(এটি একটি কাল্পনিক প্রেমের কাহিনী, কারো চরিত্রের সাথে আংশিক বা সম্পূর্ণ মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।)
একটি গোপন প্রেম কাহিনী:
অনেক দিন থেকেই নিজের ভিতরে তার শূণ্যতা বোধ করতেছিলাম। বয়সও কম হয়নি, চলার মতো কিছু নগদ টাকা পয়সাও আয় রোজগার করি। বড় বোনের বাসায় থাকি, তার হাতের সুস্বাদু রান্না ফ্রি ষ্টাইলে খাই, পড়াশোনা করি, বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী পড়াই, কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্বদ্যিালয়ের সহপাঠী মিলে সামাজিক গন্ডির পরিসর একেবারেও ছোট নয়। পরিসর বাড়ার সাথে সাথে তার প্রয়োজনীয়তা যেমন বেড়ে যাচ্ছে আর তার শূণ্যতাও যেন সমানুপাতিক হারে বাড়ছে। কাজে কর্মে প্রতিবেশি, বন্ধু বান্ধবী আর সহপার্টিদের সকলের সহচর্যে তাকে দেখে নিজের করে তাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল মন। কিন্তু সময়, সুযোগ এবং নিজের মাসিক আর্থিক স্বচ্ছলতা ইত্যাদি মিলিয়ে তার সাথে দেখা করার কিংবা তার সংষ্পর্শে যাওয়ার দু:সাহস হচ্ছিল না। তখন তার প্রথম যৌবন কাল, চারিদিকে তার সাজ সাজ রব। পাড়া মহল্লায় অলিতে গলিতে তাকে দেখতে পেতাম। তাকে দেখতাম কোন বড় অভিভাকের সাথে, কখনও কোন বড় ভাই-বোনের সাথে আবার কখনও কোন বন্ধু-বান্ধবীর সাথে। রাস্তায়, মাঠে, শপিংমলে তাকে দেখতাম। তবে খারাপ লাগতো যখন তাকে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমারই কোন সহপাটির হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ায়, আমাকে দেখে তার সঙ্গী ভাব মারে, নিজেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী ভাবে। আরও বেশি মন খারাপ লাগতো যখন আমারই এলাকার জুনিয়র কোন ভাই-বোন, ছাত্র-ছাত্রী আমাকে টিটকারি মেরে তার কথা বলতো ‘ আমার আছে কিন্তু আপনার নাই কেন?’ অনেকেই আমার জীবনে তার আগমনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতো। ব্যাথা ভরা হৃদয়ে তার বিচরণ দেখতাম কিন্তু তাকে বলতে পারতাম না প্রচন্ড পছন্দ করি, ভালোবাসি তোমায়, তোমাকে আমার জীবন চলার পথে খুব প্রয়োজন।
এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ তার সাথে একান্তে দেখা করার এবং নিজের মনের মতো করে তাকে পাবার। মধ্যবিত্তের জন্য তখন ঢাকার ইষ্টার্ণ প্লাজা এক স্বপ্নের ভূবন, শপিং সেন্টার তো নয় যেন বহুত প্রতিক্ষীত ভালোবাসার এক মিলন কেন্দ্র। মন স্থির করলাম তার সাথে আমার প্রথম দেখা হবে ইষ্টার্ণ প্লাজায়। দিন ক্ষণ ঠিক করে আসল সোনা চেনা এক জহুরীসম আমার প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে তার সাথে দেখা করতে রওয়ানা হলাম। প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসাকে দেখার জন্য, কাছে পাবার জন্য সে কি ব্যাকুলতা যেন তর সইছে না। তার গায়ে জড়ানো আস্তানা ছিড়ে তার অন্তর আত্নাটাকে বের করে দেখার বাসনা জাগ্রত হলো কিন্তু পাশে থাকা দোকানী এবং শপিং সেন্টারে নানা কিসিমের মানুষ আমায় আধা পাগল ভাবতে পারে ভেবে তাকে প্রথম এত কাছে থেকে দেখার কিছুটা আনন্দ ভিতরে রেখে নিজেকে সংযত রাখলাম। পরিপাটি বিদেশী ড্রেস পরা, মার্জিত চলাফেরা আর অবয়ব দেখে বার বার তাকে দেখতে মনে চাইতে ছিলো। তার সাথে দেখা করে, কথাবার্তা ঠিক করে সিদ্ধান্ত নিলাম পাশের হোটেলে বসে