ঢাকা ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশাল নৌ-বন্দরে পন্যের টোল আদায়ের নেই মূল্য তালিকা, ইজারাদারের দৌরাত্মে নাকাল যাত্রী সাধারণ

  • বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ১০:১৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ৪৭৭ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক: বরিশাল নৌ-বন্দরে জনসাধারণের ভোগান্তির আর এক নাম হয়ে উঠেছে একতলা লঞ্চঘাট। প্রতিনিয়ত এ ঘাটে ইজারাদারের লোকজনের হাতে সাধারণ মানুষ হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় কমছে না ভোগান্তি। ওদিকে লঞ্চঘাটে পন্য বহনের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের নির্ধারিত কোন মূল্য তালিকা না থাকায় ইচ্ছেমতো টোল আদায়ের নামে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ চলছে। এ কারনে প্রতিদিনই সদর নৌ-থানায় টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ দিচ্ছেন।

বরিশাল সদর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই লঞ্চে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, লাঞ্ছিত করাসহ নানা রকমের অভিযোগ আসে থানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার টোলআদায়কারীদের ডেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত টাকা আদায়ের জন্য বলা হয়েছে এবং অযথা কাউকে হয়রানি না করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু টোল আদায়কারীরা বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করে থাকে। তখন কিছু বলার থাকে না।

জানা গেছে, একতলা লঞ্চঘাটে নান্নু, মোখলেসুর রহমান বাবু, মিথুন, হিরু, শংকর বাবু, কাশেমসহ আরও ৪-৫জন টোল আদায়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এরা নিজেদের খামখেয়ালি মতো বিভিন্ন পন্যদ্রব্য ও মালামালের টোল নির্ধারন করছে। যাত্রীদের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ব্যাগে ‘পুলিশের মতো’ তল্লাশী চালিয়ে টোলের নামে টাকা আদায় করে। জনসাধারণের নিজহাতে বহনকৃত কোনপ্রকার প্যাকেট, কার্টুন, বক্স আনা-নেয়ার সময় তাদের নিকট থেকেও তারা উচ্চহারে টোল নির্ধারণ করে টাকা আদায় করছে। আর তাদের নির্ধারিত টাকা না দিলেই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, গালাগালি এমনকি শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটছে।

তুহিন নামে এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তিনি কিছুদিন পূর্বে ভোলা থেকে খাওয়ার জন্য ইলিশ মাছ কিনে ককশিটের মধ্যে বরফ দিয়ে নিয়ে আসেন। টার্মিনাল থেকে বের হওয়া মাত্রই টোল আদায়কারীরা ৫০০ টাকা দাবী করে। অন্যথায় ইলিশ মাছ দিবে না বলে জানান। টোলের হার কমানো নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। তুহিন টাকা দিলেও তাকে টোলের রশিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন আদায়কারীরা। শেষে ২০০ টাকায় বিষয়টি রফাদফা হয়।

বৃদ্ধ মোশারেফ ৬০পিস ডিম হাতে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবু-মিথুন তার কাছ থেকে ২০ টাকা টোল আদায় করেন। নিজ ঘরের ইলেকট্রিক কাজের জন্য বৈদ্যুতিক তার ও কিছু ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম হাতব্যাগে নিয়ে যাওয়ার সময় অপর যাত্রী মামুনের কাছ থেকেও ১২০ টাকা আদায় করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কনস্টেবল তার অফিসিয়াল কিছু ফাইলপত্র, ডায়েরী ও সরঞ্জাম নিয়ে আসলে তার কাছেও টোলের চার্জ হিসেবে ৬০০ টাকা ধার্য্য করে। সে টাকা দিবে কিন্তু তাকে টাকার রিসিভ দিতে হবে বলে জানায়। টোল আদায়কারীরা টোলের রশিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে নৌ-থানায় অভিযোগ দিলে নৌ-থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে তাকে যেতে দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানাগেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন পন্য দ্রব্যের টোল ৩৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পন্যদ্রব্য লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাক্তিগত ব্যবহৃত পন্যদ্রব্য ও মালামালের উপর কোন টোল আদায় করা যাবে না। যদি কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মালামাল নিজে বহন না করে লেবারের সাহায্যে আনা-নেয়া করে তবে তাকে লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ১২০ টাকা হারে চার্জ দিতে হবে। কিন্তু মালামালের জন্য তাকে কোন প্রকার চার্জ দিতে হবে না।
পন্যদ্রব্যের ওপর অর্পিত এই চার্জ শুধু বানিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু টোলআদায়কারীরা বিআইডব্লিউটি’র এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের খামখেয়ালী মত টোল আদায়ের নামে নৈরাজ্য করছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু জানায়, ব্যাক্তিগত ব্যবহৃত পন্যদ্রব্য ও মালামালের উপর কোন প্রকার চার্জ ধার্য্য করা যাবে না। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি নিজ হাতে কোনকিছু বহন করে নিয়ে যায় তারও কোন চার্জ ধার্য্য হবে না। এ ব্যাপারে ইজারাদারের সাথে আলোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, খুব শীঘ্রই নৌ-টার্মিনালে প্রকাশ্যে টোল আদায়ের মূল্যতালিকা দেয়া হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিরোজপুরে বাস অটো মুখোমুখি সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে খোঁজ খবর নেন জামাতে ইসলামির নেতৃবৃন্দ।

