ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধানের মূল্যে কম, শ্রমের মূল্য বেশি, সেই ধান কেড়ে নিল কৃষকের হাসি।

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০১৯
  • ৪২৪ বার পড়া হয়েছে

ধানসিঁড়ি নিউজঃ
ধানের মূল্যে কম, শ্রমের মূল্য বেশি, সেই ধান কেড়ে নিল কৃষকের হাসি।

কথায় বলে, “খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি” ধানের দামের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি, দিশেহারা কৃষক।

ধানের ন্যায় মূল্য না পেয়ে কালিহাতীর বানকিনায় পাকা ধানে আগুন দিলেন কৃষক।
টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকায়। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের দিন মজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুণতে হচ্ছে লোকসান। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আব্দুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকায় তিনি ধানক্ষেতে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। মালেক সিকদারের এই প্রতিবাদে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষক। পাকা ধানে আগুন দেখে অনেকেই ছুটে আসেন। এ বিষয়ে মালেক সিকদার বলেন, ‘প্রতিমণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরীর দাম দ্বিগুণ। এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।’
এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেত মালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।
কোথাও কোথাও প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়।ল আর ধান কাটতে শ্রমিকের দিনমজুরী ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে তাদের ধানের জমির মালিককে তিনবেলা খাবারও দিতে হয়।
রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষী বলেন, ‘বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।’
এছাড়া আরও কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’
কৃষি নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। লাভ তো দূরের কথা ধান চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে বিপুল পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন পাকা ধানক্ষেতে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।’

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ/২০২৫ খ্রি. এর শুভ উদ্বোধন।

ধানের মূল্যে কম, শ্রমের মূল্য বেশি, সেই ধান কেড়ে নিল কৃষকের হাসি।

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০১৯

ধানসিঁড়ি নিউজঃ
ধানের মূল্যে কম, শ্রমের মূল্য বেশি, সেই ধান কেড়ে নিল কৃষকের হাসি।

কথায় বলে, “খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি” ধানের দামের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি, দিশেহারা কৃষক।

ধানের ন্যায় মূল্য না পেয়ে কালিহাতীর বানকিনায় পাকা ধানে আগুন দিলেন কৃষক।
টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকায়। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের দিন মজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুণতে হচ্ছে লোকসান। ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আব্দুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকায় তিনি ধানক্ষেতে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। মালেক সিকদারের এই প্রতিবাদে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার অধিকাংশ কৃষক। পাকা ধানে আগুন দেখে অনেকেই ছুটে আসেন। এ বিষয়ে মালেক সিকদার বলেন, ‘প্রতিমণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরীর দাম দ্বিগুণ। এবার ধান আবাদ করে আমরা মাঠে মারা পড়েছি। তাই মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছি।’
এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ ক্ষেত মালিককে দিয়ে দিচ্ছেন।
কোথাও কোথাও প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়।ল আর ধান কাটতে শ্রমিকের দিনমজুরী ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে তাদের ধানের জমির মালিককে তিনবেলা খাবারও দিতে হয়।
রকিবুল ইসলাম নামের এক চাষী বলেন, ‘বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছি তার অর্ধেক দামে। এবার আমরা পথে বসে গেছি।’
এছাড়া আরও কয়েকজন কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিয়ে বাঁচাতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।’
কৃষি নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে কৃষকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। লাভ তো দূরের কথা ধান চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে বিপুল পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন পাকা ধানক্ষেতে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।’