সত্য। তিনি বলেন, “আমি আমার স্ত্রীর পূর্বের করা আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট দেখাই। একই সাথে থানায় অভিযোগ দেয়ার কথা বলি। এতে করে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টার তার ভুল মেনে নেয়। একই সাথে আমাকে ৩শ’ টাকা ফেরত দিতে চায়।”
রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতারণার ফাঁদে পরা মামুন হোসেন বলেন, মাত্র ৩শ’ টাকার জন্য এত বড় প্রতারণার শিকার আমি কোথাও হয়নি। এমনকি ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দায়িত্বরত কর্মচারীরা আমাকে হাসপাতাল থেকে নামিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়। তারা জানায়, চিকিৎসা নিতে আসলে একটু বেশি টাকা দিতে হয়, এটা নিয়ম।
এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ডাক্তারদের বলে শেবাচিম থেকে নাম কেটে দিবে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মামুন বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টার যদি ভুল রিপোর্ট না দিতো তা হলে সিজারিয়ানেরমত ক্ষতিকর অপারেশন করার সিদ্ধান্ত আমি নিতাম না।
তাদের ভুল রিপোর্টের কারণে আমি শুধু হয়রানির শিকার নয়, আমার স্ত্রীর ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিশেষ কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি, একই সাথে স্বীকার করেছেন তাদের কাজে ভুল হয়েছে।
এই ধরণের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অচিরেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট: