ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ‘কোঁপানোর নির্দেশ’ দিলেন হাসপাতাল পরিচালক!

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০১৯
  • ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) ছোরা দিয়ে কুপিয়ে মাটিয়ে শুইয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের এক কর্মচারীর দুর্ব্যবহারের ঘটনায় রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা পরিচালকের কাছে নালিশ জানালে তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামুনকে ওই নির্দেশ দেন।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি মো. মেজবাউদ্দিন বলেন, সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের চিকিৎসক সালাহ আলদ্বীন বিন রাসেল কে প্রধান ফটকে নামিয়ে মোটরসাইকেল ঘুরাচ্ছিলেন। এ সময় কর্মচারী মামুন পরিচালকের বরাত দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হন।

তখন তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাসপাতালে প্রবেশ করেননি। একজন চিকিৎসককে গেটে নামিয়ে দেয়ায় কী অপরাধ হয়েছে- জানতে চাইলে মামুন তার শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করতে যান। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং শিক্ষিত মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহারের এমন অভিযোগ শুনেই ক্ষেপে যান পরিচালক। এ সময় অভিযুক্ত মামুনের উপস্থিতিতে পরিচালক বলেন, ‘লাঠি নয় এরপর ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে’। যাকে সামনে পাবে তাকেই কোঁপাবে।

পরিচালক মামুনকে উদ্দেশ করে বলেন- কি পারবিনা কোপাইতে ? মামুন ‘পারমু’ স্যার বলে হ্যাঁ সূচক সন্মতি দিলে এরপর থেকে কাউকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেলে কুঁপিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

মেজবাউদ্দিন বলেন, আমার যদি কোনো অন্যায় হয় তাহলে কোম্পানি ব্যবস্থা নেবে। আর যদি হাসপাতালের কর্মচারী কোনো অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেখানে পরিচালক আমাদের কোনো কথাই শুনলেন না। উল্টো এরপর থেকে তাদের কোপানোর নির্দেশ দিয়েছেন কর্মচারীকে।

ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি রেনেটার জোনাল ম্যানেজার শহীদ হোসেন মুন্না জানান, তাদের এক সদস্য লাঞ্ছিত হওয়ার পর তারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী বুধবার ফের ফারিয়ার সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভার পরে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

ফারিয়া সূত্রে জানা গেছে- ঈদের এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইফতার করানোর জন্য ফারিয়ার নেতাদের কাছে আবদার করেছিলেন পরিচালক। ফারিয়া এই আবদার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই পরিচালক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপর বিরুপ হন।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকীর হোসেন বলেন, তিনি সিসি ক্যামেরায় দেখছিলেন প্রধান গেটের সামনে কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘুরঘুর করছে। এরপর তিনি মামুনসহ ৩জন কর্মচারীকে তাদের ডেকে আনতে পাঠান। তার কথা বলার পরও তারা আসেনি। শিক্ষিত হয়েও তারা তার অশিক্ষিত কর্মচারীদের সাথে তুই তোকারি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী মামুন একজনের শার্টের কলার ধরে। এ ঘটনার পর তারা তার কাছে নালিশ করতে গেলে তিনি উপমা হিসেবে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বলেছেন, কথা না শুনলে তো দা-ছুরি নিয়ে নামতে হবে। ‘ছুরি দিয়ে কোপাঁনো’ কোনো নির্দেশ নয়, এটা ‘কথার কথা’ বলে দাবি করেন পরিচালক।

২ বছর আগে হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কোয়ার্টার থেকে মামুন ও তার মা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি পায় মামুন। পুলিশের দৃষ্টিতে মামুন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কোয়ার্টারের মাদকসেবীদের হোতা হিসেবে পরিচিত।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রক্ত ঝরিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই: হাসনাত

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ‘কোঁপানোর নির্দেশ’ দিলেন হাসপাতাল পরিচালক!

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০১৯

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) ছোরা দিয়ে কুপিয়ে মাটিয়ে শুইয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের এক কর্মচারীর দুর্ব্যবহারের ঘটনায় রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা পরিচালকের কাছে নালিশ জানালে তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামুনকে ওই নির্দেশ দেন।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি মো. মেজবাউদ্দিন বলেন, সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের চিকিৎসক সালাহ আলদ্বীন বিন রাসেল কে প্রধান ফটকে নামিয়ে মোটরসাইকেল ঘুরাচ্ছিলেন। এ সময় কর্মচারী মামুন পরিচালকের বরাত দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হন।

তখন তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাসপাতালে প্রবেশ করেননি। একজন চিকিৎসককে গেটে নামিয়ে দেয়ায় কী অপরাধ হয়েছে- জানতে চাইলে মামুন তার শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করতে যান। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং শিক্ষিত মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহারের এমন অভিযোগ শুনেই ক্ষেপে যান পরিচালক। এ সময় অভিযুক্ত মামুনের উপস্থিতিতে পরিচালক বলেন, ‘লাঠি নয় এরপর ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে’। যাকে সামনে পাবে তাকেই কোঁপাবে।

পরিচালক মামুনকে উদ্দেশ করে বলেন- কি পারবিনা কোপাইতে ? মামুন ‘পারমু’ স্যার বলে হ্যাঁ সূচক সন্মতি দিলে এরপর থেকে কাউকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেলে কুঁপিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

মেজবাউদ্দিন বলেন, আমার যদি কোনো অন্যায় হয় তাহলে কোম্পানি ব্যবস্থা নেবে। আর যদি হাসপাতালের কর্মচারী কোনো অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেখানে পরিচালক আমাদের কোনো কথাই শুনলেন না। উল্টো এরপর থেকে তাদের কোপানোর নির্দেশ দিয়েছেন কর্মচারীকে।

ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি রেনেটার জোনাল ম্যানেজার শহীদ হোসেন মুন্না জানান, তাদের এক সদস্য লাঞ্ছিত হওয়ার পর তারা জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী বুধবার ফের ফারিয়ার সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভার পরে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

ফারিয়া সূত্রে জানা গেছে- ঈদের এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইফতার করানোর জন্য ফারিয়ার নেতাদের কাছে আবদার করেছিলেন পরিচালক। ফারিয়া এই আবদার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই পরিচালক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপর বিরুপ হন।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকীর হোসেন বলেন, তিনি সিসি ক্যামেরায় দেখছিলেন প্রধান গেটের সামনে কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘুরঘুর করছে। এরপর তিনি মামুনসহ ৩জন কর্মচারীকে তাদের ডেকে আনতে পাঠান। তার কথা বলার পরও তারা আসেনি। শিক্ষিত হয়েও তারা তার অশিক্ষিত কর্মচারীদের সাথে তুই তোকারি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী মামুন একজনের শার্টের কলার ধরে। এ ঘটনার পর তারা তার কাছে নালিশ করতে গেলে তিনি উপমা হিসেবে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বলেছেন, কথা না শুনলে তো দা-ছুরি নিয়ে নামতে হবে। ‘ছুরি দিয়ে কোপাঁনো’ কোনো নির্দেশ নয়, এটা ‘কথার কথা’ বলে দাবি করেন পরিচালক।

২ বছর আগে হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কোয়ার্টার থেকে মামুন ও তার মা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি পায় মামুন। পুলিশের দৃষ্টিতে মামুন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কোয়ার্টারের মাদকসেবীদের হোতা হিসেবে পরিচিত।