ঢাকা ১০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল্লাহর পরিচয়

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১০:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ৭৮৫ বার পড়া হয়েছে

এম এস সালেহী।।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য। যিনি বিশ্ব জাহানের মালিক। দরূদ ও সালাম রাসূল (সঃ) এর উপর।‌ যিনি আঁধার পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন।
প্রিয় পাঠক!
আল্লহর পরিচয় কি? মহান আল্লাহ্ এমন সত্ত্বা যার জাতি নাম একটাই ‘আল্লহ’। পৃথিবীর অনেক বড় বড়‌ গবেষক শিক্ষাবিদরা লক্ষ্য কোটি চেষ্টা করেও এর‌ বহুবচন রুপ বের করতে পারেনি। এটা কি প্রমাণ করে বলুন!
এটা প্রমাণ করে আল্লাহর বাণী চিরন্তন এবং তিনিও চিরন্তন। পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা ইখলাসে সুস্পষ্ট আল্লহর পরিচয় দিয়ে নাবী মুহাম্মদ (সঃ)-কে বলেন,
قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ
হে রাসূল (সঃ) আপনি বলুন, তিনি (আল্লাহ) এক।
اللَّـهُ الصَّمَدُ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
আমারা আমাদের জন্য কি স্বয়ং সম্পূর্ণ?
তাহলে কার অধীনে আমরা চলছি??
আমরা এক আল্লহর অধীনেই চলছি। হিন্দুদের একটি মতবাদ রয়েছে তাদের দেবতার অধীনে হয় আর তাঁরা ফেরেশতাদের দেবতা বলে চিনে।
আমরা মুসলিম জাতি ফেরেশতাদের চিনি আল্লহর সৈনিক বলে। তবে পার্থক্য এতটুকুই তারা পৃথিবীর সৈন্যদের মতোই মনে করে শুধু স্বর্গীয় বলে প্রকাশ করে। আসলে স্বর্গীয় কোনো কিছুই দুনিয়াবি জিনিসের সাথে তুলনা হয় না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একমাত্র সত্ত্বা যিনি একেবারেই মহা মহিয়ান। যার তুলনা হয়না। তার পরিচয় গাছে মাছেই সীমাবদ্ধ নয় আসমান জমিন লৌহ কলম আরশ কুরসি ইত্যাদি বড় বড় জায়গায় বড় বড় আকারে পাওয়া যায়। চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সাধারণ জিনিসেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে পেয়ে যায়। আল্লাহ নিরাকার। তাঁর সম্বন্ধে তিনিই বলেছেন। কারণ, কোনো মানব চক্ষুই তাকে সম্পুর্ন ভাবে দেখেনি। শুধু জান্নাতিরা দেখবে।

বিশাল সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নিদর্শনের অনুসন্ধান কিভাবে শুরু হবে তাও বলে দিয়েছেন রাব্বুল আলামিন। বলেছেন, وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ
‘তোমরা নিজেদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না?’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২১)
ইমাম তাবারি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনেক নিদর্শন রয়েছে। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, হৃিপণ্ডসহ মানুষের প্রতিটি অঙ্গই আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন।
এছাড়া মানুষের সৃষ্টি ও জন্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও আল্লাহর পরিচয় লাভ করা সম্ভব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ
‘তাঁর নিদর্শন হলো তিনি তোমাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা মানুষ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ। ’ (সুরা রোম, আয়াত : ২০)

এরপর মানুষ তার চারপাশের প্রাণী, পরিবেশ ও প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন অনুসন্ধান করবে। প্রাণী ও প্রকৃতির সৃষ্টি-নিপুণতা ও শৃঙ্খলা আল্লাহর অস্তিত্ব ও অসীম ক্ষমতারই সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ বলেন,
اَفَلَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَی الۡاِبِلِ کَیۡفَ خُلِقَتۡ{١٧}
وَ اِلَی السَّمَآءِ کَیۡفَ رُفِعَتۡ ﴿ٝ۱۸}
وَ اِلَی الۡجِبَالِ کَیۡفَ نُصِبَتۡ ﴿ٝ۱۹}
وَ اِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ﴿ٝ۲۰}
‘তারা কি উটের প্রতি লক্ষ করে না তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আসমানের দিকে, কিভাবে তা ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? পাহাড়ের দিকে, কিভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? আর ভূ-তলের দিকে, কিভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়াত, আয়াত : ১৭-২০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
لَوۡ کَانَ فِیۡہِمَاۤ اٰلِہَۃٌ اِلَّا اللّٰہُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿۲۲﴾
‘যদি তাতে (আসমান ও জমিনে) আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু থাকত, তবে তা ধ্বংস হয়ে যেত। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২২)

