ঢাকা ০৫:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সার্জেন্ট কিবরিয়াকে শেষ বিদায়

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯
  • ৪৩০ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯

যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে ভাড়াক্রান্ত মনে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও সহকর্মীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তাদের কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যান সমবেত মানুষ।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ বরিশাল নগরীর পুলিশ লাইন্স মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার স্ত্রী ট্রাফিক সার্জেন্ট মৌসুমি আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করতে থাকেন মৌসুমি আক্তার। স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় সেখানে এক বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত অনেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি।
পুলিশ লাইন্স মাঠে জানাজা শুরুর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান(বিপিএম-বার) বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মারা গেছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তার মৃত্যুতে শুধু বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নয়, গোটা বাহিনী শোকাহত। পরে তিনি গোলাম কিবরিয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। এরপর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান খান, জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবু রায়হান সালেহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মেয়াজ্জেম হোসেন ভুইঞা, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মোকতার হোসেন, উপ- পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. জাহাঙ্গীর মল্লিকসহ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অংশ নেন।
জানাজার নামাজ শেষে গোলাম কিবরিয়াকে গার্ড অব অনার ও সশস্ত্র সালাম জানায় মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর গোলাম কিবরিয়ার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তাকে এক নজর দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষারত মানুষ কফিনের কাছে ভিড় করেন।
মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পটুয়াখালীতে নিজ বড়ির উদ্দেশে মরদেহ নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। এ সময় চোখের জলে গোলাম কিবরিয়াকে কর্মস্থল থেকে শেষবিদায় জানান বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
পটুয়াখালীর সুবিদখালী র.ই সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় ইমামতি করেন চতরা ওলামা মঞ্জিল সালেহিয়া দিনিয়া কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাও. মো. মোতাহার হোসাইন সুফী সাহেব।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুরের দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া। কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন।
এ সময় কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল মিয়াসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

সার্জেন্ট কিবরিয়াকে শেষ বিদায়

আপডেট সময় : ১২:১৯:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯

বরিশাল, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯

যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে ভাড়াক্রান্ত মনে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও সহকর্মীদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তাদের কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যান সমবেত মানুষ।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ বরিশাল নগরীর পুলিশ লাইন্স মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার স্ত্রী ট্রাফিক সার্জেন্ট মৌসুমি আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বিলাপ করতে থাকেন মৌসুমি আক্তার। স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় সেখানে এক বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত অনেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি।
পুলিশ লাইন্স মাঠে জানাজা শুরুর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান(বিপিএম-বার) বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মারা গেছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তার মৃত্যুতে শুধু বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নয়, গোটা বাহিনী শোকাহত। পরে তিনি গোলাম কিবরিয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। এরপর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান খান, জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আবু রায়হান সালেহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মেয়াজ্জেম হোসেন ভুইঞা, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মোকতার হোসেন, উপ- পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. জাহাঙ্গীর মল্লিকসহ সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা অংশ নেন।
জানাজার নামাজ শেষে গোলাম কিবরিয়াকে গার্ড অব অনার ও সশস্ত্র সালাম জানায় মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর গোলাম কিবরিয়ার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তাকে এক নজর দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষারত মানুষ কফিনের কাছে ভিড় করেন।
মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পটুয়াখালীতে নিজ বড়ির উদ্দেশে মরদেহ নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। এ সময় চোখের জলে গোলাম কিবরিয়াকে কর্মস্থল থেকে শেষবিদায় জানান বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
পটুয়াখালীর সুবিদখালী র.ই সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় ইমামতি করেন চতরা ওলামা মঞ্জিল সালেহিয়া দিনিয়া কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাও. মো. মোতাহার হোসাইন সুফী সাহেব।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুরের দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া। কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন।
এ সময় কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল মিয়াসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।