শাহারিয়া ইমন রুবেল: নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় চলছে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বদলে ইন্টার্নী, সরকারী ওষুধ বিতরণে অনিয়ম, সময় মত হাসপাতালে না এসে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখা, চিকিৎসকদের নিজস্ব ক্লিনিকের দালাল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এবার এক জন এমবিবিএস মহিলা চিকিৎসকের পরিবর্তে আরেকজন পুরুষ ম্যাটসের ডিপ্লোমা চিকিৎসক এসে রোগী দেখছেন এবং রোগীদের রীতিমত ব্যবস্থাপত্র লিখে নিজে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন এমনই বাস্তব চিত্র দেখা গেছে হাসপাতালের বহির্বিভাগে।
এ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ৮নং মহিলা মেডিসিনে বেশকিছু দিন ধরেই রোগী দেখছেন ম্যাটসের ডিপ্লোমা চিকিৎসক আতাউল হক। এমন অভিযোগের সত্যাতা যাচাই করতে গতকাল সরজমিনে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের ৮নং মহিলা মেডিসিন রুমে ডাক্তার রুমানা আক্তার রুমার টেবিলে বসে মহিলা রোগী দেখছেন একজন পুরুষ চিকিৎসক। সাংবাদিক দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন। জানাগেল, তিনি ডিপ্লোমা চিকিৎসক আতাউল হক।
আউটডোরের টিকিট কেটে রোগীরা এমবিবিএস ডাক্তার দেখাতে এসেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে এসে রিতিমত প্রতারিত হচ্ছেন তারা। ডাক্তার ছুটিতে আছেন জানেন না দূর দূরান্ত থেকে আসা চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগীরা। সেই ডাক্তারের চেয়ারে বসে আতাউল হক বীরদর্পে রোগী দেখছেন এমনকি সরকারি ব্যবস্থাপত্রে স্বাক্ষর করছেন এবং ঔষুধ লিখে চলেছেন। অথচ এবিষয়ে জানেন না আবাসিক মেডিকেল অফিসার নিজেও।
খোজ নিয়ে জানা যায়, আতাউল হক কুষ্টিয়া একটি বেসরকারি ম্যাটস থেকে ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। সরকারী হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে এমবিবিএস পরিচয়ে রোগী দেখেন এমন অভিযোগও রয়েছে। যার সত্যতা মিলল সরকারী হাসপালে এমবিবিএস ডাক্তারের চেয়ারে বসে রোগী দেখার বাস্তব চিত্র দেখে।
সূত্রে জানা যায়,কুষ্টিয়াসহ এর আশপাশ এলাকার হাজার হাজার রোগী বিভিন্ন সময় উন্নত চিকিৎসার নিতে ছুটে আসেন কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। দীর্ঘ ভোগান্তির পরেও তারা ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু আচায্য জনক হলো অপেক্ষার ফসল হিসেবে প্রতারিত হয়ে ফিরে যেতে হয় রোগীদের।
সূত্র আরো জানান, ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে এরা রোগীদের ব্যবস্থপত্রে কি লিখেছেন সেটা বুঝিয়ে দেয়া এদের কাজ। কিন্তু তা না করে রীতিমত ডাক্তার সেজে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন।
এদিকে এই আতাউল হক প্রতি মাসে ঔষধ প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে ডায়াগনস্টিক মালিকদের নিকট থেকে কমিশন নেন বলেও জানা যায়।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এরা ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। ডাক্তার ছাড়া কোন ভাবেই তারা রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র করতে পারবে না। যদি রোগীর ব্যবস্থাপত্রে স্বাক্ষর করে তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আতাউল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি পিডিটি করছি। আজ ডাঃ রুমানা আক্তার রুমা ছুটিতে রয়েছেন। আমাকে তিনি রোগী দেখার অনুমতি দিয়েছেন। তাই আমি রোগী দেখছি। পরে তিনি হাসপাতালের ডাক্তার মুসা কবিরকে ফোনে ডেকে আনেন। তিনি বলেন আমি আতাউল কে রোগী দেখার জন্য বলেছি। রোগী চাপ বেশি তাই আতাউল রোগী দেখছেন।
এ বিষয়ে জানতে ডাক্তার রুমানা আক্তার রুমার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার নুরুন্নাহার বেগম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনভাবেই ডাক্তার ছাড়া ডিপ্লোমার কেউ ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না। নিউজ করার দরকার নেই বলে তিনি বলেন, নিউজ হলে মানুষের হাসপাতাল সম্পর্কে নেগেটিভ ধারনা আসে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রয়েছে। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ২ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। কাল হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন রওশন আরা বেগমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনভাবেই ম্যাটস থেকে ডিপ্লোমা করে হাসপাতালে বসে ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারে না। এ বিষয়ে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা কারন কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে।