ঢাকা ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলেজ ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১২:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯
  • ৫৪০ বার পড়া হয়েছে

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের অনার্স তৃতীয় (নতুন) বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াংকা সরকারের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে।

প্রিয়াংকা সরকার বিএম কলেজ রোডস্থ তালভিটা ২য় গলির (মসজিদ গলি) মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র খান ভিলা নামীয় পুরাতন ভবনের ২য় তলার একটি ছোট কক্ষে স্বামী সহ বসবাস করতেন (উল্লেখ্য খান ভিলায় ২টি ভবন, ১টি নতুন আরেকটি পুরাতন)।

প্রিয়াংকা সরকার উজিরপুর থানার কারফা গ্রামের মৃত গোলাপ সরকারের কন্যা, লেখা-পড়া করার কারণে কয়েক বছর যাবত বরিশাল শহরে বসবাস করছে।
প্রিয়াংকা সরকার প্রায় ২ বছর পূর্বে খান ভিলার পুরাতন ভবনের নিচ তলা সীমা ও অন্যান্য মেয়েদের সাথে মেস আকারে বসবাস শুরু করেন।

প্রিয়াংকা সরকার প্রায় ৯ মাস পূর্বে নিরব বিশ্বাসকে নিজ পছন্দে বিয়ে করে একই ভবনের ২য় তলায় একটি ছোট কক্ষে স্বামীসহ বসবাস শুরু করেন। স্বামী নিরব সরকার শহরের একটি স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণকার শ্রমিকের কাজ করেন। প্রিয়াংকা সরকরের তখনকার রুমমেট সীমা বলেন, প্রিয়াংকা নিজ পছন্দে বিয়ে করার কারনে পরিবারের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র বড় ছেলে খান তানভীর কয়েক বছর পূর্বে ব্রেন টিউমার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ছোট ছেলে সোহেল খান প্রয়াত বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলে আনন্দ এবং নিজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নতুন ভবনে বসবাস করেন এবং সোহেল খানের মা অর্থাৎ বেলায়েত হোসেন খান’র স্ত্রী পিয়ারা বেগম ভাড়াটিয়াদের সাথে বসবাস করেন।

বাড়িওয়ালী পিয়ারা বেগম যে কক্ষে বসবাস করেন উক্ত কক্ষের লাগোয়া একটি কক্ষে প্রিয়াংকা তার স্বামী সহ বসবাস করতেন। দুই কক্ষের মাঝে একটি দরজা রয়েছে যেটি উভয় দিক দিয়ে বন্ধ ও খোলার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রিয়াংকা সরকার যে ভবনে বসবাস করতেন সেই ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়া-প্রত্যক্ষদর্শী সীমা, উৎপল দাসের স্ত্রী উমা রানী ও মা রেবা রানী এবং মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র স্ত্রী মিসেস পিয়ারা বেগমদের বর্ণনায় জানা যায়,  ঘটনার দিন রাতে প্রিয়াংকা স্বামী নিরবের সাথে উক্ত কক্ষে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে প্রিয়াংকার স্বামী নিরব বিশ্বাস বাড়িওয়ালীর দরজা ধাক্কাতে থাকেন এবং বাড়িওয়ালীকে ডেকে বলেন যে, প্রিয়াংকা অসুস্থ হয়ে পড়েছে একটু আসেন।

বাড়িওয়ালী অত রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে পড়েন। তিনি অন্যান্য ভাড়াটিয়া সীমা, উমা রানী ও রেবা রানীকে ডেকে নিয়ে তাদেরসহ কক্ষে প্রবেশ করে। তারা দেখতে পান, প্রিয়াংকা বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে। স্বামী তাদেরকে জানায় যে, আচমকা ঘুম ভেঙে প্রিয়াংকাকে দেখতে না পেয়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে প্রিয়াংকাকে বাথরুম-রান্না ঘরের দরজার কাছে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে তুলে এনে বিছানায় রাখেন। নিরব তাদেরকে বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে প্রিয়াংকার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।

বাড়িওয়ালী জানান, কক্ষে প্রবেশ করে প্রিয়াংকা বিছানায় অচেতন অবস্থায় দেখে গায়ে হাত দিয়ে বেশ জ্বর দেখতে পাই। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। তাতে কোন কাজ হচ্ছে না দেখে রাত তিনটার দিকে একটি অটো ভাড়া করে প্রিয়াংকার স্বামী নিরব, ভাড়াটিয়া সীমা, উমা রানী ও রেবা রানীকে সহ মেডিকেলে নিয়া যাই। যাওয়ার পথে ২/৩টি খিচুনি দেয়।

