ঢাকা ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা, অবশেষে মামলা নিল পুলিশ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:২৫:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯
  • ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ নরসিংদীতে স্কুলছাত্রী জান্নাতি আক্তারকে (১৬) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রায় দুই মাস পর মামলা নিয়েছে সদর থানা পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে নিহত জান্নাতির বাবা শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন কিশোরী জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০)। তারা সবাই সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করে। আটক ছয়জন হলেন শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওসের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাত ভাই জাহাঙ্গীর।

মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে হাজিপুর গ্রামের স্কুলছাত্রী জান্নাতি আক্তারের সঙ্গে পাশের খাসের চর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে।

জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। তাই তার ওপর নেমে আসে অমানুসিক নির্যাতন। এরপর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জান্নাতির পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দারিদ্রতার কারণে যৌতুকের দাবি মিটাতে পারেননি জান্নাতির বাবা। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

যৌতুকের টাকা না দেওয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী শিপলু, শাশুড়ি শান্তি বেগম ও ননদ ফাল্গুনী বেগম জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি তারা। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরপর জান্নাতির পরিবার সদর মডেল থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। ২৫ এপ্রিল জান্নাতির দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান নরসিংদীর আদালতে মামলা করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ‘সাত দিন’ শেষ হয়নি পিবিআইয়ের। এরই মধ্যে জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে। আসামিরাও গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত ও তাদের স্বজনরা মামলা প্রত্যাহার করতে জান্নাতির পরিবারকে দফায় দফায় হুমকি দেয়।

নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, মেয়ের শরীরে আগুন দেওয়ার পর পরই থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত থেকে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এদিকে হত্যাকারীরা অব্যাহতভাবে আমাদের পরিবারকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। মামলা করলে আমার ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

মৃত্যুর আগে আগুন দিয়ে পোড়ানোর বর্ণনা দিয়ে গেছে জান্নাতি। তার আর্তনাদ কেঁপে উঠেছিল পুরো হাসপাতাল চত্বর। পাশের বেডে থাকা এক রোগী ভিডিও ধারণ করেছে তার করুণ আর্তনাদের। সেখানে দেখা গেছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল সে। তীব্র ব্যথা সইতে না পেরে দরিদ্র বাবার কাছে ব্যথানাশক একটি ইনজেকশন দেওয়ার দাবি জানায়। সেখানে সে বলছিল, ‘তোমার কাছে জীবনে আর কিছুই চাইব না বাবা। একটি ব্যথানাশক ওষুধ দাও।’ কিন্তু দরিদ্র বাবা সেই ইনজেকশন কিনে দিতে পারেননি।

জান্নাতির বাবা বলেন, একটি ইনজেকশনের দাম সাত হাজার টাকা। আরেকটির দাম তিন হাজার আটশ টাকা। আমি দরিদ্র চা বিক্রেতা। এত টাকা পাব কোথায়? তাই মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি। ধার-কর্জ ও ঋণ নিয়ে যত দিন ওষুধ দিতে পেরেছি, তত দিন বেঁচে ছিল। এরপর আর মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। এখন শুধু একটাই দাবি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল সরকার বলেন, নরসিংদীতে ফেনীর নুসরাতের মতো আরো একটি ঘটনার জন্ম নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও পিবিআই পুলিশ তা দেয়নি। তাই মামলার কর্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে। আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে নরসিংদীতে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ বলেন, সিআর (আদালতে মামলা) মামলা তদন্ত করতে একটু সময় লাগে। তার ওপর এটি একটি হত্যা মামলা। ঘটনাটিও বড়। তাই স্বচ্ছ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সঠিক চিত্র উঠিয়ে আনতেই সময় লাগছে। এরই মধ্যে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জান্নাতির গায়ে আগুন দেওয়া ও পরে হত্যার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আরো কিছু বিষয় আছে। সেগুলো শেষ হলেই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে।

আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সিআর মামলায় পিবিআইয়ের গ্রেপ্তার করার বিধান নেই। তবে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি।

এসব নিয়ে গত ১১ জুন ‘নুসরাতের মতো সৌভাগ্য নেই জান্নাতির পরিবারের’ শিরোনামে এনটিভি অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের নতুন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানের। তাঁর নির্দেশে গতকাল মামলা নিতে তৎপর হয় নরসিংদী সদর মডেল থানার পুলিশ। জান্নাতির বাবাকে খুঁজে বের করে থানায় এনে তাঁকে বাদী করে হত্যা মামলা নেয়। এতে অভিযোগ করা হয়, যৌতুকের জন্য জান্নাতিকে নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন শাশুড়ি শান্তি বেগম, স্বামী শিপলু ওরফে শিবু, ননদ ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা দায়েরের পর পরই আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। তাদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা, অবশেষে মামলা নিল পুলিশ

