নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে সাত দফায় ছুটি বাড়লো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার উপসচিব মোহম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই আদেশে সাধারণ ছুটি চলাকালীন ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-
১. আগামী ১৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটিকালীন জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা/সীমিত থাকবে। ২১ মে (শব-ই-কদরের সরকারি ছুটি), ২২,২৩,২৯ ও ৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪,২৫ ও ২৬ মে (ঈদ-উল-ফিতরের সাধারণ/সরকারি ছুটি) এ ছুটি/ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২. সাধারণ ছুটি এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা হতে অন্য জেলা এবং এক উপজেলা হতে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলাপ্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৫টা হতে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদাহ দাফন/ সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না।
৩. সাধারণ ছুটি/চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণের ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনামালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
৪. রমজান এবং ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে দোকান-পাটে ক্রয় বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহনসমূহকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। দোকানপাট এবং শপিংমলসমূহ আবশ্যিকভাবে বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
৫. সাধারণ ছুটি/চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালীন জরুরি পরিসেবা, যেমন-বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থল বন্দর, নদীবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ ছুটির বাইরে থাকবেন।
৬. সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে।
৭. কৃষি পণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
৮. চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ঔষধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহস ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেক্ট্রেনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীগণ এ সাধারণ ছুটি/চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওয়া বহির্ভূত থাকবেন।
৯. ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপ্রালন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করতে হবে।
১১. সাধারণ ছুটি/চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালীন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।
১২. রমজান, ঈদ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
১৩. সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসসমূহ প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেইসঙ্গে তাদের অধিক্ষেত্রে কার্যাবলী পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং আওতাধীন অফিস সমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
১৪. উক্ত সাধারণ ছুটি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে এবং মহাসড়কে মালবাহী/জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৫. আসন্ন ঈদ উল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও বর্তমানে বিদ্যমান বিধি- বিধান প্রযোজ্য হবে। উন্মুক্ত স্থানে বড় জামায়েত পরিহার করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। ছুটি তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। আরেক দফায় ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ এই ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন আবার নতুন ছুটির সিদ্ধান্ত হলো।