ধানসিঁড়ি নিউজঃ
আমরা মুখে বলি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু আমাদের চারপাশেই এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা মধ্যম আয় তো দূরের কথা; তিনবেলা খাওয়ার কথাও ভাবতে পারেননা। পরিবারের মুখে কীভাবে দুবেলা খাবার তুলে দেবেন- সেই চিন্তার কোনো কূল-কিনারা পাননা তারা। তেমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সোশ্যাল সাইটে তুলে ধরেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম।
শুক্রবার রাতে সোশ্যাল সাইটে জাহিদুল ইসলামের দেওয়া স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কী তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম।
কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসল। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বলল,;স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল;স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল। আমার খটকা লাগল,আমি জিজ্ঞেস করলাম ;দুধ? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন?
সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।
আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…! কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে..! হয়ত আমি ভালো চাকুরী করে আজ ভালো আছি; কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়! এর দায়ভার কার?