রাষ্ট্র দর্শনে এরিস্টটল যে সকল মতবাদ ব্যক্ত করেছন তার মধ্যে দাসতত্ত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরিস্টটল তার চিন্তাধারায় এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে এই দাসতত্ত্ব। তিনি বলেন, প্রভূ ও দাসের মধ্যে যে ব্যবধান বিদ্যমান তা শুধু আইনগত ব্যবধানই নয় বরং তা স্বাভাবিক ও ন্যায়ভভিত্তিক ও বটে।
এরিস্টটল তাঁর দাসতত্ত্বে ঘোষণা করেন যে, দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি এবং এই নীতি হচ্ছে আদেশ ও আনুগত্যের এক সফল সমন্বয়। মানবিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যেই এই সমন্বয়ের সূচনা।
দাস ও প্রভূ সম্পর্কে এরিস্টটলের বক্তব্যঃ
এরিস্টটল দাসতত্ত্বের স্বপক্ষে যুক্তি দানের পূর্বে তিনি দাস ও প্রভূ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরিস্টটলের মতে কিছু লোক প্রজ্ঞার অধিকারী হয় এবং এই প্রজ্ঞার বলে তারা শুধু আদেশ প্রদানেই সক্ষম। পক্ষান্তরে বেশির ভাগ লোক শুধু দৈহিক বলে বলিয়ান এবং দৈহিক বলের কারনে তারা শুধু কায়িক পরিশ্রমে সক্ষম। তাদের মধ্যে প্রজ্ঞার অভাব থাকায় তারা আদেশ প্রদানে অক্ষম। তাদের একমাত্র যোগ্যতা তারা প্রজ্ঞাবানদের আদেশ মান্য করে তদানুযায়ী কাজ করে যাবে। তাঁর মতে প্রথম শ্রেণীর লোকেরা হচ্ছেন প্রভূ (Master) আর দ্বিতীয় শ্রেনীর লোকেরা হচ্ছে দাস (Slaves)। প্রভূরা যুক্তি বা আত্মার প্রতিনিধি আর দাসরা লালসা বা দেহের প্রতিনিধি। প্রকৃতিগত ভাবে যেহেতু দেহ আত্মার অধীন,অনুরুপ কারনে দাস প্রভূর অধীন। অতএব,প্রভূ ও দাসের মধ্যে যে সম্পর্ক তা উত্তম ও অধমের সম্পর্ক।
অবশ্য এই তত্ত্বের ও রয়েছে প্রচুর সমালোচনা ও বিরোধী মতবাদ। তা অন্যএক সময়ে আলোচনা করব আশা রাখি।
এতদিন পরে এই কথাগুলো মনে করার প্রয়োজন ছিল বিধায় কিছু কথা স্মরণ করানোর চেষ্টা করলাম।
আমরা জানি “God has made all free, Nature has made a man slave.”
বর্তমান সময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের আধিপত্য, মহারাজত্ব, গোড়ামী, নষ্টামী প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজও মানুষকে তাদের দাস বানিয়ে রেখেছেন, রাখতে চাচ্ছেন অলিখিত ভাবে।
বর্তমান সময়ে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন তার অধঃস্তনের সাথে দাস মনিব খেলা খেলে।
আর এই অন্যায়ের সুযোগ পায় বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই।
স্কুল জীবনের প্রথম দিনে প্রতিটি মানুষের মনে থাকে রঙ্গিন স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়ে তাদের পড়াশুনা শুরু হয়। পড়াশুনার স্তর বাড়তে বাড়তে একসময় শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনায় কেউ হয় দাস আর কেউ হয় প্রভূ।
একটু খোলাসা করে বললে, একই ডিগ্রিধারী হয়েও একজন হয় ডাক্তার আর একজন কেরানি একজন হয় ইঞ্জিনিয়ার আর একজন পিয়ন। সমসাময়িক সময়েই একজন হয়ে যায় প্রভু আর একজন হয়ে যায় গোলাম।
বর্তমান বাংলাদেশে বিএসসি, বিএসএস এবং এমবিবিএস এর মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। পাশ করার পরে উপযুক্ত চাকুরি না পেলে প্রথম দুই ডিগ্রিধারী তৃতীয় জনের এক প্রকার দাসে পরিনত হয়। কোন কারনে তাদের চেম্বারে যদি যেতে হয়। আর স্যার না বলে যদি ভাই বা অন্য কিছু সম্বোধন করেন তবে বুঝতে পারবেন প্রভুর আসল রুপ।
যদিও উপযুক্ত পরিবেশ এবং সাহচর্য পেলে প্রথম দুই ডিগ্রিধারী ও তৃতীয় ভাগ্যবানদের কাতারে যেতে পারতেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক সর্বোচ্চ ক্যাডার বিসিএস এ তৃতীয় দলের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আর সাধারন ছাত্র/ছাত্রীরা যুদ্ধ করে এক অসম প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতায় হয়তো কেউ কেউ জিতেও যায়। আর যারা হেরে যায় তারা পুরো জীবনের সাথেই হেরে গেল।
কারন বিএসসি, এমএসসি সম্পূর্ণ করে বিসিএসের দৌঁড়ে হেরে আপনি যদি সরকারি চাকুরী না পান তাহলে কি করবেন? হয়তো পিয়ন, নয়তো কেরানি অথবা অন্য যেকোন কিছু। কারন আপনার ৩০ বছরের কোঠা পূর্ণ করে ফেলেছেন আর কিছুই করার নেই।
আর যদি হতে পারেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি তাহলে আপনি আপনার দাসত্বের ষোল কলা পূর্ন করে ফেলেছেন। আর কিছু বাকি রইল না।