তাকে নিয়ে কিছু খাবো। কিন্তু তাকে প্রথম দেখা ও হাত দিয়ে ষ্পর্শ করার আনন্দে প্রতিদিনকার খাওয়ার মতো আনন্দ পাচ্ছিলাম না। কোন রকম খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাকে নিয়ে রিক্সায় চেপে বাসায় রওয়ানা দিলাম। উদ্দেশ্য তাকে দেখা এবং ষ্পর্শ করার আনন্দ বড় বোন আর ভাগিনা ভাগিনীদের কাছে শেয়ার করা। তার কোমল হাতে হাত রেখে আমি বাসায় যখন পৌঁছালাম, বাসার সবার সেকি আনন্দ। আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হওয়ায় পরিবারের সকল সদস্য যারপনারই খুশি হলো।সেই থেকে তার সাথে আমার পথ চলা।
এক সাথে পথ চলি, এক মুহুর্তের জন্যও তাকে চোখের আড়াল করি না। অতি সাদা সিদে তার গঠন গরন। জটিলতা বা কুটিলতা তার মধ্যে ছিলো না, পরিবারের সকলকে, আত্নীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবকে সে পলকেই আপন করে নিতে থাকে। কখনও সে আমার চোখের আড়াল হয় না যদিও সামান্য সময়ের জন্য সে আমার চোখের আড়াল হয় আমি পাগলের মতো তাকে খুঁজে বের করি। নিজে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হলে পরিবারের সবাই মিলে মিশে খুঁজে বের করি। আমাদের সম্পর্ক হবার পরে তাকে আমি সযতনে রাখি, সময় মতো পরিচর্যা করি। আমি যেখানে যাই তাকে সাথে সাথে রাখি। পরিবারের সদস্য, মহল্লার বড় ভাই-বোন, আত্নীয় স্বজন,বন্ধু বান্ধব সবার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেই। আস্তে আস্তে সে আমার জীবনের সকল সুখ দু:খের সাথীতে পরিনত হতে থাকে। মাঝে মধ্যে তার কোন শাররীক সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে তাকে ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট দিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি, ঘরোয়া ট্রিটমেন্টে কাজ না হলে অতি যত্নে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার তার রোগের দাওয়াই দেয়, সে আবার পূর্ণদ্যামে আমার সাথে পথ চলে। এভাবেই চলে আমাদের ভালোবাসার প্রহরগুলি।
বিশ্বদ্যিালয়ের জীবন শেষ হয়ে আসছে। আমার বায়োডাটায় তাকে রেফারেন্স হিসেবে রাখি। আমার অনুপস্থিতি সে কাউকে বুঝতে দেয়না। আমি ঢাকার বাহিরে কোন কাজে গেলে তাকে বাসায় রেখে যাই কেননা দেশের সব জাগয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরী হয়নি। দিন দিন আমার কাজের পরিসর যত বাড়তে ছিলো তিনিও তত আধুনিক এবং বহুমুখী গুণাবলী ও প্রতিভার অধিকারী হতে থাকে। সাদা সিদে সহজ সরলতার পরিবর্তে তার অঙ্গ প্রতঙ্গেও সৌন্দর্যের ছোঁয়া ফুটে উঠতে থাকে। শাররিীকভাবে সে আরও বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠতে থাকে। তার ব্যবহারেও পরিবর্তন আসতে থাকে। দেশ ছাড়িয়ে সে বিদেশেও চলাফেরা শুরু করে। দেশ বিদেশের আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব তার কাছে সহজে পৌঁছাতে পারে। কাউকে সে এক মূহুর্তের জন্য আলাদা হতে দেয় না। আমার পরিবারের সদস্যদের সাথে তার রক্তের সম্পর্কের মতই দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