নিদর্শন দেখে যারা তার স্রষ্টার পরিচয় বুঝতে পারে না, তাদের জন্য আল্লাহ নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেছেন,
وَ اللّٰہُ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
‘আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দিয়ে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। যে সম্প্রদায় কথা শোনে এতে তাদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৫)

আল্লাহ আরো বলেছেন,
تَبٰرَکَ الَّذِیۡ بِیَدِہِ الۡمُلۡکُ ۫ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ۙ﴿۱﴾
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾
الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ ہَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ ﴿۳﴾
ثُمَّ ارۡجِعِ الۡبَصَرَ کَرَّتَیۡنِ یَنۡقَلِبۡ اِلَیۡکَ الۡبَصَرُ خَاسِئًا وَّ ہُوَ حَسِیۡرٌ ﴿۴﴾
‘মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান। যিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য; তোমাদের মধ্যে কে কাজে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, শক্তিময়। যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাও? তুমি আবার দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও। দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। ’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১-৪)

কিন্তু মানুষ কি চেষ্টা করলেই আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে? আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, তিনি চেষ্টাকারীর জন্য পথ খুলে দেন। যে তাঁকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দেন। ইরশাদ হয়েছে,
وَ الَّذِیۡنَ جَاہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمۡ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿٪۶۹﴾
‘যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা করে আমি অবশ্যই তাদের পথ খুলে দিই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

অন্যত্র বলেন,
وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّہُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ ﴿۱۸۶﴾
‘আমার বান্দা যখন আমার সম্পর্কে জানতে চায়, (বলুন) আমি তো কাছেই। আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুক যেন তারা সঠিক পথে চলতে পারে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

যেহেতু মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর পরিচয় লাভের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করা। আল্লাহর পরিচয় লাভ মুমিন জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘বান্দার জীবনের সার্থকতা হলো সে আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে এবং তাঁকে ভালোবাসবে। অতঃপর পরকালে তাঁকে দেখবে এবং দেখে সীমাহীন তৃপ্তি লাভ করবে। ’ (আর-রিসালাতুস সাফাদিয়া, পৃষ্ঠা ৩৪৬)

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক সমুজ দান করুন।
আমীন ইয়া রব্বুল আলামীন!

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

আল্লাহর পরিচয়

আপডেট সময় : ১০:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

এম এস সালেহী।।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য। যিনি বিশ্ব জাহানের মালিক। দরূদ ও সালাম রাসূল (সঃ) এর উপর।‌ যিনি আঁধার পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন।
প্রিয় পাঠক!
আল্লহর পরিচয় কি? মহান আল্লাহ্ এমন সত্ত্বা যার জাতি নাম একটাই ‘আল্লহ’। পৃথিবীর অনেক বড় বড়‌ গবেষক শিক্ষাবিদরা লক্ষ্য কোটি চেষ্টা করেও এর‌ বহুবচন রুপ বের করতে পারেনি। এটা কি প্রমাণ করে বলুন!
এটা প্রমাণ করে আল্লাহর বাণী চিরন্তন এবং তিনিও চিরন্তন। পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা ইখলাসে সুস্পষ্ট আল্লহর পরিচয় দিয়ে নাবী মুহাম্মদ (সঃ)-কে বলেন,
قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ
হে রাসূল (সঃ) আপনি বলুন, তিনি (আল্লাহ) এক।
اللَّـهُ الصَّمَدُ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
আমারা আমাদের জন্য কি স্বয়ং সম্পূর্ণ?
তাহলে কার অধীনে আমরা চলছি??
আমরা এক আল্লহর অধীনেই চলছি। হিন্দুদের একটি মতবাদ রয়েছে তাদের দেবতার অধীনে হয় আর তাঁরা ফেরেশতাদের দেবতা বলে চিনে।
আমরা মুসলিম জাতি ফেরেশতাদের চিনি আল্লহর সৈনিক বলে। তবে পার্থক্য এতটুকুই তারা পৃথিবীর সৈন্যদের মতোই মনে করে শুধু স্বর্গীয় বলে প্রকাশ করে। আসলে স্বর্গীয় কোনো কিছুই দুনিয়াবি জিনিসের সাথে তুলনা হয় না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একমাত্র সত্ত্বা যিনি একেবারেই মহা মহিয়ান। যার তুলনা হয়না। তার পরিচয় গাছে মাছেই সীমাবদ্ধ নয় আসমান জমিন লৌহ কলম আরশ কুরসি ইত্যাদি বড় বড় জায়গায় বড় বড় আকারে পাওয়া যায়। চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সাধারণ জিনিসেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে পেয়ে যায়। আল্লাহ নিরাকার। তাঁর সম্বন্ধে তিনিই বলেছেন। কারণ, কোনো মানব চক্ষুই তাকে সম্পুর্ন ভাবে দেখেনি। শুধু জান্নাতিরা দেখবে।

