ঢাকা ০৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে ‘এইড বাংলা’র পক্ষ থেকে তাল বীজ রোপন

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৯
  • ৫১১ বার পড়া হয়েছে

l প্রিন্স তালুকদারঃ বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব রোধে সৃষ্ট দুর্যোগ ও বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বরিশালের লাকুটিয়ায় তাল বীজ রোপন করা হয়েছে। ‘এইড বাংলা’ নামক একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে বরিশালের লাকুটিয়া সড়কের নির্মানাধীন পঞ্চায়েত রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে এ তাল বীজ রোপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র উপদেষ্টা, বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম হাওলাদার, লাকুটিয়া পি আর সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবু আহম্মেদ আল মামুন, সমাজসেবক মামুন অর রশিদ, ‘এইড বাংলা’র চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য মোঃ সুমন মীর, মহাসচিব ও বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির, যুগ্ন মহাসচিব সাইফুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) আবদুর রাজ্জাক সুমন মল্লিক, বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পরিচালক আবুল হাসানাত, পরিচালক মাওলানা তোফাজ্জেল হোসেন, মাওলানা সরোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, রুহুল আমিন (লিটন হাওলাদার), নাসির উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, সুমন মোল্লা, মুজাম্মেল কাজী, আরিফুর রহমান হাওলাদার, খোকন কাজী, আরিফুর রহমান, ফয়ছাল আহম্মেদ, ফাহাদ হাসান, হাবীবুর রহমান, জুয়েল গাজী, সুমন মাঝি, আব্বাস ঢালী, শাওন মোল্লা, ইমরান হোসেন, নির্বাহী পরিচালক প্রিন্স তালুকদার ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ বিষয়ে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য মোঃ সুমন মীর বলেন, তাল বীজ রোপন কর্মসূচি হিসেবে প্রায় এক হাজার বীজ রোপন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে আজ বরিশালের লাকুটিয়া সড়কের নির্মানাধীন পঞ্চায়েত রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে এ তাল বীজ রোপন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে তাল বীজ রোপন করা হবে। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র মহাসচিব ও বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বজ্রপাতের পরিমান আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ও ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্বে বজ্রপাতের কারনে মৃত্যু ঘটনায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষে উঠে এসেছে। আর একারণেই গুরুত্বহীন তালগাছের গুরুত্বও বেড়ে গেছে। কারন তালগাছ বজ্র নিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্রামেগঞ্জে প্রচুর পরিমানে তালগাছ গাছ থাকলে বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। শক্ত মজবুত গভীরমূলী বৃক্ষ বলে ঝড়তুফান, টর্নেডো, বাতাস প্রতিরোধ এবং মাটি ক্ষয় রোধে তাল গাছের ভুমিকা অনস্বীকার্য। জনমনে প্রচলিত আছে, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনও বড় গাছের ওপর পড়তো। আর বজ্রপাতের বিদ্যুৎ রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যেত। এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হতো না। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র নির্বাহী পরিচালক প্রিন্স তালুকদার বলেন, থাইল্যান্ডে তাল গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুও সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে লাগানো হয়েছে ৩০ লাখের বেশি তালগাছ। শক্ত মজবুত আর দীর্ঘজীবী হওয়ায় শিশু, আম, জাম গাছের পরিবর্তে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর, পতœীতলা ও ধামড়হাট উপজেলার রাস্তার দুইপাশে লাগানো হয়েছে এসব তালগাছ। প্রকৃতির শোভা সুরক্ষায় সড়কের পাশে তালগাছ লাগিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন নড়াইলের লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ ইরোজ স্যার। ১৯৮৫ সালে ইরোজ স্যার উপজেলার রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে তিন হাজার তালের বীজ রোপন করলে দুই হাজার গাছ বাঁচে। ২০০১ সালে দুই হাজার বিচিতে এক হাজার তিনশত গাছ, ২০১৩ সালে পনের হাজার বিচিতে আট হাজার গাছ বড় হতে থাকে। ধারাবাহিকভাবে বাড়ি বাড়ি থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে প্রতি বছরই নড়াইল লোহাগড়া, লহুড়িয়া, কুন্দশী, পাচুড়িয়া, ইতনা-ধলইতলা, কাশীপুর, রাজপুর, কালনা, ও কুন্দশী-মঙ্গলহাটা সড়কসহ নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে কমবেশি করে লাগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবেশপ্রেমী এই মহান শিক্ষক ব্যাংকে স্ত্রীর সঞ্চিত ১ লক্ষ টাকাও তালগাছ লাগানোর পেছনে খরচ করেছেন। তিনি নিজ হাতে যতœসহকারে গাছ লাগান এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্য করেন। তালগাছের সুদিন ফিরিয়ে আনতে যশোরের কয়েক যুবক ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলার মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙা গ্রামের উদ্যমী যুবক নাঈম রেজা। এই যুবক পৃথিবীর বৃহত্তম তালের সারি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের ধারে তালের আঁটি রোপন করেছেন। ২০১৪ সালের প্রথম মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলা বাজার এলাকার ফকিরের রাস্তা থেকে রাজগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে ছয় হাজারের বেশি তালের আঁটি রোপনের মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। ২০১৫ সালে নিজ গ্রাম হাসাডাঙা থেকে কেশবপুরের মধ্যকুল এলাকা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার পাশে ছয় হাজার তালের আঁটি রোপন করেছিলেন। ২০১৬ যশোর-রাজগঞ্জ-সাতক্ষীরা ৭৫ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ১২ কিলোমিটারের বেশি অংশে ছয় হাজার তালের আঁটি লাগানো সম্পন্ন হয়েছিল। রাস্তার বাকি অংশে লাগানোর কাজও অব্যাহত রেখেছেন। তালগাছ প্রেমী নাঈম রেজার সহযোগিতায় আছেন তার বন্ধু সরোয়ার হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আশিকুর রহমান, সোহেল রানা। এই যুবকেরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুপাশে গহের আলীর তাল গাছের সারির ওপর প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হন। নওগাঁ জেলার ভিমপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের শতোর্ধ বয়সী বৃদ্ধ গহের আলীর তালগাল লাগানোর খবর ২০০৯ সালের ৩০ জানুয়ারি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে। ভিক্ষুক বৃদ্ধ গহের আলীর সামর্থ্য ছিল না অন্য ফলজ বা দামি বনজ গাছের চারা কেনার। তিনি চাল-ডাল আর তালের আঁটি ভিক্ষে হিসেবে সংগ্রহ করে আঁটি পুঁতে দিয়েছিলেন সরকারি রাস্তার দুই পাশে। প্রখর রোদে পথচারীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে গহের আলীর তালগাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের ভিমপুর ইউনিয়নের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে যে তালগাছগুলো তার সবই গহের আলীর লাগানো। ইত্যাদিতে প্রচারের পর সেই বছরেরই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিবেশ পদক-২০০৯ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ গ্রহন করেন। ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মানুষ ইচ্ছা করলে সমাজ ও দেশকে কতভাবেই না কতকিছু দিতে পারে। গহের আলী, ইরোজ স্যার এবং নাঈম রেজার মতো হয়তো আরো অনেকেই নিভৃতে এমন সামাজিক কাজ করে চলেছেন। জলবায়ুর পরিবর্তনে আবহাওয়ার বিপর্যয়ে প্রকৃতির নির্দয় প্রতিশোধ বজ্রপাত থেকে জানমালের রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপন এখন সময়ের দাবী।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

