মাহাবুব কবির মিলনঃ
পল্লী বিদ্যুৎ : পরিবর্তন দরকার অনেক। কমবে জনগণের ভোগান্তি। বাড়বে সংস্থার আয়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ তারা জাতীয় গ্রীড থেকে পায়, তা দিয়েই এটা করা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছা এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা।
গ্রামের একটি ফিডার সাধারণত ২/৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। যা শতশত ছোট ট্রান্সফর্মার (ছবিতে) দ্বারা অসংখ্য সেকশনে বিভক্ত থাকে। একই লাইনে একটি ট্রান্সফর্মার থেকে অন্য একটি ট্রান্সফর্মার এর মাঝের এলাকাকে একটি সেকশন বলা হয়।
একটু বড় গ্রামে সাধারণত ১০/১৫টি সর্বোচ্চ ট্রান্সফর্মার লাগানো থাকে। আমার গ্রাম থেকে ৩৩/১১ কেভি উপজেলা সাবস্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৫ কিমি। এই ফিডারের সর্বশেষ দূরত্ব হতে পারে ৭ কিমি।
এবার আসল সমস্যা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। মনে করুন ফিডারের ৭ কিমি দূরের সর্বশেষ সেকশনের ছলিমুদ্দিনের গাছের ডাল ভেংগে তারের উপর পড়ে আর্থ ফল্টে বিদ্যুৎ চলে গেল। ডাল কেটে লাইন চালু করতে ২/৩ ঘন্টা লাগবে। বিদ্যুৎ কর্মী আরও অনেক পড়ে এসে ফিডার শাট ডাউন নিয়ে (অফিসিয়ালি বিদ্যুৎ বন্ধের ব্যবস্থা) কাজ শুরু করে ৩ ঘন্টা পর লাইন চালু করল।
লাইন বন্ধ থাকল ৩ ঘন্টা। এই ফিডারের ক্ষমতা ২.৫ মেগাওয়াট। এই ২.৫ মেগাওয়াট ৩ ঘন্টা বন্ধের রেভিনিউ লস করল পল্লী বিদ্যুৎ।
অথচ বিদ্যুৎ কর্মী এসে কাজ শুরুর আগে দুই কদম এগিয়ে আগের ট্রান্সফর্মারের ফিউজ কেটে/ নামিয়ে দিয়ে সেকশন আউট (ছবিতে তীর চিহ্নিত) করে ফিডার চালু করতে পারত। তাহলে যেমন পুরো এলাকার বিদ্যুৎ চালু থাকত,
জনগণের ভোগান্তি কমে যেত। অপরদিকে সংস্থার লস কম হত, আয় বেড়ে যেত।
কয়েক বাড়ি এগিয়ে বা কিছু জমি পার হয়ে আগের ট্রান্সফর্মারের ফিউজ কাটার কষ্ট তারা করতে নারাজ।
সামান্য কষ্টের জন্য পল্লী বিদ্যুতের সেকশন আউট করে ফিডার চালু রেখে মেইন্ট্যানেন্স ওয়ার্ক করার রেকর্ড নেই বললেই চলে। যে কাজ আধা ঘন্টায় চলে সেটা নাহয় পুরো ফিডার বন্ধ রেখে করা যায়। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের এলাকা বড় হওয়ায় এবং গাছপালা বেশি থাকায় গাছপালা কাটা থেকে শুরু করে প্রায় সব মেইনট্যানেন্স ওয়ার্কেই ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যায়। এই দীর্ঘ সময় পুরো ফিডার বন্ধ রেখে কাজ করা হয়।
অভিযোগ কেন্দ্রে নাইট শিফট থাকা সত্বেও কোথাও রাতে কাজ করা হয় না। রাত নয়টা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত মেনট্যানেন্স ওয়ার্ক থাকে বন্ধ। কোন কারণে বা ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে সারারাত বিদ্যুৎ চালু হবার সুযোগ নেই। বাড়ল জনগণের ভোগান্তি, বাড়ল পল্লী বিদ্যুতের রাজস্ব ক্ষতি। অথচ এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে হাজার গুন ভাল এবং কর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকে।
আগের চেয়ে শতশত কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়ছে, কিন্তু লোকবল বাড়ানো হচ্ছে না।
গ্রীড থেকে দীর্ঘ ৩৩ কেভি পুরাতন সঞ্চালন লাইন, বিকল্প সার্কিটের অভাব, ওভারলোডেড সাবস্টেশন, বিতরণ বা ১১ কেভি লাইনের উপর প্রচুর গাছপালা, ইত্যাদির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভেসে গেলেও গ্রামের জনগণের সে সুফল পেতে হলে দরকার বিশাল পরিবর্তন।
বিদ্যুতের অভাব নেই, অথচ এসব কারণে গ্রামের জনগণের মারাত্মক বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে সরাসরি সরকারের উপর।