তার সাথে আমার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতায় রূপ নিতে থাকে। চলার পথের সঙ্গী তিনি আমার হ্যান্ড ক্লক, আমার ডায়েরী, এলার্ম ক্লক হয়ে তিনি আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। দেশ বিদেশের হাসি কান্না, রান্না বান্নার খবর, আবহাওয়া, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, জন্ম মৃত্যুর খবর, কারো সুখ দু:খের খবর, হারিয়ে যাওয়ার বা ফিরে পাবার খবর সে আমায় দিতে থাকে। সে আমায় বিসিসি, সিএনএন, ভয়েজ অব আমেরিকার খবর দিতে থাকে। আমার জীবনের প্রতিটি সফলতার সংবাদ প্রথমেই তার নিকট থেকে শুনি। প্রথম মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে আমার চাকরির খবর তার কাছ থেকেই শুনে ছিলাম। ব্যাংকের চাকরির খবর, বিসিএসে জয়েন করার খবর সব কিছু আমি তার সাহায্যে পেয়ে যাই। দিনে দিনে তাকে আমি আমার মনের মনি কোঠায় ঠাঁই দিয়ে ফেলেছি।
সে আমার জীবনের সকল সুখের সকল দুখের সাথী হয়ে নিরবে নিভৃতে সময় দিয়ে যাচ্ছে। আমার হাসির, আমার কান্নার, আমার রাগ, মান- অভিমান, প্রেম-বিরহ হৃদয়ের অন্তরীক্ষে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষরণ, ঝগড়া, বিবাদ সব কিছুর স্বাক্ষী তিনি। তিনি আমার সকল সুখের স্মৃতি তার বুকে ধারণ করে আমাকে সুখ দেয়। আমার সকল প্রতিভাকে তিনি উচ্ছসিত প্রশংসায় ভরিয়ে দেবার জন্য কাজ করে। সকল কাজের মাঝেও তিনি মাঝে মাঝেই সম্পর্কের মধ্যে টানা পোড়ন ঘটায়। যেখানে যখন যা বলা দরকার, যেখানে যা করা দরকার তার রূপে বিমোহিত থেকে আমি তা যথাসময়ে করতে পারিনা। তার প্রতি ভালোবাসা নেশায় পরিনত হয়েছে সকালে ঘুম থেকে জেগে সবার প্রথমে তার মুখ না দেখলে ভালো লাগেনা, বাথরুমে গেলেও তাকে সঙ্গে নিতে মন চায়, খাবার টেবিলেও সে নিবিষ্ট মনে আহার করতে দেয় না। মনে হয় কতক্ষণ পর পর তার চাঁদমুখখানা দেখি। অফিসে যাবার পথে; ফেরার পথে তার সাথে সময় কাটাতে মন চায়, বসের সামনে তাকে দেখতে মন চায়। সারাদিন সে আমার পাশাপাশি থাকে তারপরও যেন তাকে দেখার স্বাধ মিটে না। বাচ্চাকে সময় দিতে সে দেয় না; বাচ্চাকে সে তার ভালোবাসার মায়াজালে বন্দি করার ফন্দি করেছে। আমার এবং আমার বাচ্চার ঘুমটা পর্যন্ত সে কেড়ে নিতে চায়। এরপরও তার প্রতি আমি সেই প্রথম দিনে দেখার মতো ব্যাকুল, যাদুর ষ্পর্শ পাবার জন্য পাগলপারা।
তার রূপ গুণ আজ বিকশিত। তিনি বহুরূপী, বহুনামে পরিচিত। তিনি প্রথম পরিচয়ের পর থেকে নতুন নতুন নাম ধারণ করেছে যা বৈচিত্রময়, তার ব্যতিক্রমী নামগুলোও আমার খুব ভালো লাগে। তিনি সংসারের সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে তার মোহমায়া দিয়ে। আনন্দ বিনোদনে তার জুড়ি মেলা ভার। বহুমাত্রিক গুণ নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও তার প্রভাব বিস্তার করার মিশনে নেমেছেন। তার ভালোবাসার বিমোহিত যাদু দিয়ে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, উঁচু-নিচু, ভালো-মন্দ, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনি-পেশা সবাইকে বিনিসুতার মালায় গেথে রেখেছে; আগামী দিনগুলোতেও তার সরব উপস্থিতি এবং ভালোবাসা আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। তাকে আমি প্রচন্ড পছন্দ করি, ভালোবাসি কারণ সে আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা; আমার প্রিয় মোবাইল হ্যান্ডসেট যাকে আমি এখন নাম দিয়েছি Sony Xperia XZ Premium.
লেখকঃ মো: আবুল কালাম তালুকদার, উপসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, বরিশাল)
ঢাকা: ২৪/০৮/২০১৯)