বরিশালে ‘এইড বাংলা’র পক্ষ থেকে তাল বীজ রোপন

আপডেট সময় : ০৭:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৯

l প্রিন্স তালুকদারঃ বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব রোধে সৃষ্ট দুর্যোগ ও বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বরিশালের লাকুটিয়ায় তাল বীজ রোপন করা হয়েছে। ‘এইড বাংলা’ নামক একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে বরিশালের লাকুটিয়া সড়কের নির্মানাধীন পঞ্চায়েত রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে এ তাল বীজ রোপন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র উপদেষ্টা, বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম হাওলাদার, লাকুটিয়া পি আর সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবু আহম্মেদ আল মামুন, সমাজসেবক মামুন অর রশিদ, ‘এইড বাংলা’র চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য মোঃ সুমন মীর, মহাসচিব ও বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির, যুগ্ন মহাসচিব সাইফুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) আবদুর রাজ্জাক সুমন মল্লিক, বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালের পরিচালক আবুল হাসানাত, পরিচালক মাওলানা তোফাজ্জেল হোসেন, মাওলানা সরোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, রুহুল আমিন (লিটন হাওলাদার), নাসির উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, সুমন মোল্লা, মুজাম্মেল কাজী, আরিফুর রহমান হাওলাদার, খোকন কাজী, আরিফুর রহমান, ফয়ছাল আহম্মেদ, ফাহাদ হাসান, হাবীবুর রহমান, জুয়েল গাজী, সুমন মাঝি, আব্বাস ঢালী, শাওন মোল্লা, ইমরান হোসেন, নির্বাহী পরিচালক প্রিন্স তালুকদার ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ বিষয়ে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য মোঃ সুমন মীর বলেন, তাল বীজ রোপন কর্মসূচি হিসেবে প্রায় এক হাজার বীজ রোপন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে আজ বরিশালের লাকুটিয়া সড়কের নির্মানাধীন পঞ্চায়েত রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে এ তাল বীজ রোপন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে তাল বীজ রোপন করা হবে। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র মহাসচিব ও বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বজ্রপাতের পরিমান আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ও ঝুঁকি বেড়েছে। বিশ্বে বজ্রপাতের কারনে মৃত্যু ঘটনায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষে উঠে এসেছে। আর একারণেই গুরুত্বহীন তালগাছের গুরুত্বও বেড়ে গেছে। কারন তালগাছ বজ্র নিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্রামেগঞ্জে প্রচুর পরিমানে তালগাছ গাছ থাকলে বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। শক্ত মজবুত গভীরমূলী বৃক্ষ বলে ঝড়তুফান, টর্নেডো, বাতাস প্রতিরোধ এবং মাটি ক্ষয় রোধে তাল গাছের ভুমিকা অনস্বীকার্য। জনমনে প্রচলিত আছে, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনও বড় গাছের ওপর পড়তো। আর বজ্রপাতের বিদ্যুৎ রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যেত। এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হতো না। সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এইড বাংলা’র নির্বাহী পরিচালক প্রিন্স তালুকদার বলেন, থাইল্যান্ডে তাল গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুও সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে লাগানো হয়েছে ৩০ লাখের বেশি তালগাছ। শক্ত মজবুত আর দীর্ঘজীবী হওয়ায় শিশু, আম, জাম গাছের পরিবর্তে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর, পতœীতলা ও ধামড়হাট উপজেলার রাস্তার দুইপাশে লাগানো হয়েছে এসব তালগাছ। প্রকৃতির শোভা সুরক্ষায় সড়কের