ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! এই ধারনা পুরোপুরি সত্যি প্রমানিত

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০১৯
  • ৩৫১ বার পড়া হয়েছে


খেলাধুুলা ডেস্কঃ
ক্রিকেটে স্বতসিদ্ধ একটি কথা আছে। ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ যদি মিস ফিল্ডিং করে, বিশেষ করে ক্যাচ মিস করে তখন বলা হয়, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস। তখন নাকি স্টিভ ওয়াহ গিবসকে বলেছিলেন, ‘বাপু, তুমি তো ম্যাচটাই ফেলে দিলে হাত থেকে।’ শেষ পর্যন্ত ১২০ রান করেছিলেন স্টিভ ওয়াহ এবং ওই ম্যাচে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিসের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে ক্রিকেটের ইতিহাসে। যার সর্বশেষ উদাহরণ তৈরি হলো আজ বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতকে শুরুতেই চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজের বলে স্কয়ার লেগের ওপর ক্যাচ তুলেছিলেন রোহিত শর্মা।



কিন্তু সেটি তালুবন্দী করতে পারলেন না বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা এবং সিনিয়র ক্রিকেটার, সেরা ফিল্ডার তামিম ইকবাল। তার হাতটা এতটাই পিচ্ছিল হয়ে ছিল যে, সেই ক্যাচ অনায়াসেই ফসকে গেলো। ১০ রানের মাথায় বেঁচে গেলেন রোহিত শর্মা।

নটিংহ্যামে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের কাছ থেকে এভাবে জীবন পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও। মাত্র ১০ রানের মাথায় তার ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মন। সেই ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৬৬ রান। ১৫৬ রান বোনাস পেয়েছিলেন তিনি এবং অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩৮১ রান।

বাংলাদেশ জবাব দিতে নেমে গিয়েছিল ৩৩৩ রান পর্যন্ত। ওয়ার্নার যদি ওইদিন ওইভাবে সুযোগটা না পেতেন, তাহলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াতো? অস্ট্রেলিয়ার রান কি ৩৮১ হতে পারতো? বোনাস রানগুলো বাদ দিলে কিংবা তার অর্ধেকও যদি বাদ দেয়া হয়, তাহলে ওই ম্যাচে অনায়াসেই জিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ।

সেই একই ভুল আজ ভারতের বিপক্ষেও হলো এবং ওই একটি ভুলই পুরো ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াল। ১০ রানে জীবন পাওয়া রোহিত শর্মা তো আর ভুল করবেন না। সাবলীলভাবে, অনায়াস ভঙিতে ব্যাট চালিয়ে গেলেন এবং ৯০ বলে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। ৯২ বলে ১০৪ রান করে ফিরে যান। অর্থ্যাৎ ৯৪ রান বোনাস পেলেন রোহিত। ৯৪ রান বোনাস পেলো টিম ইন্ডিয়া।

তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেয়া হয়, রোহিত ওই সময় আউট হয়ে গেলে পরে ভারতের অন্য কেউ হয়তো এমন একটা ইনিংস খেলে দিতে পারতো। কিন্তু এটা তো সত্যি, রোহিত ওই সময় (দলীয় ১৮ রানের মাথায়) আউট হলে ভারত বিশাল একটা চাপে পড়ে যেতো। ১৮০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপটা হতো না।

১৮০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপটা না হলে কি অবস্থা হতো ভারতের? নিশ্চিত ২৭০ থেকে ২৮০ রানের মধ্যে বেঁধে রাখা যেতো বিরাট কোহলিদের। সুতরাং, হিসেব পরিস্কার, তামিমের ওই একটি ক্যাচ মিসই সত্যিকারার্থে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। বাংলাদেশকে ওই সময়ই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে ওই একটি ক্যাচ মিসই।

ম্যাচ শেষে তো ম্যাচের সেরা ভারতের রোহিত শর্মা বলেই দিয়েছেন, ‘আমি আসলে সৌভাগ্যবান ছিলাম যে ওই ক্যাচটি মিস হয়েছে।’ মাশরাফিও বলেছেন, ‘রোহিতের ক্যাচ ছাড়াটা ছিল সত্যিই হতাশাজনক।’

ব্যাট করতে নামার পর তামিমের কাছ থেকে একটা দায়িত্বশীল ইনিংস আশা করেছিল সবাই। কিন্তু ৩১ বল খেলে ২২ রান করে মোহাম্মদ শামির বলে যেভাবে তিনি বোল্ড হলেন, তাতে হতাশাটা আরও বেশি বেড়েছে। তামিম যদি ৮০-৯০ রানের একটা জুটিও উপহার দিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে আজ দিন শেষে জয়ী দলের নামটি থাকতো বাংলাদেশ।

হ্যাঁ, এটা বলতে পারে কেউ কেউ, ক্যাচ মিস তো খেলারই একটি অংশ। এটাকে এত বড় করে দেখার কি আছে? কিন্তু বিষয়টা যখন ম্যাচের ফল নির্ধারণে নির্ণায়ক হয়ে যায়, যখন তামিম ইকবালের মত একজন দায়িত্বশীল ক্রিকেটর এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন কোনো ভুল করে ফেলবেন, তখন এটাকে ক্ষমার যোগ্য দৃষ্টিতে দেখার উপায় নেই।

তামিমদের নিবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। নিজেদের উজাড় করে দিয়ে তারা খেলে যান সব সময়। এরই মধ্যে ভালো সময়, খারাপ সময় আসেই। কিন্তু ছোট-খাট একটা দুটা ভুলের কারণেই যে বিশাল পার্থক্য গড়ে ওঠে, এসব থেকে কবে বের হয়ে আসতে পারবে বাংলাদেশ?

