নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদের হত্যাকারী চার কিশোর (ইনসেটে শুভ আহমেদ)। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক: গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক ফিউচার ম্যাপ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদকে (১৪) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যা করেছে চার কিশোর। শুভকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দেখলে নয়ন বন্ডের কথা মনে পড়ে যায়।
গত ৭ জুলাই বরগুনার নয়ন বন্ড স্টাইলেই টঙ্গীতে কিশোর গ্যাং পাপ্পু গ্রুপের হাতে শুভ খুন হয়। আর হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ চার কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব ১-এর সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- প্রধান আসামি মৃদুল হাসান পাপ্পু ওরফে পাপ্পু খান (১৭), সাব্বির আহম্মেদ (১৬), রাব্বু হোসেন (১৮) ও নূর মোহাম্মদ রনি (১৬)।
শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের পোড়াবাড়ি ব্যাব ১-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সাংবাদিকদের সামনে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাসেম।
এ সময় র্যাব কর্মকর্তাদের চোখও ভিজে ওঠে। র্যাব কার্যালয়ে উপস্থিত শুভ আহমেদের পিতা মাতার বুকফাটা আহাজারিতে গুমোট হয়ে আসে বাতাস।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, তুচ্ছ কারণে সুপরিকল্পিতভাবে শুভকে হত্যা করা হয়। খুনের নেতৃত্ব দেয় তারই সহপাঠী নবম শ্রেণির আরেক ছাত্র মৃদুল হাসান ওরফে পাপ্পু।
তিনি বলেন, ৬ মাস আগে নিহত শুভ ও পাপ্পুসহ ফিউচার ম্যাপ স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে ঢাকায় যায়। বাসে করে ফেরার পথে পাপ্পু তার এক বান্ধবীর সিটে বসলে বন্ধুবান্ধবরা হাসি তামাশা করে। এ সময় শুভ মোবাইল ফোনে ছবি তোলে। এতে ক্ষিপ্ত হয় পাপ্পু।
তিনি আরও বলেন, বাসের মধ্যেই তাদের দু’জনের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে অপমানের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাপ্পু। সে তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সাব্বির, রাব্বু ও রনিকে নিয়ে শুভকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে খুনের পরিকল্পনা করে তারা। এজন্য একাধিক ধারালো ছুরি ও চাকু সংগ্রহ করা হয়।
কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, ঘটনার দিন শুভ সেলুন থেকে চুল কেটে বের হওয়ার সময় তাকে ডেকে নেয় পাপ্পু গ্রুপের সদস্যরা। এরপর নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সুইস গিয়ার নামের ধারালো ছোরা দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়।
তিনি বলেন, বুকে পিঠে ছুরির অসংখ্য আঘাতে গুরুতর আহত শুভ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে পালিয়ে বাঁচতে দেয়া হয়নি। দৌড়ে জাপটে ধরে আরেক দফা তাকে কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শুভ। চিরদিনের জন্য জীবন প্রদীপ নিভে যায় তার।
র্যাব জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর টঙ্গী থানায় মামলা হলে রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত চার কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়।
শুভ খুনের সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছে র্যাব। এদের মধ্যে শাহদাত ওরফে কালা ওরফে রগকাটা কালা নামের এক যুবককে খোঁজা হচ্ছে।