আপডেট সময় : ০৭:২৫:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ নরসিংদীতে স্কুলছাত্রী জান্নাতি আক্তারকে (১৬) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রায় দুই মাস পর মামলা নিয়েছে সদর থানা পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে নিহত জান্নাতির বাবা শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন কিশোরী জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০)। তারা সবাই সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করে। আটক ছয়জন হলেন শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওসের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাত ভাই জাহাঙ্গীর।

মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে হাজিপুর গ্রামের স্কুলছাত্রী জান্নাতি আক্তারের সঙ্গে পাশের খাসের চর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে।

জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। তাই তার ওপর নেমে আসে অমানুসিক নির্যাতন। এরপর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জান্নাতির পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দারিদ্রতার কারণে যৌতুকের দাবি মিটাতে পারেননি জান্নাতির বাবা। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

যৌতুকের টাকা না দেওয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী শিপলু, শাশুড়ি শান্তি বেগম ও ননদ ফাল্গুনী বেগম জান্নাতির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি তারা। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরপর জান্নাতির পরিবার সদর মডেল থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তা নেয়নি। ২৫ এপ্রিল জান্নাতির দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান নরসিংদীর আদালতে মামলা করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ‘সাত দিন’ শেষ হয়নি পিবিআইয়ের। এরই মধ্যে জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে। আসামিরাও গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত ও তাদের স্বজনরা মামলা প্রত্যাহার করতে জান্নাতির পরিবারকে দফায় দফায় হুমকি দেয়।

নিহত জান্নাতির বাবা শরীফুল ইসলাম খান বলেন, মেয়ের শরীরে আগুন দেওয়ার পর পরই থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত থেকে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এদিকে হত্যাকারীরা অব্যাহতভাবে আমাদের পরিবারকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। মামলা করলে আমার ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

মৃত্যুর আগে আগুন দিয়ে পোড়ানোর বর্ণনা দিয়ে গেছে জান্নাতি। তার আর্তনাদ কেঁপে উঠেছিল পুরো হাসপাতাল চত্বর। পাশের বেডে থাকা এক রোগী ভিডিও ধারণ করেছে তার করুণ আর্তনাদের। সেখানে দেখা গেছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল সে। তীব্র ব্যথা সইতে না পেরে দরিদ্র বাবার কাছে ব্যথানাশক একটি ইনজেকশন দেওয়ার দাবি জানায়। সেখানে সে বলছিল, ‘তোমার কাছে জীবনে আর কিছুই চাইব না বাবা। একটি ব্যথানাশক ওষুধ দাও।’ কিন্তু দরিদ্র বাবা সেই ইনজেকশন কিনে দিতে পারেননি।

জান্নাতির বাবা বলেন, একটি ইনজেকশনের দাম সাত হাজার টাকা। আরেকটির দাম তিন হাজার আটশ টাকা। আমি দরিদ্র চা বিক্রেতা। এত টাকা পাব কোথায়? তাই মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনি। ধার-কর্জ ও ঋণ নিয়ে যত দিন ওষুধ দিতে পেরেছি, তত দিন বেঁচে ছিল। এরপর আর মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। এখন শুধু একটাই দাবি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল সরকার বলেন, নরসিংদীতে ফেনীর নুসরাতের মতো আরো একটি ঘটনার জন্ম নিয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বললেও পিবিআই পুলিশ তা দেয়নি। তাই মামলার কর্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে। আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে নরসিংদীতে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ আর এম আলিফ বলেন, সিআর (আদালতে মামলা) মামলা তদন্ত করতে একটু সময় লাগে। তার ওপর এটি একটি হত্যা মামলা। ঘটনাটিও বড়। তাই স্বচ্ছ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সঠিক চিত্র উঠিয়ে আনতেই সময় লাগছে। এরই মধ্যে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জান্নাতির গায়ে আগুন দেওয়া ও পরে হত্যার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। আরো কিছু বিষয় আছে। সেগুলো শেষ হলেই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে।

আসামিদের গ্রেপ্তার করা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সিআর মামলায় পিবিআইয়ের গ্রেপ্তার করার বিধান নেই। তবে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি।

এসব নিয়ে গত ১১ জুন ‘নুসরাতের মতো সৌভাগ্য নেই জান্নাতির পরিবারের’ শিরোনামে এনটিভি অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের নতুন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানের। তাঁর নির্দেশে গতকাল মামলা নিতে তৎপর হয় নরসিংদী সদর মডেল থানার পুলিশ। জান্নাতির বাবাকে খুঁজে বের করে থানায় এনে তাঁকে বাদী করে হত্যা মামলা নেয়। এতে অভিযোগ করা হয়, যৌতুকের জন্য জান্নাতিকে নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন শাশুড়ি শান্তি বেগম, স্বামী শিপলু ওরফে শিবু, ননদ ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা দায়েরের পর পরই আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। তাদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।