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! এই ধারনা পুরোপুরি সত্যি প্রমানিত

আপডেট সময় : ০৮:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০১৯


খেলাধুুলা ডেস্কঃ
ক্রিকেটে স্বতসিদ্ধ একটি কথা আছে। ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ যদি মিস ফিল্ডিং করে, বিশেষ করে ক্যাচ মিস করে তখন বলা হয়, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস। তখন নাকি স্টিভ ওয়াহ গিবসকে বলেছিলেন, ‘বাপু, তুমি তো ম্যাচটাই ফেলে দিলে হাত থেকে।’ শেষ পর্যন্ত ১২০ রান করেছিলেন স্টিভ ওয়াহ এবং ওই ম্যাচে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিসের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে ক্রিকেটের ইতিহাসে। যার সর্বশেষ উদাহরণ তৈরি হলো আজ বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতকে শুরুতেই চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজের বলে স্কয়ার লেগের ওপর ক্যাচ তুলেছিলেন রোহিত শর্মা।



কিন্তু সেটি তালুবন্দী করতে পারলেন না বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা এবং সিনিয়র ক্রিকেটার, সেরা ফিল্ডার তামিম ইকবাল। তার হাতটা এতটাই পিচ্ছিল হয়ে ছিল যে, সেই ক্যাচ অনায়াসেই ফসকে গেলো। ১০ রানের মাথায় বেঁচে গেলেন রোহিত শর্মা।

নটিংহ্যামে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের কাছ থেকে এভাবে জীবন পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও। মাত্র ১০ রানের মাথায় তার ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মন। সেই ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত করেছিলেন ১৬৬ রান। ১৫৬ রান বোনাস পেয়েছিলেন তিনি এবং অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩৮১ রান।

বাংলাদেশ জবাব দিতে নেমে গিয়েছিল ৩৩৩ রান পর্যন্ত। ওয়ার্নার যদি ওইদিন ওইভাবে সুযোগটা না পেতেন, তাহলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াতো? অস্ট্রেলিয়ার রান কি ৩৮১ হতে পারতো? বোনাস রানগুলো বাদ দিলে কিংবা তার অর্ধেকও যদি বাদ দেয়া হয়, তাহলে ওই ম্যাচে অনায়াসেই জিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ।

সেই একই ভুল আজ ভারতের বিপক্ষেও হলো এবং ওই একটি ভুলই পুরো ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াল। ১০ রানে জীবন পাওয়া রোহিত শর্মা তো আর ভুল করবেন না। সাবলীলভাবে, অনায়াস ভঙিতে ব্যাট চালিয়ে গেলেন এবং ৯০ বলে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। ৯২ বলে ১০৪ রান করে ফিরে যান। অর্থ্যাৎ ৯৪ রান বোনাস পেলেন রোহিত। ৯৪ রান বোনাস পেলো টিম ইন্ডিয়া।

তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেয়া হয়, রোহিত ওই সময় আউট হয়ে গেলে পরে ভারতের অন্য কেউ হয়তো এমন একটা ইনিংস খেলে দিতে পারতো। কিন্তু এটা তো সত্যি, রোহিত ওই সময় (দলীয় ১৮ রানের মাথায়) আউট হলে ভারত বিশাল একটা চাপে পড়ে যেতো। ১৮০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপটা হতো না।

১৮০ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপটা না হলে কি অবস্থা হতো ভারতের? নিশ্চিত ২৭০ থেকে ২৮০ রানের মধ্যে বেঁধে রাখা যেতো বিরাট কোহলিদের। সুতরাং, হিসেব পরিস্কার, তামিমের ওই একটি ক্যাচ মিসই সত্যিকারার্থে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। বাংলাদেশকে ওই সময়ই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে ওই একটি ক্যাচ মিসই।

ম্যাচ শেষে তো ম্যাচের সেরা ভারতের রোহিত শর্মা বলেই দিয়েছেন, ‘আমি আসলে সৌভাগ্যবান ছিলাম যে ওই ক্যাচটি মিস হয়েছে।’ মাশরাফিও বলেছেন, ‘রোহিতের ক্যাচ ছাড়াটা ছিল সত্যিই হতাশাজনক।’

ব্যাট করতে নামার পর তামিমের কাছ থেকে একটা দায়িত্বশীল ইনিংস আশা করেছিল সবাই। কিন্তু ৩১ বল খেলে ২২ রান করে মোহাম্মদ শামির বলে যেভাবে তিনি বোল্ড হলেন, তাতে হতাশাটা আরও বেশি বেড়েছে। তামিম যদি ৮০-৯০ রানের একটা জুটিও উপহার দিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে আজ দিন শেষে জয়ী দলের নামটি থাকতো বাংলাদেশ।

হ্যাঁ, এটা বলতে পারে কেউ কেউ, ক্যাচ মিস তো খেলারই একটি অংশ। এটাকে এত বড় করে দেখার কি আছে? কিন্তু বিষয়টা যখন ম্যাচের ফল নির্ধারণে নির্ণায়ক হয়ে যায়, যখন তামিম ইকবালের মত একজন দায়িত্বশীল ক্রিকেটর এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন কোনো ভুল করে ফেলবেন, তখন এটাকে ক্ষমার যোগ্য দৃষ্টিতে দেখার উপায় নেই।

তামিমদের নিবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। নিজেদের উজাড় করে দিয়ে তারা খেলে যান সব সময়। এরই মধ্যে ভালো সময়, খারাপ সময় আসেই। কিন্তু ছোট-খাট একটা দুটা ভুলের কারণেই যে বিশাল পার্থক্য গড়ে ওঠে, এসব থেকে কবে বের হয়ে আসতে পারবে বাংলাদেশ?