অনলাইন নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বুয়েট প্রশাসন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে বুয়েট বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সদস্যসচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
আজীবন বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন—অমিত সাহা, মেহেদী হাসান রবিন, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রাসেল, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মাজেদুর রহমান, মো. মুজাহিদুর রহমান, এহতেশামুল রাব্বী, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. আকাশ, শামীম বিল্লাহ, নাজমুস সাদাত, অমর্ত্য ইসলাম, মো. মোর্শেদ মণ্ডল, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, মুজতবা রাফিদ, আশিকুল ইসলাম, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না এবং এস এম মাহমুদ। আর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন—নওশাদ সাকিব, সাইফুল ইসলাম, মো. গালিব, শাওন মিয়া, ইকবাল অভি ও মো. ইসমাইল।
উল্লেখ্য, আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। চলতি বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরে তিনি নিহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি নিয়ে আন্দোলনের জেরে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে অচল বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বহিষ্কার ও ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া তিনটি দাবির মধ্যে একটি পূরণ হলেও বাকি দুইটি পূরণের অপেক্ষায় দিন পার করছে তারা।
বুয়েট থেকে দেওয়া ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজীবন বহিষ্কার করা ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জনই পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আরো ছয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে তিন সপ্তাহ সময় চেয়ে নেয়। তবে শিক্ষার্থীদের তিন দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে নারাজ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া তিনটি দাবি হলো—আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা, যা এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। অন্য দুটি দাবি হলো—বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে এর আগে ঘটে যাওয়া র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি এবং সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রথম দাবিটি পূরণ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় দাবিটি পূরণ হলে তারা আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ মেনে নেবেন। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত সাত দিন আগে তৃতীয় দাবিটি পূরণ হলে পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
বুয়েট থেকে ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নিহত আবরার ফাহাদের পরিবার। আবরারের মা রোকেয়া খাতুন গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেরিতে হলেও বুয়েট প্রশাসন ওদের ছাত্রত্ব চিরতরে বাতিল করেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। একারণে বুয়েট প্রশাসন, পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, এখন একটাই দাবি হত্যা মামলার রায় যেন দ্রুত দেওয়া হয় এবং সেটা কার্যকর করা হয়। আবরারের ছোটো ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, এখন দাবি একটাই, দ্রুত যেন বিচার শেষ হয়। আর আসামিরা যেন রায়ের আগে জামিন না পায়।