ঢাকা ১২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে তেল ব্যবসায়ী রিয়াজ হত্যায় আটক ২

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১২:৫০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ৮৯৯ বার পড়া হয়েছে

মীর ফাহাদ:বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মরকখোলা পোল এলাকায় তেল ব্যবসায়ী রিয়াজুল হক সরদার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেন’র দিক নির্দেশনায় এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুলে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রিয়াজ হত্যার দেড় মাসের মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পৃথক অভিযানে হত্যাকান্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করেন তারা। আটককৃতরা হলো চাঁদপাশা ইউনিয়নের শ্রীমন্তরায় গ্রামের আঃ হাকিম চৌকিদারের ছেলে রুবেল চৌকিদার (২১) ও রহমতপুরের লোহালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ লিমন (১৮)।

আটককৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত মটর সাইকেল ছিনতাই ও অর্থলোভের কারণেই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ঘাতকরা বলে স্বীকারোক্তি দেন আটককৃতরা। আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ডিসি (নর্থ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাতে কোন এক সময় তেল ব্যবসায়ী রিয়াজকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ৬ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের একটি ডোবা থেকে রিয়াজুল হক সরদার (৩৭) নামের ওই ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধার করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। এ ঘটনায় রিয়াজের স্ত্রী নাজমিন বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তেল ব্যবসায়ী রিয়াজ ঋণগ্রস্ত থাকায় ব্যবসার পাশাপাশি ভাড়ায় মটরসাইকেল চালাতেন।

মামলা দায়েরের পরপরই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল, এসআই এনামূল হক, এএসআই কালাম, এএসআই আউয়াল ও এএসআই জব্বার হত্যার রহস্য এবং আসামীদের গ্রেফতারে নেমে পড়েন। তাদের বিচক্ষণতা, ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেনের দিক নির্দেশনায় সনাতন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে দুইটার দিকে ছিনতাইকারী রুবেলকে চাঁদপাশা গ্রামের ঘটকের চর এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বাকি আসামীদের ধরতে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও ২০ সেপ্টেম্বর রাতে বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ লোহালিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মো: লিমনকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনকারী ও তার স্ত্রীসহ আরো তিন ছিনতাইকারী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ আগস্ট রাত ২ টার দিকে মূল পরিকল্পনাকারীর স্ত্রী ও তার বন্ধু তেল ব্যবসায়ী রিয়াজকে ভাড়া চুক্তিতে বাবুগঞ্জের দিকে নিয়ে যায়। আটককৃত লিমন ও রুবেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এরপর বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের তালতলা এলাকার উঁচাপোল নামক স্থানে গিয়ে প্রথমে রিয়াজকে বেধে ফেলার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তা না পেরে ছিনতাইকারী লিমন রিয়াজকে ধারালো দা দিয়ে কোপ দেয়। এসময় রিয়াজ তা ঠেকাতে গেলে তার হাতে কোপ লাগে। এরপর রিয়াজ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ছিনতাইকারী দলের অপর ৪ জন তাকে ধরে ফেলে।

এ সময় রিয়াজের সাথে ছিনতাইকারীদের ধস্তাাধস্তি হওয়ার এক পর্যায় পাশের ডোবায় পড়ে যায় রিয়াজ ও একজন ছিনতাইকারী এবং সেখানেই শ্বাসরোধ হত্যা করা হয়েছে। তারা আরো জানিয়েছে, নিহত রিয়াজ ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলায় ডোবার মধ্যে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরের দিন ৬ আগস্ট সকালে ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর ছিনতাইকারীরা আত্মগোপনে চলে যায় এবং ৭ আগস্ট আটককৃত লিমন ও মূল পরিকল্পনাকারী রিয়াজের মটর সাইকেলটি বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। হত্যাকান্ডের মিশনে মোট ৫ জন অংশ নিয়েছিল। অপর তিন ছিণতাইকারী এখনো পলাতক রয়েছে। তবে তাদের আটকে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ডিসি মোকতার হোসেন। মামলার স্বার্থে অপর তিন ছিনতাইকারীর নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের উপর মহলে বড় ধরনের রদবদল