মেডিকেলে নেয়া হলে প্রথমে তাকে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়, পরে সকালে নাক, কান, গলা বিভাগে পাঠানো হয়। সীমা, উমা রানী, রেবা রানী ও পিয়ারা বেগম জানান, সকালে প্রিয়াংকার গলায় লাল দাগ দেখা যায় তা দেখে মনে হচ্ছিল কোন কিছু দিয়ে গলায় প্যাঁচানো হয়েছে।

পিয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে সোহেল অন্য ভবনে থাকে। বিষয়টি খুব সিরিয়াস মনে হয়নি তাই রাতে তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানাইনি। সকালে এ অবস্থায় আমি আমার ছেলে সোহেলের কাছে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি আরও জানান, উমা রানী প্রিয়াংকার মোবাইল দিয়ে বাড়িতে সকাল ৫টার দিকে ফোন দিলে প্রিয়াংকার ভাই ফোন ধরলে তাকে বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা মেডিকেলে চলে আসে। তাঁরা আসলে উমা রানী ও রেবা রানী পরদিন সকালে বাসায় চলে আসে। পিয়ারা বেগম ২দিন পরে বাসায় আসে।

প্রিয়াংকার বান্ধবি খুশি ও তানজিল প্রিয়াংকার মাকে ফোন করে প্রিয়াংকার গলায় ফাঁস দেয়ার কথা বলেছেন, প্রিয়াংকার মা মেডিকেল বসে প্রিয়াংকার আগের রুমমেট সীমাকে এ কথা বলেছেন বলে সীমা জানিয়েছেন। খুশি একই গলিতে মমতা ভিলায় বসবাস করে।

প্রিয়াংকার অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকায় বসবাসকারী প্রিয়াংকার বোন ঢাকা থেকে বরিশাল এসে ৩ দিন পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রিয়াংকাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঘটনার ১৩ দিন পরে ১ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রিয়াংকা মারা যায়।

জানা গেছে প্রিয়াংকার স্বামী বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। এলাকার অন্যান্য প্রতিবেশিদের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা আত্মহত্যা বলেই ধারনা করছেন বলে জানান। প্রতিবেশি শহিদুল ইসলাম মন্টুর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, স্বামীর সাথে মনমালিন্যের কারণে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তিনি মনে করছেন বলে জানান।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

কলেজ ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

আপডেট সময় : ১২:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের অনার্স তৃতীয় (নতুন) বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াংকা সরকারের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে।

প্রিয়াংকা সরকার বিএম কলেজ রোডস্থ তালভিটা ২য় গলির (মসজিদ গলি) মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র খান ভিলা নামীয় পুরাতন ভবনের ২য় তলার একটি ছোট কক্ষে স্বামী সহ বসবাস করতেন (উল্লেখ্য খান ভিলায় ২টি ভবন, ১টি নতুন আরেকটি পুরাতন)।

প্রিয়াংকা সরকার উজিরপুর থানার কারফা গ্রামের মৃত গোলাপ সরকারের কন্যা, লেখা-পড়া করার কারণে কয়েক বছর যাবত বরিশাল শহরে বসবাস করছে।
প্রিয়াংকা সরকার প্রায় ২ বছর পূর্বে খান ভিলার পুরাতন ভবনের নিচ তলা সীমা ও অন্যান্য মেয়েদের সাথে মেস আকারে বসবাস শুরু করেন।

প্রিয়াংকা সরকার প্রায় ৯ মাস পূর্বে নিরব বিশ্বাসকে নিজ পছন্দে বিয়ে করে একই ভবনের ২য় তলায় একটি ছোট কক্ষে স্বামীসহ বসবাস শুরু করেন। স্বামী নিরব সরকার শহরের একটি স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণকার শ্রমিকের কাজ করেন। প্রিয়াংকা সরকরের তখনকার রুমমেট সীমা বলেন, প্রিয়াংকা নিজ পছন্দে বিয়ে করার কারনে পরিবারের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র বড় ছেলে খান তানভীর কয়েক বছর পূর্বে ব্রেন টিউমার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ছোট ছেলে সোহেল খান প্রয়াত বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলে আনন্দ এবং নিজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নতুন ভবনে বসবাস করেন এবং সোহেল খানের মা অর্থাৎ বেলায়েত হোসেন খান’র স্ত্রী পিয়ারা বেগম ভাড়াটিয়াদের সাথে বসবাস করেন।

