বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন- সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান।
বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী) আব্দুল মোতালেব হাওলাদার দীর্ঘদিন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে কাজ করছেন। আব্দুল মোতালেব ২০১৪ সালে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশনে জমা দেন। কিন্তু ওই সনদ অবৈধ উপায়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিচুজ্জামন। তিনি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। তার অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের কমিটি গত ২৩ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মঞ্জুরি কমিশন ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিকে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। কিন্তু আব্দুল মোতালেব ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্নাতক সনদ নেন। জালিয়াতি করে চার বছর মেয়াদি সনদ দেয়া হয়েছে মাত্র ১ বছর ৫ মাসে।
জনাব স্বপন কুমার দাস আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির দেয়া সনদটি অবৈধ বলে তদন্ত কমিটিতে স্পষ্ট হয়েছে। বিসিসির চাকরির বিধি অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পাসের সনদ থাকতে হবে। তবে আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের কোনোটিই নেই। বিষয়টি নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে যত ধরনের সহযোগিতা দরকার তা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করা হবে।
অন্যদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে জালিয়াতি করে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম হোসেন লিখিত অভিযোগ করে জানান, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট বিসিসি/ইডি/২৬/১৫ দরপত্র বিজ্ঞপ্তির ২ নম্বর ক্রমিকে নগরীর চৌমাথা বাজার থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার কাজ পান তিনি। কাজ শেষ করে বিসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাওনা ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার বিল চাইতে গেলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন মশিউর রহমান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার শাখায় মেসার্স সোহেল ইঞ্জিনিয়ার্সের নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে চেকের মাধ্যমে ৮৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৬ টাকার বিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে লিখিত অভিযোগ করলে দুদক বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারের বিলের ভ্যাট-টাক্স সরকারের কোষাগারে না দিয়ে তা আত্মসাৎ গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
সচিব ইসরাইল হোসেন বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে ইতোমধ্যে ওএসডি করেছেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