বরিশালে তেল ব্যবসায়ী রিয়াজ হত্যায় আটক ২

আপডেট সময় : ১২:৫০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মীর ফাহাদ:বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মরকখোলা পোল এলাকায় তেল ব্যবসায়ী রিয়াজুল হক সরদার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেন’র দিক নির্দেশনায় এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুলে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রিয়াজ হত্যার দেড় মাসের মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পৃথক অভিযানে হত্যাকান্ডে জড়িত দুইজনকে আটক করেন তারা। আটককৃতরা হলো চাঁদপাশা ইউনিয়নের শ্রীমন্তরায় গ্রামের আঃ হাকিম চৌকিদারের ছেলে রুবেল চৌকিদার (২১) ও রহমতপুরের লোহালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ লিমন (১৮)।

আটককৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত মটর সাইকেল ছিনতাই ও অর্থলোভের কারণেই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ঘাতকরা বলে স্বীকারোক্তি দেন আটককৃতরা। আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ডিসি (নর্থ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাতে কোন এক সময় তেল ব্যবসায়ী রিয়াজকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ৬ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের একটি ডোবা থেকে রিয়াজুল হক সরদার (৩৭) নামের ওই ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধার করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। এ ঘটনায় রিয়াজের স্ত্রী নাজমিন বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তেল ব্যবসায়ী রিয়াজ ঋণগ্রস্ত থাকায় ব্যবসার পাশাপাশি ভাড়ায় মটরসাইকেল চালাতেন।

মামলা দায়েরের পরপরই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল, এসআই এনামূল হক, এএসআই কালাম, এএসআই আউয়াল ও এএসআই জব্বার হত্যার রহস্য এবং আসামীদের গ্রেফতারে নেমে পড়েন। তাদের বিচক্ষণতা, ডিসি (নর্থ) মোকতার হোসেনের দিক নির্দেশনায় সনাতন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছিনতাইকারীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে দুইটার দিকে ছিনতাইকারী রুবেলকে চাঁদপাশা গ্রামের ঘটকের চর এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বাকি আসামীদের ধরতে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও ২০ সেপ্টেম্বর রাতে বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ লোহালিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মো: লিমনকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনকারী ও তার স্ত্রীসহ আরো তিন ছিনতাইকারী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ আগস্ট রাত ২ টার দিকে মূল পরিকল্পনাকারীর স্ত্রী ও তার বন্ধু তেল ব্যবসায়ী রিয়াজকে ভাড়া চুক্তিতে বাবুগঞ্জের দিকে নিয়ে যায়। আটককৃত লিমন ও রুবেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এরপর বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের তালতলা এলাকার উঁচাপোল নামক স্থানে গিয়ে প্রথমে রিয়াজকে বেধে ফেলার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তা না পেরে ছিনতাইকারী লিমন রিয়াজকে ধারালো দা দিয়ে কোপ দেয়। এসময় রিয়াজ তা ঠেকাতে গেলে তার হাতে কোপ লাগে। এরপর রিয়াজ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ছিনতাইকারী দলের অপর ৪ জন তাকে ধরে ফেলে।

এ সময় রিয়াজের সাথে ছিনতাইকারীদের ধস্তাাধস্তি হওয়ার এক পর্যায় পাশের ডোবায় পড়ে যায় রিয়াজ ও একজন ছিনতাইকারী এবং সেখানেই শ্বাসরোধ হত্যা করা হয়েছে। তারা আরো জানিয়েছে, নিহত রিয়াজ ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলায় ডোবার মধ্যে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরের দিন ৬ আগস্ট সকালে ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর ছিনতাইকারীরা আত্মগোপনে চলে যায় এবং ৭ আগস্ট আটককৃত লিমন ও মূল পরিকল্পনাকারী রিয়াজের মটর সাইকেলটি বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। হত্যাকান্ডের মিশনে মোট ৫ জন অংশ নিয়েছিল। অপর তিন ছিণতাইকারী এখনো পলাতক রয়েছে। তবে তাদের আটকে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ডিসি মোকতার হোসেন। মামলার স্বার্থে অপর তিন ছিনতাইকারীর নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।