বাড়িওয়ালী পিয়ারা বেগম যে কক্ষে বসবাস করেন উক্ত কক্ষের লাগোয়া একটি কক্ষে প্রিয়াংকা তার স্বামী সহ বসবাস করতেন। দুই কক্ষের মাঝে একটি দরজা রয়েছে যেটি উভয় দিক দিয়ে বন্ধ ও খোলার ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রিয়াংকা সরকার যে ভবনে বসবাস করতেন সেই ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়া-প্রত্যক্ষদর্শী সীমা, উৎপল দাসের স্ত্রী উমা রানী ও মা রেবা রানী এবং মরহুম এএসপি বেলায়েত হোসেন খান’র স্ত্রী মিসেস পিয়ারা বেগমদের বর্ণনায় জানা যায়,  ঘটনার দিন রাতে প্রিয়াংকা স্বামী নিরবের সাথে উক্ত কক্ষে অবস্থান করছিলেন। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে প্রিয়াংকার স্বামী নিরব বিশ্বাস বাড়িওয়ালীর দরজা ধাক্কাতে থাকেন এবং বাড়িওয়ালীকে ডেকে বলেন যে, প্রিয়াংকা অসুস্থ হয়ে পড়েছে একটু আসেন।

বাড়িওয়ালী অত রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে পড়েন। তিনি অন্যান্য ভাড়াটিয়া সীমা, উমা রানী ও রেবা রানীকে ডেকে নিয়ে তাদেরসহ কক্ষে প্রবেশ করে। তারা দেখতে পান, প্রিয়াংকা বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে। স্বামী তাদেরকে জানায় যে, আচমকা ঘুম ভেঙে প্রিয়াংকাকে দেখতে না পেয়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে প্রিয়াংকাকে বাথরুম-রান্না ঘরের দরজার কাছে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে তুলে এনে বিছানায় রাখেন। নিরব তাদেরকে বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে প্রিয়াংকার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।

বাড়িওয়ালী জানান, কক্ষে প্রবেশ করে প্রিয়াংকা বিছানায় অচেতন অবস্থায় দেখে গায়ে হাত দিয়ে বেশ জ্বর দেখতে পাই। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। তাতে কোন কাজ হচ্ছে না দেখে রাত তিনটার দিকে একটি অটো ভাড়া করে প্রিয়াংকার স্বামী নিরব, ভাড়াটিয়া সীমা, উমা রানী ও রেবা রানীকে সহ মেডিকেলে নিয়া যাই। যাওয়ার পথে ২/৩টি খিচুনি দেয়।

মেডিকেলে নেয়া হলে প্রথমে তাকে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়, পরে সকালে নাক, কান, গলা বিভাগে পাঠানো হয়। সীমা, উমা রানী, রেবা রানী ও পিয়ারা বেগম জানান, সকালে প্রিয়াংকার গলায় লাল দাগ দেখা যায় তা দেখে মনে হচ্ছিল কোন কিছু দিয়ে গলায় প্যাঁচানো হয়েছে।

পিয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে সোহেল অন্য ভবনে থাকে। বিষয়টি খুব সিরিয়াস মনে হয়নি তাই রাতে তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানাইনি। সকালে এ অবস্থায় আমি আমার ছেলে সোহেলের কাছে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তিনি আরও জানান, উমা রানী প্রিয়াংকার মোবাইল দিয়ে বাড়িতে সকাল ৫টার দিকে ফোন দিলে প্রিয়াংকার ভাই ফোন ধরলে তাকে বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা মেডিকেলে চলে আসে। তাঁরা আসলে উমা রানী ও রেবা রানী পরদিন সকালে বাসায় চলে আসে। পিয়ারা বেগম ২দিন পরে বাসায় আসে।

প্রিয়াংকার বান্ধবি খুশি ও তানজিল প্রিয়াংকার মাকে ফোন করে প্রিয়াংকার গলায় ফাঁস দেয়ার কথা বলেছেন, প্রিয়াংকার মা মেডিকেল বসে প্রিয়াংকার আগের রুমমেট সীমাকে এ কথা বলেছেন বলে সীমা জানিয়েছেন। খুশি একই গলিতে মমতা ভিলায় বসবাস করে।

প্রিয়াংকার অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকায় বসবাসকারী প্রিয়াংকার বোন ঢাকা থেকে বরিশাল এসে ৩ দিন পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রিয়াংকাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঘটনার ১৩ দিন পরে ১ জুলাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রিয়াংকা মারা যায়।

জানা গেছে প্রিয়াংকার স্বামী বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। এলাকার অন্যান্য প্রতিবেশিদের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা আত্মহত্যা বলেই ধারনা করছেন বলে জানান। প্রতিবেশি শহিদুল ইসলাম মন্টুর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, স্বামীর সাথে মনমালিন্যের কারণে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তিনি মনে করছেন বলে জানান।