ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাবা-ভাইকে কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দিতে পারলেন না স্বাধীন

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
  • ৩১৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ ফিরোজ কবির স্বাধীন, স্বাধীন নামেই সকলের পরিচিত সদা হাস্যজ্জল একটা মুখ। পড়ছিলেন দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটে নবম হওয়া এ মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা এখন শেষ দিকে। স্বপ্ন ছিল একাডেমিক পাঠ চুকিয়ে একটি ভালো চাকরি করার। দরিদ্র পরিবারের হালধরার। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। রাজধানী ঢাকায় মহামারি হয়ে দেখা দেয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সপ্তাহের মাথায় নিস্তব্ধ হয়ে গেল স্বাধীন।
তার আকস্মিক মৃত্যু হতবিহ্বল করেছে পরিবার বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সবাইকে। সদা হাস্যোজ্জ্বল স্বাধীন এখন আর আনন্দ-উল্লাসে মাতিয়ে তুলবে না চারদিক। ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষক বাবা ও ভাইকে আর কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দেয়ার আশ্বাসও দেবে না। মহামারি ডেঙ্গু পরিবারের সব আশা-ভরসা শেষ করে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন স্বাধীন। তার রুমমেট লোকপ্রশাসন বিভাগের সুমন রহমান বলেন, স্বাধীন ভাইয়েরা দুই ভাই ও দুই বোন। তিনি সবার ছোট। বড় ভাই ও বাবা কৃষিকাজ করেন। স্বাধীন ভাই কিছুদিন আগে তার বড় ভাইকে বলেছিলেন, ‘ধানের দাম কম ভাই। তোমারে আমি ক্ষেতে যাইতে দেব না। আমি ৭০ হাজার টাকার চাকরি করব। তোমাকে ভালো রাখব।’
স্বাধীনের বড় ভাই মৃত্যু সংবাদ শুনে গতকাল হাসপাতালের করিডোরে ছোট ভাইয়ের শেষ কথাগুলো মনে করে আহাজারি করছেন আর বলছেন, ভাই তোর কিছু করা লাগবে না। তুই আয়। আমি মাকে কী কমু।
সুমন রহমান জানান, গত ১৮ জুন স্বাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে তার পরিবার এসে তাকে দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফের ঢামেকে আনা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ততক্ষণে জানিয়ে দেন রোগী ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন ওভারকাম করছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এরপর পরিবার আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ২২ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুমন আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে স্বাধীনের উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ের উদ্দেশে রওনা হন জমি বিক্রি করতে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও পৌঁছানোর আগে মাঝপথেই ছেলের মৃত্যু সংবাদ পান বাবা।
এদিকে স্কয়ার হাসপাতালে ২২ ঘণ্টা চিকিৎসার জন্য স্বাধীনের চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাবে এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেখিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেখানে শুধু ওষুধবাবদই দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
সুমন রহমান বলেন, এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসুর নেতারা ২২ ঘণ্টায় এত টাকা কীভাবে বিল হয় তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ঠিকমতো দিতে পারেনি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা ছাড়াই রোগী রিলিজ দিয়েছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রক্ত ঝরিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই: হাসনাত

বাবা-ভাইকে কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দিতে পারলেন না স্বাধীন

আপডেট সময় : ০৫:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ ফিরোজ কবির স্বাধীন, স্বাধীন নামেই সকলের পরিচিত সদা হাস্যজ্জল একটা মুখ। পড়ছিলেন দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটে নবম হওয়া এ মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা এখন শেষ দিকে। স্বপ্ন ছিল একাডেমিক পাঠ চুকিয়ে একটি ভালো চাকরি করার। দরিদ্র পরিবারের হালধরার। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। রাজধানী ঢাকায় মহামারি হয়ে দেখা দেয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সপ্তাহের মাথায় নিস্তব্ধ হয়ে গেল স্বাধীন।
তার আকস্মিক মৃত্যু হতবিহ্বল করেছে পরিবার বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সবাইকে। সদা হাস্যোজ্জ্বল স্বাধীন এখন আর আনন্দ-উল্লাসে মাতিয়ে তুলবে না চারদিক। ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষক বাবা ও ভাইকে আর কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দেয়ার আশ্বাসও দেবে না। মহামারি ডেঙ্গু পরিবারের সব আশা-ভরসা শেষ করে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন স্বাধীন। তার রুমমেট লোকপ্রশাসন বিভাগের সুমন রহমান বলেন, স্বাধীন ভাইয়েরা দুই ভাই ও দুই বোন। তিনি সবার ছোট। বড় ভাই ও বাবা কৃষিকাজ করেন। স্বাধীন ভাই কিছুদিন আগে তার বড় ভাইকে বলেছিলেন, ‘ধানের দাম কম ভাই। তোমারে আমি ক্ষেতে যাইতে দেব না। আমি ৭০ হাজার টাকার চাকরি করব। তোমাকে ভালো রাখব।’
স্বাধীনের বড় ভাই মৃত্যু সংবাদ শুনে গতকাল হাসপাতালের করিডোরে ছোট ভাইয়ের শেষ কথাগুলো মনে করে আহাজারি করছেন আর বলছেন, ভাই তোর কিছু করা লাগবে না। তুই আয়। আমি মাকে কী কমু।
সুমন রহমান জানান, গত ১৮ জুন স্বাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে তার পরিবার এসে তাকে দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফের ঢামেকে আনা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ততক্ষণে জানিয়ে দেন রোগী ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন ওভারকাম করছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এরপর পরিবার আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ২২ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুমন আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে স্বাধীনের উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ের উদ্দেশে রওনা হন জমি বিক্রি করতে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও পৌঁছানোর আগে মাঝপথেই ছেলের মৃত্যু সংবাদ পান বাবা।
এদিকে স্কয়ার হাসপাতালে ২২ ঘণ্টা চিকিৎসার জন্য স্বাধীনের চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাবে এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেখিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেখানে শুধু ওষুধবাবদই দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
সুমন রহমান বলেন, এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসুর নেতারা ২২ ঘণ্টায় এত টাকা কীভাবে বিল হয় তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ঠিকমতো দিতে পারেনি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা ছাড়াই রোগী রিলিজ দিয়েছে।