পাশে তালগাছ লাগিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন নড়াইলের লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদ ইরোজ স্যার। ১৯৮৫ সালে ইরোজ স্যার উপজেলার রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে তিন হাজার তালের বীজ রোপন করলে দুই হাজার গাছ বাঁচে। ২০০১ সালে দুই হাজার বিচিতে এক হাজার তিনশত গাছ, ২০১৩ সালে পনের হাজার বিচিতে আট হাজার গাছ বড় হতে থাকে। ধারাবাহিকভাবে বাড়ি বাড়ি থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে প্রতি বছরই নড়াইল লোহাগড়া, লহুড়িয়া, কুন্দশী, পাচুড়িয়া, ইতনা-ধলইতলা, কাশীপুর, রাজপুর, কালনা, ও কুন্দশী-মঙ্গলহাটা সড়কসহ নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে কমবেশি করে লাগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবেশপ্রেমী এই মহান শিক্ষক ব্যাংকে স্ত্রীর সঞ্চিত ১ লক্ষ টাকাও তালগাছ লাগানোর পেছনে খরচ করেছেন। তিনি নিজ হাতে যতœসহকারে গাছ লাগান এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্য করেন। তালগাছের সুদিন ফিরিয়ে আনতে যশোরের কয়েক যুবক ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলার মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙা গ্রামের উদ্যমী যুবক নাঈম রেজা। এই যুবক পৃথিবীর বৃহত্তম তালের সারি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের ধারে তালের আঁটি রোপন করেছেন। ২০১৪ সালের প্রথম মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলা বাজার এলাকার ফকিরের রাস্তা থেকে রাজগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে ছয় হাজারের বেশি তালের আঁটি রোপনের মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। ২০১৫ সালে নিজ গ্রাম হাসাডাঙা থেকে কেশবপুরের মধ্যকুল এলাকা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার পাশে ছয় হাজার তালের আঁটি রোপন করেছিলেন। ২০১৬ যশোর-রাজগঞ্জ-সাতক্ষীরা ৭৫ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ১২ কিলোমিটারের বেশি অংশে ছয় হাজার তালের আঁটি লাগানো সম্পন্ন হয়েছিল। রাস্তার বাকি অংশে লাগানোর কাজও অব্যাহত রেখেছেন। তালগাছ প্রেমী নাঈম রেজার সহযোগিতায় আছেন তার বন্ধু সরোয়ার হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আশিকুর রহমান, সোহেল রানা। এই যুবকেরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুপাশে গহের আলীর তাল গাছের সারির ওপর প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হন। নওগাঁ জেলার ভিমপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের শতোর্ধ বয়সী বৃদ্ধ গহের আলীর তালগাল লাগানোর খবর ২০০৯ সালের ৩০ জানুয়ারি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে। ভিক্ষুক বৃদ্ধ গহের আলীর সামর্থ্য ছিল না অন্য ফলজ বা দামি বনজ গাছের চারা কেনার। তিনি চাল-ডাল আর তালের আঁটি ভিক্ষে হিসেবে সংগ্রহ করে আঁটি পুঁতে দিয়েছিলেন সরকারি রাস্তার দুই পাশে। প্রখর রোদে পথচারীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে গহের আলীর তালগাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের ভিমপুর ইউনিয়নের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে যে তালগাছগুলো তার সবই গহের আলীর লাগানো। ইত্যাদিতে প্রচারের পর সেই বছরেরই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিবেশ পদক-২০০৯ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ গ্রহন করেন। ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মানুষ ইচ্ছা করলে সমাজ ও দেশকে কতভাবেই না কতকিছু দিতে পারে। গহের আলী, ইরোজ স্যার এবং নাঈম রেজার মতো হয়তো আরো অনেকেই নিভৃতে এমন সামাজিক কাজ করে চলেছেন। জলবায়ুর পরিবর্তনে আবহাওয়ার বিপর্যয়ে প্রকৃতির নির্দয় প্রতিশোধ বজ্রপাত থেকে জানমালের রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছ রোপন এখন সময়ের দাবী।