বরিশাল নৌ-বন্দরে পন্যের টোল আদায়ের নেই মূল্য তালিকা, ইজারাদারের দৌরাত্মে নাকাল যাত্রী সাধারণ

আপডেট সময় : ১০:১৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিউজ ডেস্ক: বরিশাল নৌ-বন্দরে জনসাধারণের ভোগান্তির আর এক নাম হয়ে উঠেছে একতলা লঞ্চঘাট। প্রতিনিয়ত এ ঘাটে ইজারাদারের লোকজনের হাতে সাধারণ মানুষ হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় কমছে না ভোগান্তি। ওদিকে লঞ্চঘাটে পন্য বহনের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের নির্ধারিত কোন মূল্য তালিকা না থাকায় ইচ্ছেমতো টোল আদায়ের নামে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ চলছে। এ কারনে প্রতিদিনই সদর নৌ-থানায় টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ দিচ্ছেন।

বরিশাল সদর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই লঞ্চে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, লাঞ্ছিত করাসহ নানা রকমের অভিযোগ আসে থানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার টোলআদায়কারীদের ডেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্ধারিত টাকা আদায়ের জন্য বলা হয়েছে এবং অযথা কাউকে হয়রানি না করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু টোল আদায়কারীরা বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে হয়রানি করে থাকে। তখন কিছু বলার থাকে না।

জানা গেছে, একতলা লঞ্চঘাটে নান্নু, মোখলেসুর রহমান বাবু, মিথুন, হিরু, শংকর বাবু, কাশেমসহ আরও ৪-৫জন টোল আদায়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এরা নিজেদের খামখেয়ালি মতো বিভিন্ন পন্যদ্রব্য ও মালামালের টোল নির্ধারন করছে। যাত্রীদের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ব্যাগে ‘পুলিশের মতো’ তল্লাশী চালিয়ে টোলের নামে টাকা আদায় করে। জনসাধারণের নিজহাতে বহনকৃত কোনপ্রকার প্যাকেট, কার্টুন, বক্স আনা-নেয়ার সময় তাদের নিকট থেকেও তারা উচ্চহারে টোল নির্ধারণ করে টাকা আদায় করছে। আর তাদের নির্ধারিত টাকা না দিলেই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, গালাগালি এমনকি শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটছে।

তুহিন নামে এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তিনি কিছুদিন পূর্বে ভোলা থেকে খাওয়ার জন্য ইলিশ মাছ কিনে ককশিটের মধ্যে বরফ দিয়ে নিয়ে আসেন। টার্মিনাল থেকে বের হওয়া মাত্রই টোল আদায়কারীরা ৫০০ টাকা দাবী করে। অন্যথায় ইলিশ মাছ দিবে না বলে জানান। টোলের হার কমানো নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। তুহিন টাকা দিলেও তাকে টোলের রশিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন আদায়কারীরা। শেষে ২০০ টাকায় বিষয়টি রফাদফা হয়।

বৃদ্ধ মোশারেফ ৬০পিস ডিম হাতে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবু-মিথুন তার কাছ থেকে ২০ টাকা টোল আদায় করেন। নিজ ঘরের ইলেকট্রিক কাজের জন্য বৈদ্যুতিক তার ও কিছু ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম হাতব্যাগে নিয়ে যাওয়ার সময় অপর যাত্রী মামুনের কাছ থেকেও ১২০ টাকা আদায় করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর এক পুলিশ কনস্টেবল তার অফিসিয়াল কিছু ফাইলপত্র, ডায়েরী ও সরঞ্জাম নিয়ে আসলে তার কাছেও টোলের চার্জ হিসেবে ৬০০ টাকা ধার্য্য করে। সে টাকা দিবে কিন্তু তাকে টাকার রিসিভ দিতে হবে বলে জানায়। টোল আদায়কারীরা টোলের রশিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে নৌ-থানায় অভিযোগ দিলে নৌ-থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে তাকে যেতে দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানাগেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন পন্য দ্রব্যের টোল ৩৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পন্যদ্রব্য লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাক্তিগত ব্যবহৃত পন্যদ্রব্য ও মালামালের উপর কোন টোল আদায় করা যাবে না। যদি কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মালামাল নিজে বহন না করে লেবারের সাহায্যে আনা-নেয়া করে তবে তাকে লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ১২০ টাকা হারে চার্জ দিতে হবে। কিন্তু মালামালের জন্য তাকে কোন প্রকার চার্জ দিতে হবে না।
পন্যদ্রব্যের ওপর অর্পিত এই চার্জ শুধু বানিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু টোলআদায়কারীরা বিআইডব্লিউটি’র এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের খামখেয়ালী মত টোল আদায়ের নামে নৈরাজ্য করছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু জানায়, ব্যাক্তিগত ব্যবহৃত পন্যদ্রব্য ও মালামালের উপর কোন প্রকার চার্জ ধার্য্য করা যাবে না। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি নিজ হাতে কোনকিছু বহন করে নিয়ে যায় তারও কোন চার্জ ধার্য্য হবে না। এ ব্যাপারে ইজারাদারের সাথে আলোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, খুব শীঘ্রই নৌ-টার্মিনালে প্রকাশ্যে টোল আদায়ের মূল্যতালিকা দেয়া হবে।