ঢাকা ০১:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসক দলের ৫৪ নার্সের মনোনয়ন বাতিল করে নতুন ৫৪ জনের তালিকা

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯
  • ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে হজ চিকিৎসক দলে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন ৫৪ নার্সকে হজ চিকিৎসক দলে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গত ২৬ মে ধর্ম মন্ত্রণালয় আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ২০৭ সদস্যের মেডিকেল টিম ঘোষণা করে। তাদের মধ্যে ৯০ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স/ব্রাদার, ৩৪জন ফার্মাসিস্ট ও ৮ জন স্বাস্থ্য সহকারি/ প্যারামেডিকিস ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ছিলেন।
২৯ জুন, শনিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত হজ চিকিৎসক দল পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে নার্স/ব্রাদার ৭৫ জনের মধ্যে ক্রমিক নম্বর ১ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত নার্সের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে নতুন ৫৪ জনের নাম যোগ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হজ চিকিৎসক দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিলের এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। জানা গেছে, আগে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্সের সবাই ইতোমধ্যে হজ ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান শেষে সনদ সংগ্রহ এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আগামী ২ জুলাই তাদের কারো কারো সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। আকস্মিকভাবে অর্ধশতাধিক নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিল খবর ছড়িয়ে পড়লে মনোনয়নপ্রাপ্ত নার্সদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের অনেকের মনে প্রশ্ন, কী কারণে মনোনয়ন দেয়া হলো আবার কেনই তা বাতিল করা হলো। নতুন করে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে ৪-৬ বার হজ পালন করেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে যা ঘটেনি তা কেন ঘটল, একসঙ্গে অর্ধশতাধিক নার্সের মনোনয়ন কেন বাতিল করা হলো তা জানতে রোববার রাত পৌনে বারোটায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী হজ চিকিৎসক দলের নার্সদের কারা মনোনয়ন পাবেন, সে তালিকা নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে তালিকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে থাকেন।
কিন্তু এ বছর নার্সিং অধিদফতরের তালিকাকে উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কে বা কারা তাদের পছন্দের নার্সদের তালিকা তৈরি করে পাঠায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, নার্সিং অধিপ্তর থেকে যাদের নাম পাঠানো হয়েছে, তারা ইতিপূর্বে একাধিকবার হজ পালন করেছে। এ কারণে অধিকাংশ নতুন নার্সকে চিকিৎসক দলে অন্তর্ভুক্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়।
তবে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ ওঠে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে নার্সদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠায়। নির্ভরযোগ্য আরও একটি সূত্র জানায়, ৫৪ জনের যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল সে তালিকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র এলাকা গোপালগঞ্জের একজনও ছিলেন না।
গোপন আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নার্সদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ ৫৪ জনের সবার মনোনয়ন বাতিল করে হজ চিকিৎসক দল নতুন করে ৫৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

চিকিৎসক দলের ৫৪ নার্সের মনোনয়ন বাতিল করে নতুন ৫৪ জনের তালিকা

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে হজ চিকিৎসক দলে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন ৫৪ নার্সকে হজ চিকিৎসক দলে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গত ২৬ মে ধর্ম মন্ত্রণালয় আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ২০৭ সদস্যের মেডিকেল টিম ঘোষণা করে। তাদের মধ্যে ৯০ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স/ব্রাদার, ৩৪জন ফার্মাসিস্ট ও ৮ জন স্বাস্থ্য সহকারি/ প্যারামেডিকিস ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ছিলেন।
২৯ জুন, শনিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত হজ চিকিৎসক দল পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে নার্স/ব্রাদার ৭৫ জনের মধ্যে ক্রমিক নম্বর ১ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত নার্সের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে নতুন ৫৪ জনের নাম যোগ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হজ চিকিৎসক দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিলের এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। জানা গেছে, আগে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্সের সবাই ইতোমধ্যে হজ ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান শেষে সনদ সংগ্রহ এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আগামী ২ জুলাই তাদের কারো কারো সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। আকস্মিকভাবে অর্ধশতাধিক নার্সের সবার মনোনয়ন বাতিল খবর ছড়িয়ে পড়লে মনোনয়নপ্রাপ্ত নার্সদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের অনেকের মনে প্রশ্ন, কী কারণে মনোনয়ন দেয়া হলো আবার কেনই তা বাতিল করা হলো। নতুন করে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে ৪-৬ বার হজ পালন করেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে যা ঘটেনি তা কেন ঘটল, একসঙ্গে অর্ধশতাধিক নার্সের মনোনয়ন কেন বাতিল করা হলো তা জানতে রোববার রাত পৌনে বারোটায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী হজ চিকিৎসক দলের নার্সদের কারা মনোনয়ন পাবেন, সে তালিকা নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতর থেকে তালিকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে থাকেন।
কিন্তু এ বছর নার্সিং অধিদফতরের তালিকাকে উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কে বা কারা তাদের পছন্দের নার্সদের তালিকা তৈরি করে পাঠায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, নার্সিং অধিপ্তর থেকে যাদের নাম পাঠানো হয়েছে, তারা ইতিপূর্বে একাধিকবার হজ পালন করেছে। এ কারণে অধিকাংশ নতুন নার্সকে চিকিৎসক দলে অন্তর্ভুক্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়।
তবে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ ওঠে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে নার্সদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠায়। নির্ভরযোগ্য আরও একটি সূত্র জানায়, ৫৪ জনের যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল সে তালিকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র এলাকা গোপালগঞ্জের একজনও ছিলেন না।
গোপন আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নার্সদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ ৫৪ জনের সবার মনোনয়ন বাতিল করে হজ চিকিৎসক দল নতুন করে ৫৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।