ঢাকা ০৫:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেগম সুফিয়া কামাল এর জন্মদিনে গুগলের ডুডল

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০২:১১:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯
  • ৫৫৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি কবি বেগম সুফিয়া কামালকে জন্মদিনে তাকে স্মরণ করল গুগল। আজ কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। এই মহীয়সীর জন্মদিনে ধানসিঁড়ি নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকেও জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিশেষ বিশেষ দিনে কোনো ব্যক্তির কথা স্মরণ করে সার্চ বক্সের উপরে নিজেদের লোগো বদলে বিশেষ দিনটির সঙ্গে মানানসই নকশার যে লোগো তৈরি করে গুগল, তাই ডুডল।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে গুগল এর দক্ষিন এশিয়ার সকল হোম পেইজে দেখা যাচ্ছে সুফিয়া কামাল এর ছবি সম্বলিত ডুডল।

বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। তাঁর বাবা কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। স্কুল-কলেজে পড়ার কোন সুযোগ তাদের ছিলো না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থানপতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।

১৯২৪ সনে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়। সৈয়দ নেহাল হোসেন অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক ছিলেন, তিনি সুফিয়া কামালকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়া কামালের যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। সুফিয়া সে সময়ের বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিলো। সুফিয়া কামালের শিশুমনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলো বেগম রোকেয়ার কথা ও কাজ। সুফিয়া কামালের কাজেকর্মেও ছাপ পাওয়া যায় বেগম রোকেয়ার।

১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় নিপতিত করে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দেশবিভাগের পূর্বে কিছু কাল তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত তৎকালীন সময়ের সাড়া জাগানো সাময়িকী বেগমের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।

সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কলম ধরার পাশাপাশি আজীবন রাস্তায় লড়াইয়েও ছিলেন এই নারী। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র-চর্চার বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা প্রতিরোধেও ছিলেন সুফিয়া কামাল।

১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ লাভ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন।

নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলনেরও অন্যতম অনুঘটক ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন।

সুফিয়া কামালের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, উদাত্ত পৃথিবী, মৃত্তিকার ঘ্রাণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ক্ষণজন্মা এই নারী বাংলা সাহিত্যাঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধশালী পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি-

  • পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬১) (প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯)
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)
  • সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
  • একুশে পদক (১৯৭৬)
  • নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
  • সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১)
  • মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২)
  • বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬)
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
  • দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
  • স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৯৭)

১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ইহজীবন অবসানের আগ পর্যন্ত সচেতনভাবে নারীর মানবাধিকার অর্জনের দাবি জানিয়ে নারী আন্দোলনকে আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বৈষম্য-অসাম্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সোচ্চার থাকা এবং অসহায়, দরিদ্র, নির্যাতিত নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করার পথনির্দেশ দিয়ে গেছেন তিনি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

বেগম সুফিয়া কামাল এর জন্মদিনে গুগলের ডুডল

আপডেট সময় : ০২:১১:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯

বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি কবি বেগম সুফিয়া কামালকে জন্মদিনে তাকে স্মরণ করল গুগল। আজ কবি বেগম সুফিয়া কামালের ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। এই মহীয়সীর জন্মদিনে ধানসিঁড়ি নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকেও জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিশেষ বিশেষ দিনে কোনো ব্যক্তির কথা স্মরণ করে সার্চ বক্সের উপরে নিজেদের লোগো বদলে বিশেষ দিনটির সঙ্গে মানানসই নকশার যে লোগো তৈরি করে গুগল, তাই ডুডল।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে গুগল এর দক্ষিন এশিয়ার সকল হোম পেইজে দেখা যাচ্ছে সুফিয়া কামাল এর ছবি সম্বলিত ডুডল।

বেগম সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। তাঁর বাবা কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হত। স্কুল-কলেজে পড়ার কোন সুযোগ তাদের ছিলো না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থানপতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।

১৯২৪ সনে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়। সৈয়দ নেহাল হোসেন অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক ছিলেন, তিনি সুফিয়া কামালকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়া কামালের যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। সুফিয়া সে সময়ের বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিলো। সুফিয়া কামালের শিশুমনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলো বেগম রোকেয়ার কথা ও কাজ। সুফিয়া কামালের কাজেকর্মেও ছাপ পাওয়া যায় বেগম রোকেয়ার।

১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় নিপতিত করে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দেশবিভাগের পূর্বে কিছু কাল তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত তৎকালীন সময়ের সাড়া জাগানো সাময়িকী বেগমের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।

সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কলম ধরার পাশাপাশি আজীবন রাস্তায় লড়াইয়েও ছিলেন এই নারী। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র-চর্চার বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা প্রতিরোধেও ছিলেন সুফিয়া কামাল।

১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ লাভ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন।

নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলনেরও অন্যতম অনুঘটক ছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ছায়ানট, কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন।

সুফিয়া কামালের কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, উদাত্ত পৃথিবী, মৃত্তিকার ঘ্রাণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ক্ষণজন্মা এই নারী বাংলা সাহিত্যাঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধশালী পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি-

  • পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬১) (প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯)
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)
  • সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
  • একুশে পদক (১৯৭৬)
  • নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
  • সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১)
  • মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২)
  • বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬)
  • জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
  • দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
  • স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৯৭)

১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ইহজীবন অবসানের আগ পর্যন্ত সচেতনভাবে নারীর মানবাধিকার অর্জনের দাবি জানিয়ে নারী আন্দোলনকে আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বৈষম্য-অসাম্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সোচ্চার থাকা এবং অসহায়, দরিদ্র, নির্যাতিত নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করার পথনির্দেশ দিয়ে গেছেন তিনি।