ঢাকা ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪৮ দিন পরে জামিনে মুক্তি পেলেন মিন্নি

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৬:০৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২১১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি ৪৮ দিন পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বরগুনা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

কারা ফটক থেকে বের হয়ে বাবা মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাইঠা এলাকার বাড়ির দিকে রওনা হন আয়শা।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে উচ্চ আদালতের দেওয়া আয়শার জামিন-সংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনায় পৌঁছায়। আয়শার আইনজীবী বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার বিকেলে আয়শা বরগুনা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।

যেভাবে মুক্তি পেলেন আয়শা
আজ সকালে উচ্চ আদালতের দেওয়া আয়শার জামিনসংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনায় পৌঁছায়। আয়শার আইনজীবী বেলা ১টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে আদালতের বিচারক এম জাহিদ হাসান আয়শার জামিন আদেশে সই করেন। এরপর আদালতের বার্তাবাহক দিয়ে তাৎক্ষণিক জামিন আদেশ বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন, ছোট ভাই মো. কাফীসহ আত্মীয়-স্বজনেরা কারা ফটকের সামনে অপেক্ষমান ছিলেন।

বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেনকে কারাগারের অভ্যন্তরে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সাড়ে ৪টার দিকে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে আসেন মোজাম্মেল হোসেন। আয়শা বাবার সঙ্গে কারা ফটক থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন। এ সময় মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আজ খুব খুশি, খুব আনন্দিত’। আয়শার ছোট ভাই মো. কাফী বলেন, ‘অনেকদিন পর আমার বোনকে কাছে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে’।

আয়শাকে জামিন দিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। চেম্বার বিচারপতির এই আদেশের ফলে আয়শাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রয়েছে। এখন আয়শার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা রইল না বলে জানান আয়শার আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

২৯ আগস্ট আয়শার জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, আয়শা তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন। গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর ওই দিন বিকেলে মারা যান রিফাত শরীফ। পরদিন ২৭ জুন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শাকে।

কিন্তু আয়শার শ্বশুর মামলা দায়েরের ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত-এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। সংবাদ সম্মেলনের পরদিন আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তৃতা দেন। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এই মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে পুলিশ ৩ জুলাই গ্রেপ্তার দেখায়।

পুলিশ জানায়, এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ৮ জন এবং সন্দেহভাজন ৭ জন। তাঁরা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আয়শা তাঁর জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য যে আবেদন করেছেন, তা শুনানির অপেক্ষায় আছে।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গত রোববার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্রটি জমা দেন।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

রক্ত ঝরিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই: হাসনাত

৪৮ দিন পরে জামিনে মুক্তি পেলেন মিন্নি

আপডেট সময় : ০৬:০৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন নিউজ ডেস্কঃ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি ৪৮ দিন পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বরগুনা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

কারা ফটক থেকে বের হয়ে বাবা মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাইঠা এলাকার বাড়ির দিকে রওনা হন আয়শা।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে উচ্চ আদালতের দেওয়া আয়শার জামিন-সংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনায় পৌঁছায়। আয়শার আইনজীবী বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার বিকেলে আয়শা বরগুনা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।

যেভাবে মুক্তি পেলেন আয়শা
আজ সকালে উচ্চ আদালতের দেওয়া আয়শার জামিনসংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনায় পৌঁছায়। আয়শার আইনজীবী বেলা ১টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে আদালতের বিচারক এম জাহিদ হাসান আয়শার জামিন আদেশে সই করেন। এরপর আদালতের বার্তাবাহক দিয়ে তাৎক্ষণিক জামিন আদেশ বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন, ছোট ভাই মো. কাফীসহ আত্মীয়-স্বজনেরা কারা ফটকের সামনে অপেক্ষমান ছিলেন।

বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেনকে কারাগারের অভ্যন্তরে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সাড়ে ৪টার দিকে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে আসেন মোজাম্মেল হোসেন। আয়শা বাবার সঙ্গে কারা ফটক থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন। এ সময় মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আজ খুব খুশি, খুব আনন্দিত’। আয়শার ছোট ভাই মো. কাফী বলেন, ‘অনেকদিন পর আমার বোনকে কাছে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে’।

আয়শাকে জামিন দিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। চেম্বার বিচারপতির এই আদেশের ফলে আয়শাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রয়েছে। এখন আয়শার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা রইল না বলে জানান আয়শার আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

২৯ আগস্ট আয়শার জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, আয়শা তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন। গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর ওই দিন বিকেলে মারা যান রিফাত শরীফ। পরদিন ২৭ জুন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শাকে।

কিন্তু আয়শার শ্বশুর মামলা দায়েরের ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত-এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। সংবাদ সম্মেলনের পরদিন আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তৃতা দেন। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এই মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে পুলিশ ৩ জুলাই গ্রেপ্তার দেখায়।

পুলিশ জানায়, এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ৮ জন এবং সন্দেহভাজন ৭ জন। তাঁরা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আয়শা তাঁর জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য যে আবেদন করেছেন, তা শুনানির অপেক্ষায় আছে।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাসহ ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গত রোববার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্রটি জমা দেন।