ঢাকা ০৯:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মসজিদে ইমামের কক্ষ থেকে ইমামের ছেলেসহ তিন শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৯
  • ২০৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ আল নোমান (৫), রিফাত হোসেন (১৫) ও মো. ইব্রাহীম (১২) নামে ৩ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মতলব পৌরসভার পূর্ব কলাদি জামে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে এই তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ‘রহস্যজনক’ মনে করছে পুলিশ। আগামীকাল শনিবার হতভাগা এই তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। এমন মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নিহত নোমান পূর্ব কলাদি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জামাল উদ্দিনের ছেলে, রিফাত হোসেন মতলব দক্ষিণের উত্তর নুলুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে এবং মো. ইব্রাহীম একই নাটশাল গ্রামের মৃত কামাল পাটওয়ারীর ছেলে। এর মধ্যে রিফাত ও ইব্রাহীম মতলব দক্ষিণের ভাঙ্গারপাড় মাদ্রাসার ছাত্র। এদের মধ্যে রিফাত জুমার নামাজের আজান দিয়েছিল। যে কক্ষ থেকে তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে পুরোনো একটি আইপিএস ও ব্যাটারি ছিল। যা থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। উপস্থিত কেউ কেউ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ধারণা করছেন, বন্ধ কক্ষে এসিডের উৎকট গন্ধে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ওই তিন শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
ইমাম জামাল উদ্দিন জানান, ৫ বছরের শিশু সন্তান নোমানকে তার কক্ষে রেখে নামাজ পড়াতে যান। নামাজ শেষে তার কক্ষে প্রবেশ করতে গেলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পান। পরে পাশের জানালা দিয়ে দেখেন তার সঙ্গে আরো ২ শিশু অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় দরজা ভেঙে ইমামসহ উপস্থিত মুসল্লিরা অচেতন অবস্থায় ৩ শিশুকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে নোমান ও রিফাতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন এবং কিছুক্ষণ পরে ইব্রাহীম মারা যায়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি শামীম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক গাজী বলেন, তাদের মসজিদ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা কারো সঙ্গে বিরোধ নেই। তবে কি করে এমন ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে তারাও চিন্তিত। শিশু নোমানের বাবা জসিম উদ্দিন জানান, কীভাবে এমন সর্বনাশ হলো তা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এখনো তার শিশু সন্তানের মৃত্যু নিয়ে কাউকে দায়ী করছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, তিন শিশুর শরীরে কোনো ধরনের আঘাত বা কাঁটাছেড়ার চিহ্ণ নেই। তবে তিনি ধারণা করছেন, কোনোর ধরণের বিষক্রিয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তারা মারা গেছে। মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, তিন শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত ছাড়া আপাতত আর কিছু বলা যাবে না। এই ঘটনায় মসজিদের ইমাম জামাল উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সত্যি রহস্যজনক। কারণ তাদের কারো শরীরে কোনো ধরণের আঘাত কিংবা জখমের চিহৃ নেই। তারপরও ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা রুজু হয়নি। ঘটনার পর থেকে পূর্ব কলাদি জামে মসজিদ এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রক্ত ঝরিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই: হাসনাত

মসজিদে ইমামের কক্ষ থেকে ইমামের ছেলেসহ তিন শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার

আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৯

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ আল নোমান (৫), রিফাত হোসেন (১৫) ও মো. ইব্রাহীম (১২) নামে ৩ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মতলব পৌরসভার পূর্ব কলাদি জামে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে এই তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ‘রহস্যজনক’ মনে করছে পুলিশ। আগামীকাল শনিবার হতভাগা এই তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। এমন মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নিহত নোমান পূর্ব কলাদি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জামাল উদ্দিনের ছেলে, রিফাত হোসেন মতলব দক্ষিণের উত্তর নুলুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে এবং মো. ইব্রাহীম একই নাটশাল গ্রামের মৃত কামাল পাটওয়ারীর ছেলে। এর মধ্যে রিফাত ও ইব্রাহীম মতলব দক্ষিণের ভাঙ্গারপাড় মাদ্রাসার ছাত্র। এদের মধ্যে রিফাত জুমার নামাজের আজান দিয়েছিল। যে কক্ষ থেকে তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে পুরোনো একটি আইপিএস ও ব্যাটারি ছিল। যা থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। উপস্থিত কেউ কেউ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ধারণা করছেন, বন্ধ কক্ষে এসিডের উৎকট গন্ধে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ওই তিন শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
ইমাম জামাল উদ্দিন জানান, ৫ বছরের শিশু সন্তান নোমানকে তার কক্ষে রেখে নামাজ পড়াতে যান। নামাজ শেষে তার কক্ষে প্রবেশ করতে গেলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পান। পরে পাশের জানালা দিয়ে দেখেন তার সঙ্গে আরো ২ শিশু অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় দরজা ভেঙে ইমামসহ উপস্থিত মুসল্লিরা অচেতন অবস্থায় ৩ শিশুকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমে নোমান ও রিফাতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন এবং কিছুক্ষণ পরে ইব্রাহীম মারা যায়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি শামীম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক গাজী বলেন, তাদের মসজিদ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা কারো সঙ্গে বিরোধ নেই। তবে কি করে এমন ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে তারাও চিন্তিত। শিশু নোমানের বাবা জসিম উদ্দিন জানান, কীভাবে এমন সর্বনাশ হলো তা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এখনো তার শিশু সন্তানের মৃত্যু নিয়ে কাউকে দায়ী করছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, তিন শিশুর শরীরে কোনো ধরনের আঘাত বা কাঁটাছেড়ার চিহ্ণ নেই। তবে তিনি ধারণা করছেন, কোনোর ধরণের বিষক্রিয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তারা মারা গেছে। মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, তিন শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত ছাড়া আপাতত আর কিছু বলা যাবে না। এই ঘটনায় মসজিদের ইমাম জামাল উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সত্যি রহস্যজনক। কারণ তাদের কারো শরীরে কোনো ধরণের আঘাত কিংবা জখমের চিহৃ নেই। তারপরও ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা রুজু হয়নি। ঘটনার পর থেকে পূর্ব কলাদি জামে মসজিদ এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।