বিশাল সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নিদর্শনের অনুসন্ধান কিভাবে শুরু হবে তাও বলে দিয়েছেন রাব্বুল আলামিন। বলেছেন, وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ
‘তোমরা নিজেদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না?’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২১)
ইমাম তাবারি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনেক নিদর্শন রয়েছে। চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, হৃিপণ্ডসহ মানুষের প্রতিটি অঙ্গই আল্লাহর বিস্ময়কর নিদর্শন।
এছাড়া মানুষের সৃষ্টি ও জন্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও আল্লাহর পরিচয় লাভ করা সম্ভব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ تَنۡتَشِرُوۡنَ
‘তাঁর নিদর্শন হলো তিনি তোমাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তারপর তোমরা মানুষ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ। ’ (সুরা রোম, আয়াত : ২০)

এরপর মানুষ তার চারপাশের প্রাণী, পরিবেশ ও প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন অনুসন্ধান করবে। প্রাণী ও প্রকৃতির সৃষ্টি-নিপুণতা ও শৃঙ্খলা আল্লাহর অস্তিত্ব ও অসীম ক্ষমতারই সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ বলেন,
اَفَلَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَی الۡاِبِلِ کَیۡفَ خُلِقَتۡ{١٧}
وَ اِلَی السَّمَآءِ کَیۡفَ رُفِعَتۡ ﴿ٝ۱۸}
وَ اِلَی الۡجِبَالِ کَیۡفَ نُصِبَتۡ ﴿ٝ۱۹}
وَ اِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ﴿ٝ۲۰}
‘তারা কি উটের প্রতি লক্ষ করে না তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আসমানের দিকে, কিভাবে তা ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? পাহাড়ের দিকে, কিভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? আর ভূ-তলের দিকে, কিভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সুরা গাশিয়াত, আয়াত : ১৭-২০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
لَوۡ کَانَ فِیۡہِمَاۤ اٰلِہَۃٌ اِلَّا اللّٰہُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿۲۲﴾
‘যদি তাতে (আসমান ও জমিনে) আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু থাকত, তবে তা ধ্বংস হয়ে যেত। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২২)

নিদর্শন দেখে যারা তার স্রষ্টার পরিচয় বুঝতে পারে না, তাদের জন্য আল্লাহ নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেছেন,
وَ اللّٰہُ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
‘আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দিয়ে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। যে সম্প্রদায় কথা শোনে এতে তাদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৫)

আল্লাহ আরো বলেছেন,
تَبٰرَکَ الَّذِیۡ بِیَدِہِ الۡمُلۡکُ ۫ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ۙ﴿۱﴾
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾
الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ ہَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ ﴿۳﴾
ثُمَّ ارۡجِعِ الۡبَصَرَ کَرَّتَیۡنِ یَنۡقَلِبۡ اِلَیۡکَ الۡبَصَرُ خَاسِئًا وَّ ہُوَ حَسِیۡرٌ ﴿۴﴾
‘মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান। যিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য; তোমাদের মধ্যে কে কাজে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, শক্তিময়। যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাও? তুমি আবার দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও। দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। ’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১-৪)

কিন্তু মানুষ কি চেষ্টা করলেই আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে? আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, তিনি চেষ্টাকারীর জন্য পথ খুলে দেন। যে তাঁকে ডাকে তার ডাকে সাড়া দেন। ইরশাদ হয়েছে,
وَ الَّذِیۡنَ جَاہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمۡ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿٪۶۹﴾
‘যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা করে আমি অবশ্যই তাদের পথ খুলে দিই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

অন্যত্র বলেন,
وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّہُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ ﴿۱۸۶﴾
‘আমার বান্দা যখন আমার সম্পর্কে জানতে চায়, (বলুন) আমি তো কাছেই। আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে আহ্বান করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুক যেন তারা সঠিক পথে চলতে পারে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

যেহেতু মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর পরিচয় লাভের মাধ্যমে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করা। আল্লাহর পরিচয় লাভ মুমিন জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘বান্দার জীবনের সার্থকতা হলো সে আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে এবং তাঁকে ভালোবাসবে। অতঃপর পরকালে তাঁকে দেখবে এবং দেখে সীমাহীন তৃপ্তি লাভ করবে। ’ (আর-রিসালাতুস সাফাদিয়া, পৃষ্ঠা ৩৪৬)

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক সমুজ দান করুন।
আমীন ইয়া রব্বুল আলামীন!