ঢাকা ১২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজেটের অজুহাতে বাজার অস্থির

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৯:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০১৯
  • ২৮৬ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

আগামী অর্থবছরের জন্য সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের কাঁচা বাজার ও অন্যান্য বাজারগুলোতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাজেট অনুমোদন এবং কার্যকর হতে এখনো অন্তত ১০ দিন বাকি থাকলেও এ অজুহাতে বেড়ে চলেছে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। বাজেটে যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক-কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর দাম তো বাড়ছেই, দাম বাড়ছে সুবিধাপ্রাপ্ত অন্য পণ্যেরও। এক বাজারে দরের সাথে অন্য বাজারের মিল নেই। সামঞ্জস্যতা নেই পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের। যে যার মতো করে সাধ্যমতো দাম হাঁকছেন, আদায় করছেন। বাজারে এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা লেগেই আছে। যদিও বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জোর দিয়েই বলেছেন, বাজেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। পক্ষান্তরে বাজারে এর বিপরীত অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কম বেশি অনেক পণ্যের দাম ঊর্ধমুখী। বিক্রেতাদের বক্তব্য, “আমরা ব্যবসায়ী আমরা যেমন কিনব তেমন বিক্রি করব।”
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল তামাক পণ্য, মোবাইল কল, এলপি গ্যাস, চিনি, আমদানি করা গুঁড়ো দুধ, গুঁড়া মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, মধু, টয়লেট টিস্যু, টিউবলাইট, চশমার ফ্রেম, সিআর কয়েল, জিআই তার, তারকাঁটা, স্ক্রু, ব্লেড, ট্রান্সফরমার, সানগ্লাস, রিডিং গ্লাস, আমদানি করা পার্টিক্যাল বোর্ড, আমদানি করা সব ধরনের টায়ার ও স্মার্টফোনের দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, থ্রি হুইলার, অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলবাস ছাড়া সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট, ফিটনেস সনদ ও মালিকানা সনদ গ্রহণ ও নবায়নে নিয়মিত চার্জের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে বাড়ানো হয়নি এমন পণ্যের যারা দাম বাড়াচ্ছেন তাদের যুক্তি -পরিবহন ব্যয় বাড়লে সবকিছুর দামই বেড়ে যায়। তা ছাড়া সর্বজনীন ভ্যাট আদায়, মোবাইলের কলরেট এবং দৈনন্দিন জীবনে আরোপ করা নানা রকমের ট্যাক্স ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বাজেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন ক্রেতারাও। তাদের ধারণা, বাজেটের কারণে ব্যবসায়ীদেরও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বাড়তি খরচ জোগাতে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি লাভ খুঁজবেন এটাই স্বাভাবিক। জনৈক ব্যাংক কর্মকর্তা, বাজেটে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সয়াবিন তেল, পামঅয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও সরিষার তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সিএনজি, বেবি ট্যাক্সি ও হালকা যানবাহনে ব্যবহৃত রাবার টিউবের ওপর শুল্ক তিন শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। সোনা ও রূপার অলঙ্কার, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, লঞ্চের এসি কেবিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ইনডেনটিং, আসবাবপত্র, পরিবহন ঠিকাদার, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর খরচ বাড়বে।
এ দিকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) বলছে, নতুন মূল্য সংযোজন করের (মূসক) আইনের ফলে পণ্য ও সেবার মূল্যে গড়ে ২৭ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। নতুন আইনের আওতায় রেয়াতি হারে শুল্ক পরিশোধের পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে যা পরবর্তীতে সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই। এতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমদানি করা ভোজ্যতেলের ওপর আমদানিপর্যায়ে মূসক আরোপের ফলে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাবে। যা মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত শ্রেণী মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। আর তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ১০ শতাংশ কর বাড়ানোকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

ববির ভিসি প্রো- ভিসি সহ ট্রেজারারের অপসারন

বাজেটের অজুহাতে বাজার অস্থির

আপডেট সময় : ০৮:৫৯:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ

আগামী অর্থবছরের জন্য সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের কাঁচা বাজার ও অন্যান্য বাজারগুলোতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাজেট অনুমোদন এবং কার্যকর হতে এখনো অন্তত ১০ দিন বাকি থাকলেও এ অজুহাতে বেড়ে চলেছে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। বাজেটে যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক-কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর দাম তো বাড়ছেই, দাম বাড়ছে সুবিধাপ্রাপ্ত অন্য পণ্যেরও। এক বাজারে দরের সাথে অন্য বাজারের মিল নেই। সামঞ্জস্যতা নেই পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের। যে যার মতো করে সাধ্যমতো দাম হাঁকছেন, আদায় করছেন। বাজারে এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বচসা লেগেই আছে। যদিও বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জোর দিয়েই বলেছেন, বাজেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। পক্ষান্তরে বাজারে এর বিপরীত অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কম বেশি অনেক পণ্যের দাম ঊর্ধমুখী। বিক্রেতাদের বক্তব্য, “আমরা ব্যবসায়ী আমরা যেমন কিনব তেমন বিক্রি করব।”
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল তামাক পণ্য, মোবাইল কল, এলপি গ্যাস, চিনি, আমদানি করা গুঁড়ো দুধ, গুঁড়া মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, মধু, টয়লেট টিস্যু, টিউবলাইট, চশমার ফ্রেম, সিআর কয়েল, জিআই তার, তারকাঁটা, স্ক্রু, ব্লেড, ট্রান্সফরমার, সানগ্লাস, রিডিং গ্লাস, আমদানি করা পার্টিক্যাল বোর্ড, আমদানি করা সব ধরনের টায়ার ও স্মার্টফোনের দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, থ্রি হুইলার, অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলবাস ছাড়া সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট, ফিটনেস সনদ ও মালিকানা সনদ গ্রহণ ও নবায়নে নিয়মিত চার্জের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে বাড়ানো হয়নি এমন পণ্যের যারা দাম বাড়াচ্ছেন তাদের যুক্তি -পরিবহন ব্যয় বাড়লে সবকিছুর দামই বেড়ে যায়। তা ছাড়া সর্বজনীন ভ্যাট আদায়, মোবাইলের কলরেট এবং দৈনন্দিন জীবনে আরোপ করা নানা রকমের ট্যাক্স ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বাজেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন ক্রেতারাও। তাদের ধারণা, বাজেটের কারণে ব্যবসায়ীদেরও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বাড়তি খরচ জোগাতে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি লাভ খুঁজবেন এটাই স্বাভাবিক। জনৈক ব্যাংক কর্মকর্তা, বাজেটে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সয়াবিন তেল, পামঅয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও সরিষার তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সিএনজি, বেবি ট্যাক্সি ও হালকা যানবাহনে ব্যবহৃত রাবার টিউবের ওপর শুল্ক তিন শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। সোনা ও রূপার অলঙ্কার, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, লঞ্চের এসি কেবিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ইনডেনটিং, আসবাবপত্র, পরিবহন ঠিকাদার, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর খরচ বাড়বে।
এ দিকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) বলছে, নতুন মূল্য সংযোজন করের (মূসক) আইনের ফলে পণ্য ও সেবার মূল্যে গড়ে ২৭ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। নতুন আইনের আওতায় রেয়াতি হারে শুল্ক পরিশোধের পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর পরিশোধ করতে হবে যা পরবর্তীতে সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই। এতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমদানি করা ভোজ্যতেলের ওপর আমদানিপর্যায়ে মূসক আরোপের ফলে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাবে। যা মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত শ্রেণী মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। আর তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ১০ শতাংশ কর বাড়ানোকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।