নিউজ ডেস্ক: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যৌথ আয়োজনে আজ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জননিরাপত্তা বিভাগ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু আইসিটিভিত্তিক ডিজিটাল সেবার প্রদর্শনী ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিরূপণ সভা আয়োজিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি এবং বাংলাদেশ পুলিশের আইজি জনাব ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সম্মানিত সচিব জনাব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।
সভা শেষে মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “জরুরি সেবা ৯৯৯-এর জনবল ১৪২ জন থেকে ৫০০-তে উন্নীত করা হবে। ৯৯৯-কে প্রয়াতিষ্ঠিকিকরনের নীতিমালা প্রণয়নে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়ছে যারা আগামী অক্টোবর মাসের ১ম সপ্তাহের মধ্যে খসাড়া নীতিমালা হস্তান্তর করবে। এ পর্যন্ত যারা ৯৯৯-এ কল দিয়েছেন, তারা সবাই সেবা পেয়েছেন। আজকের সভায় এটুআই কর্তৃক প্রণীত অনলাইন জিডি (সাধারণ ডায়েরি) সিস্টেমটি অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার ও ময়মনসিংহের ২টি থানায় পাইলটিং করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আপাতত হারানো ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত জিডি অনলাইনে করা যাবে। পরবর্তীতে অন্যান্য সেবাও এই সিস্টেমের আওতায় আসবে। তাছাড়া ইনফো সরকার প্রকল্প কর্তৃক আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে ১০০০টি থানায় স্টেবল কানেকশন নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ” তিনি বলেন, “‘নিরাপদ ও আধুনিক শহর’ প্রকল্প করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রথমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও পরবর্তীতে দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে ১৪-১৬ হাজার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বলিত ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে শহরে অপরাধ কমে যাবে।” মাননীয় মন্ত্রী বলেন, “জেলখানায় বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে ‘স্বজন’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং দেশের সব কারাগারে এই কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কর্মসূচি সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন সকল দপ্তরসংস্থার সকল জনবান্ধব সেবাকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তরের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর, এটুআই, আইসিটি বিভাগ এর সহযোগীতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অক্টোবর মাসে ছয় দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজন করবে এবং উক্ত কর্মশালায় সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করবেন।” মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ২টি বিভাগ (জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ) এর সকল সেবাকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হবে।” মাননীয় প্রতিমন্ত্রী দুটি ইন্টিগ্রেডেট সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগের জন্য ৬ দিনব্যাপী “ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ও পরিকল্পনা ল্যাব” শীর্ষক কর্মশালা আয়োজনের নির্দেশনা প্রদান করার জন্য মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে সিস্টেমটির পাইলটিং করে ২০২১ সালের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল সেবাকে ডিজিটাল সেবা হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবাসমূহ অধিকতর জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় সর্বোচ্চ জনমুখী সেবাসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করে ২০২০ সালের মার্চ মাসে (মুজিববর্ষ) জনগণকে উপহার দেয়ার অনুরোধ জানান। এটুআই-এর সহযোগিতায় প্রণীত ‘অনলাইন জিডি’ সিস্টেমটি দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য মাননীয় মন্ত্রীকে তিনি অনুরোধ জানান।
জনগণের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইসিটির ব্যবহার অপরিহার্য উল্লেখ করে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ও আইসিটি বিভাগের কারিগরি সহযোগীতায় ‘সেফ সিটি’ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু উদ্যোগ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি এই সকল উদ্যোগকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশের সকল জেলায় বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব রাখেন। রাস্তায় জনগণের ভোগান্তি নিরসনে প্রচলিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এর পরিবর্তে “সার্ভিস ফ্রেন্ডলি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” সফটওয়্যারটির ডেভেলপমেন্ট ও পাইলটিং দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি টিম গঠন করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
জননিরাপত্তা বিভাগের সকল সেবাকে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করে নাগরিকের সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমিয়ে সর্বাধিক সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে একটি ইন্টিগ্রেডেট সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের পরিকল্পনা তুলে ধরেন এটুআই-এর চীফ স্ট্র্যাটেজিস্ট (ই-গভর্ন্যান্স) জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, ইউএসএইড এবং ইউএনডিপি পরিচালিত এটুআই ও জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ৬ দিনব্যাপী “ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ও পরিকল্পনা ল্যাব” শীর্ষক কর্মশালার বিস্তারিত পরিকল্পনা ও খসড়া বাজেট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৯৯৯ এর প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মোঃ তবারুক উল্লাহ, অতিরিক্ত ডিআইজি (আইসিটি) জনাব মোঃ মুনিবুর রহমান, সিনিয়র এসপি (আইসিটি) জনাব মোঃ ফরহাদ কবির, এটুআই-এর ইনোভেশন ল্যাবের হেড অফ টেকনোলজি জনাব ফারুক আহমেদ জুয়েল, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের সিস্টেম এনালিস্ট জনাব আবু তৈয়ব রোকন ও গণমাধ্যম কর্মীগণ ।